মাহে রমজান আমাদের যে শিক্ষা দেয়

ইসলামিক শিক্ষা June 2, 2016 1,304
মাহে রমজান আমাদের যে শিক্ষা দেয়

মহান আল্লাহ্তাআলা সূরা ২:১৮৫নং আয়াতে বলেছেন, “রমজানের মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী এক নির্ভুল মানদন্ড। অতএব তোমাদের মধ্যে যারাই এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে তারা যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করবে।”





রোজারাখা ফরজ:-


সালমান ফারিসী (রাঃ) বলেছেন, “রসূলুল্লাহ (সঃ) শা‘বানের শেষ দিন আমাদের উদ্দ্যেশ্যে খুত্বা (বক্তৃতা) দিলেন। তিনিবললেন, ‘হে লোকসকল! তোমাদের কাছে এক সুমহান মাস সমুপস্থিত। এটি একটি অতীব বরকতময় মাস, যে মাসে একটি রাতরয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।এ মাসে রোজা রাখাকে আল্লাহ্ তোমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন এবং রাত্রি কালীননামাজকে নফল করেছেন। যে এ মাসে একটি নফল কাজ করল সে মূলতঃ অন্যমাসে একটি ফরজের সমান আমল করল, আর যে এমাসে একটি ফরজ কাজ করল সে মূলতঃ অন্য মাসে ৭০টি ফরজের সমান কাজ করল। এটি হচ্ছে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়ার মাস;আর এ মাসে ঈমানদারদের রিজ্ক বাড়িয়ে দেয়া হয়।



রোজাদারকে ইফতার :-


যে কেউ কোন কিছু দিয়ে ইফতার করাবে তা তার জন্য মাগফিরাতের কারন হবে এবং দোযখ থেকে বাঁচার উপায় হবে; আর ঐ ব্যক্তি রোজাদারের সমান সওয়াব লাভ করবে যদিওরোজাদারের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা’।” (বর্ণণাকারী বলেন) আমরা বললাম, “হে আল্লাহ্র রসূল (সঃ)! আমাদের অনেকেরইরোজাদারকে কোন কিছু দিয়ে ইফতার করানোর সাধ্য নেই।” তিনি (সঃ) বললেন, “আল্লাহ্ তাদেরকে এই পুরস্কার দেবেন যারা পানিমিশ্রিত একটু দুধ, একটি খেজুর অথবা শুধু পানি দিয়ে রোজাদারকে ইফতার করাবে। আর যে রোজাদারকে পূর্ণ তৃপ্তি সহকারে আহারকরাবে আল্লাহ্ তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) থেকে পানি পান করাবেন যা জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত তার থেকে তৃষ্ণা দূর করে দেবে।



এমন একটি মাস যার প্রথম হলো রহমত, মধ্যমাংশ হলো মাগফিরাত এবং শেষাংশহলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির:-


এ মাসে যে কেউ তার গোলামের কাজকে সহজ করে দেবে আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।” (তিরমিজী এবং বায়হাকী)প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা, আসুন উপরোক্ত কুরআনের আয়াত এবং হাদীসের আলোকে আমরা আমাদের রমজানের জীবন পর্যালোচনা করি।রমজান কুরআন নাযিলের মাস- কুরআনের উৎসবের মাস; এ মাসে কুরআনের পূর্ববর্তী নাযিলকৃত সমস্ত অংশ রসূল (সঃ)জিবরীল (আঃ) কে পড়ে শোনাতেন। আমরা কি এ মাসে পুরো কুরআন পড়ার পরিকল্পনা গ্রহন করেছি? কুরআনের শিক্ষা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়নের কি কি পদক্ষেপ আমরা এ মাসে নিয়েছি?



রমজান বরকতের মাস:-


নফল কাজগুলোর জন্য ফরজের সমান বরকতের ওয়াদা করা হয়েছে এ মাসে; আর প্রতিটিফরজের জন্য এর সত্তর (৭০) গুন সওআব। কতটুকু নফল ইবাদাত করার পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি? ফরজগুলোকে যথার্থআন্তরিকতা সহকারে আদায়ের কতটুকু উদ্যোগ আমাদের রয়েছে?রমজানে শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু আমরা কি নিজেদেরকে শয়তানী প্ররোচনা থেকে মুক্ত করতে পেরেছি?এই রমজানেও কি আমরা শয়তানী কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হইনা?



রমজান সংযমের মাস:-


আমরা কি আমাদের প্রাত্যহিক প্রয়োজন পূরনের ক্ষেত্রে সংযম অবলম্বন করতে পেরেছি?প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় এবং ভোগ-বিলাসের ইচ্ছা কি আমরা দমন করতে পেরেছি?রমজান সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও অংশীদারীত্বের মাস। আমরা কি এ বিষয়গুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি? আমরা কি আমাদের চারপাশের বঞ্চিত বনি-আদমের কথা ভেবেছি? তাদের জন্য কিছু করার (সাধ্যে থাকলে) পরিকল্পনা কি আমাদের মাথায় এসেছে? অভাবী, ক্ষুধার্ত এবং দরিদ্র অনেক আত্মীয়-স্বজন যাঁরা আমাদের রয়েছেন তাঁদেরকে কি আমাদের সম্পদে অংশীদারীত্বের কথা আমরা ভেবেছি? দুনিয়াব্যাপী আমাদের যে অসংখ্য মুসলিম ভাই-বোন বিপদক্লিষ্ট জীবন যাপন করছেন, সেহরী এবং ইফতারের জন্য যাদের কোন খাবার হয়তো জুটবেনা, শান্তিতে রাত জেগে নফল ইবাদত করার মতো নিরাপত্তা যাদের নেই, তাদের জন্য সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানানোর কার্যকর কোন পন্থার কথা কি আমরা ভেবেছি?

রমজান অহেতুক এবং বাজেকাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষার মাস:-


আমরা কি অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কাজে সময় ব্যয় করা ছাড়তে পেরেছি? অথবা আমরা কি এ সমস্ত অর্থহীন কাজ কারবার থেকে বিরত থাকার জন্য কোন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করেছি?রমজান মাস মিথ্যা-ফাসেকী ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকার মাস। আমরা কি মিথ্যা বলা ছাড়তে পেরেছি? ফাসেকী আমল ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য কোন সত্যিকার ন্যায়ানুগ পন্থা অনুসরণের পরিকল্পনা কি আমরা করেছি?

রমজান মাস অশ্লীলতা বিমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির মাস:-


অশীলতা থেকে কতটুকু দূরে আমরা সরতে পেরেছি?আমরা কি রমজানের দিনে এবং রাতে টেলিভিশনের পর্দা থেকে আমাদের চোখ সরাতে পেরেছি? কুরআন, হাদীস ও বিভিনড়ব ইসলামী বই পুস্ত-ক পড়া, যা আমাদের আত্মোনড়বয়নের চাবিকাঠি তা বাদ দিয়ে এখনো কি আমরা টেলিভিশন-ভিডিও তে বাংলা, ইংরেজী এবং হিন্দুস্তানী সিনেমা-নাটক দেখতে মগড়ব নই? আমাদের ক্যাসেট ও সিডি পে−য়ার খনও কি ঐ সমস্ত গান বাজেনা যা অশীলতা মুক্ত নয়?

.

রমজান আমাদের কাছে আসে আমাদেরকে তাকওয়া অর্জন করাতে ও সাহায্য করতে।:-


আমাদের জীবনতো রমজানের কারনে ভরে উঠা উচিত মুত্তাকীদের গুনাবলীতে। কত রমজান হয়তো আমরা পার করে দিয়েছি। কিন্তু তাকওয়া কি সত্যিই আমরা অর্জন করেছি? বছরের প্রতিটি মাসইতো আমরা হেলা-ফেলায় কাটিয়ে দিই। আসুননা এই রমজানের মাসকে তার পরিপূর্ন গুরুত্ব সহকারে পালন করি, যাতে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। আমাদের রমজানের দিনগুলো যদি বছরের অন্যদিনগুলো থেকে ভিনড়বতর না হয় তবে আমরা সুস্পষ্ট ক্ষতিতে নিমজ্জিত হব।একটা হাদীসের অংশ বিশেষের মানে হলো “যে রমজান মাস পেলো এবং তার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারলোনা সে ধ্বংস হোক।” আমাদেরকে তো এ মাসের প্রতিটি মুহুর্তের সদ্ব্যবহার করতে হবে যাতে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি, যা আমাদেরকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করতে সাহায্য করবে।টিভি-সিনেমা দেখে, গান শুনে এবং হালকা গল্পগুজবে সময় ব্যয় না করে আমাদেরকে গঠনমূলক কাজে সময় ব্যয় করতে হবে।



বেশী বেশী কুরআন তিলাওয়াত:-


মুখস্ত করন এবং জিকিরে সময় ব্যয় করতে আমাদের এ মাসে।আমাদের নামাজে এবং অন্যান্য ইবাদতে আরো অনেক বেশী আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সাথে সাথে অভ্যস্ত হতে হবে আত্মবিচারে। “রসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান এবং নিষ্ঠা ও আত্মবিচার (ইহ্তিসাব) সহকারে রমজানের রোজা পালন করেন আল্লাহ্ তাঁর পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (বুখারী-মুসলিম)। তাই প্রত্যেকটি ইবাদতেই আমাদের নিষ্ঠার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

আমাদের রমজানের রোজা এবং নামাজগুলো :-


যেন আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়, যেন না হয় কোন প্রাগত অভ্যাসের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আমাদের নামাজ এবং রোজা যেন হয় আল্লাহ্ প্রেমের সচেতন বহিঃপ্রকাশ। আমাদের রোজা যেন হয় সে রোজা যে সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্ বলেছেন,“বনি আদমের প্রতিটি আমল তার নিজের জন্য, শুধু রোজা ছাড়া। রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিব।” (বুখারী-মুসলিম)।