ঘুরে আসুন বগুড়ার মহাস্থানগড়

দেখা হয় নাই June 1, 2016 2,005
ঘুরে আসুন বগুড়ার মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিমি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।


সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল, যার বিরোধ লেগে থাকতো তার ভাই নীলের সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকিরবেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখির (র.) যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।


মহাস্থান গড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বহু লোক আসেন। এখানকার দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার টাকা যা মাজার মসজিদের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয়।


মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছু পশ্চিমে হজরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখির (র.) মাজার শরীফ অবস্থিত। কথিত আছে, মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। কথিত আছে, হজরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানি দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।


গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে 'শীলাদেবীর ঘাট'। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে। এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুণ্ড নামে একটি বড় কূপ আছে। এই কূপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেতো।


মহাস্থানগড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে। যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।


বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা থেকে বা যে কোন স্থান থেকে এক দিনে বগুড়া পৌঁছানো যায়। বগুড়াতে থাকার জন্য পর্যটন মোটেল আছে। সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বগুড়া শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। খাবার হোটেলও আছে বেশ কটি। বগুড়া শহরের কেন্দ্রে আকবরিয়া হোটেলের খাবারের মান যথেষ্ট উন্নত। আকবরিয়া হোটেলে খাকারও ব্যবস্থা আছে।