পরীক্ষাগারে জন্ম হলো হীরার প্রতিদ্বন্দ্বীর!

নতুন প্রযুক্তি May 31, 2016 1,081
পরীক্ষাগারে জন্ম হলো হীরার প্রতিদ্বন্দ্বীর!

আলকেমির কথা অনেকেই জানেন। বিজ্ঞানীরা বহু বছর আগে রসায়নশাস্ত্রের এক অসাধ্য সাধনের চিন্তা করেন।


বিষয়টা ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। তারা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সুলভ ও কমদামি মৌল সীসাকে মূল্যবান স্বর্ণে রূপান্তরের চেষ্টা করেন। যদিও তাদের সাফল্য আসেনি, কিন্তু বিজ্ঞানওতো থেমে থাকেনি।


বিজ্ঞানের যাত্রায় অসম্ভব বলে যে কিছুই নেই, সেটা আরও একবার প্রমাণিত হলো। অবশেষে গবেষণাগারে অনেক পরীক্ষণের পর, বিজ্ঞানীরা রসায়নবিদ্যার সবচেয়ে বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটিয়েছেন। তারা কার্বনকে হীরার সদৃশ একটি বস্তুতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন।


এই পরিবর্তিত পদার্থের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চিকিৎসাবিদ্যা ও শিল্পকারখানার জন্য অনেক দরকারি।


বিশেষ করে ফেরোচৌম্বকত্ব, ঔজ্জ্বল্য ও তড়িৎ পরিবাহী ধর্মের কারণে চিকিৎসক ও শিল্পপতিদের কাছে

কিউ কার্বন অনেক মূল্যবান হবে।


এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা পরীক্ষাগারে কার্বনের অণুর ওপর উচ্চমাত্রার লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করেন।


এর ফলে কার্বনের অণুগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চকচকে ও উজ্জ্বল বস্তুতে রূপান্তরিত হয়। তারা এর নাম দিয়েছেন ‘কিউ কার্বন’। একে বহুরূপী মৌল কার্বনের নতুন আরেকটি রূপ বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।


এতদিন জানা ছিল- পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত পদার্থ হীরা। কিন্তু কিউ কার্বন নাকি হীরার চেয়েও নাকি ৬০ গুণ বেশি শক্ত ও উজ্জ্বল। কারণ তাদের ধারণা, এদের অণুতে কার্বনের পরমাণুগুলো হীরার চেয়েও শক্তভাবে আবদ্ধ থাকে।


বিজ্ঞানীরা এই নতুন পদার্থ তৈরিতে এক বিশেষ ধরনের লেজার রশ্মি ব্যবহার করেছেন। এই রশ্মি অনিয়তাকার (সুনির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি বিহীন) কার্বনের একটি পাতলা পাতের তাপমাত্রা ২০০ ন্যানোসেকেন্ডের (১ ন্যানোসেকেন্ড= ১ সেকেন্ডের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ) ব্যবধানে ৬৪৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উন্নীত করতে পারে।


লেজার ব্যবহারের ফলে কার্বনের অণুসমূহ খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয়, ফলে পাত গলে যায়।


এরপর একে দ্রুততার সাথে শীতল করলে কার্বন অণু দ্বারা সুসজ্জিত এক ধরনের তরল স্ফটিক পাওয়া যায়। এই পরীক্ষণে কার্বনের পরমাণুগুলোর শক্তিস্তর ও শীতলীকরণের সময়ের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হয়। কারণ এদের সামান্য বিচ্যুতির কারণে কার্বন ক্ষুদ্র হীরকখণ্ড নতুবা কিউ কার্বনের কেলাস গঠন করে। পুরো প্রক্রিয়াটিও বেশ দ্রুত গতির। স্ফটিক থেকে এক ক্যারেট কিউ কার্বন তৈরিতে গবেষকদের লেগেছে মাত্র ১৫ মিনিট। যা সত্যিই অভাবনীয়।


এতদিন কার্বনের কঠিন রূপ হিসেবে গ্রাফাইট ও হীরক ছিল সুপরিচিত। কিউ কার্বন আবিষ্কারের ফলে কার্বনের আরেকটি নতুন কঠিন অবস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটলো। আর আবিষ্কারের সাথে সাথেই সে তার নিজ ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছে, ভাগ বসিয়েছে হীরার রাজত্বে। কিউ কার্বনই কি তবে ভবিষ্যতে হীরার জায়গা দখল করে নেবে কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে।