দেশ লাইনে আনতে, দেশের ১৬ কোটিকেই এক সাথে ভালো হতে হবে না

ফেসবুকীয় লেখা June 3, 2016 1,443
দেশ লাইনে আনতে, দেশের ১৬ কোটিকেই এক সাথে ভালো হতে হবে না

বারিধারা ঢুকতে যাবো, এমন সময় দেখলাম এক এম্বাসেডর (দেশের নাম বলছি না) রাস্তার রং সাইড দিয়ে পোঁ পোঁ করে আসছে


আমার গাড়ির সামনে এসে তার গাড়ি আঁটকে গেল


তার পিছের গাড়িতে থাকা প্রটোকলের লোকজন গাড়ি থেকে হন্তদন্ত হয়ে নেমে আমার গাড়ির কাছে এসে বলল, ‘পিছান পিছান’


আমি বললাম, “আপনারা পিছান”


সে অবাক হয়ে আমার জানালার কাছে ঝুঁকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি বললেন?’


আমি বললাম, “আপনারা পিছান... আমি পিছাবো না... এফবিআই ইন্টারপোল কারে ডাকবেন ডাকেন... আমি আমার গাড়ি পিছাবো না”


বলেই স্টার্ট বন্ধ করে বসে রইলাম


দুই গাড়ি সামনাসামনি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি


একটু পরে এম্বাসেডর সাহেবের গাড়ির সামনের সিটে বসা স্যুট পরা পিএ নেমে এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘May I know your problem gentleman?’


একটুও রাগ না দেখিয়ে সুন্দর ভাবেই বললাম; “Never had I known before that being a gentleman is, infact a problem .... Duly obeying the law of the land, surely I don't have any problem.... but to my eyes, YOU are the problem”


উনি যেয়ে এম্বাসেডর সাহেবকে বললেন ব্যাপারটা... তার গাড়ি পিছানো হলো


এখন রং সাইড থেকে যে রাইট সাইডের লেনে ঢুকবে, অন্য কোনও গাড়ি তাকে সাইড দিচ্ছে না


দিবেই বা কেন


শেষমেশ উনি ব্যাক গিয়ারে পুরো রাস্তাটা গেলেন


... কোনদিন ভাবিনি আমাদের দেশের এক বিদেশী মেহমানের সাথে আমি এভাবে আচরন করব


করতামও না


প্রথম দিন দেখলাম... আমরা সবাই রাস্তা ছেড়ে দিলাম


দ্বিতীয় দিন দেখলাম... আমরা সবাই রাস্তা ছেড়ে দিলাম


এভাবে দিনের পর দিন দেখতে দেখতে, একদিন এসে ধরা হলো


ধরা হলো কারণ, এই জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার কূটনীতিবিদ ভেবেই নিয়েছিলেন যে দেশের গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড থাকলে বুঝি এভাবেই যেতে হয় রাস্তা দিয়ে


... কয়েকদিন আগে একটা বেসরকারি চ্যানেলে দেখলাম, একজন সাংবাদিক রাস্তার উল্টা সাইডে দাঁড়িয়ে শুধু গুনছে কয়টা পতাকা স্ট্যান্ডবাহী গাড়ি রাস্তার রং সাইড দিয়ে যায়


গুনতে গুনতে তিনি টায়ার্ড


একটু পর একটা একটা করে তিনি গাড়ির সামনে গেলেন


গ্লাস নামাতে বলে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কেন রং সাইড দিয়ে যাচ্ছেন?”


সবাই আমতা আমতা করে বললেন, ‘আমি অমুক সচিব... বা আমি অমুক মন্ত্রণালয়য়ের লোক... কোনদিন এমনে যাই না... আজকেই যাচ্ছি’


মনের ভিতরে দুর্বলতা থাকলে যা হয় আরকি... এমনকি এক মন্ত্রীকে যখন থামানো হলেন, তিনিও আমতা আমতা করলেন... ক্যামেরার সামনেই ড্রাইভারকে ধমক দিলেন; “এই তুমি রং সাইডে আইলা কখন?”


তার পরের দিন সেই ক্যামেরাম্যান আবার দাঁড়িয়ে রইলেন রাস্তায়


অবাক হওয়ার মতো বিষয়, একটা গাড়িও রং সাইড দিয়ে আসল না


... আমাদের শুধু দরকার একটা এক্সাম্পল ক্রিয়েট করা


যেটা, সেই রাস্তায় সেই সাংবাদিক করেছেন


কাল যদি পত্রিকায় আসে যে অমুক মন্ত্রণালয়য়ের এক কর্মকর্তা ঘুষ চাইতে গিয়ে থাপ্পড় খেয়েছেন


ট্রাস্ট মি, সেদিনের পর থেকে বাংলাদেশের কোনও ঘুসখোর, ঘুষ চাইবার আগে মনেমনে একবার অন্তত ভাববে, “এ আবার থাব্রা দিবো না তো?”


... একটা ইভ টিজারকে ধরে নগদে পিটিয়ে মেরে ফেলা হোক, কালকে থেকে মানুষ কমেন্ট পাস করার আগে ২ বার ভাববে


বনানী ১১ নম্বরের ব্রিজের উপর দিয়ে প্রচুর রিকশা রং সাইডে চলে ... একদিন কেউ হাতে থাকা মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে, এরকম একটা রিকশার আরোহীদের ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দেক না


বিশ্বাস রাখেন, এর পরের দিন থেকে কোনও আরোহী রিকশাওয়ালাকে বলবে না, ‘রং সাইড দিয়ে যা তো’


... দেশ লাইনে আনতে, দেশের ১৬ কোটিকেই এক সাথে ভালো হতে হবে না


১৬টা লোক বের হয়ে আসুক... দেখি কেমনে লাইনে না আসে


আফসোস, আমরা এই ১৬জন লোকই পাচ্ছি না


কাকে আশা করছি, যে এসে এক্সাম্পল ক্রিয়েট করে দিয়ে যাবে?


কার জন্য অপেক্ষা করছি !!


সুপারম্যান? ব্যাটম্যান?... স্পাইডারম্যান?


নিজের উপর আস্থা রাখা, আপনি জেন্টেলম্যান্টাই কি যথেষ্ট না?


লেখা: Arif R Hossain