অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা

দেখা হয় নাই May 30, 2016 1,106
অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা

একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটার মত জায়গা এদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে সাগরকন্যা খ্যাত অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালী ইউনিয়নে অবস্থিত এ জায়গায় আছে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কুয়াকাটায় আছে বেড়ানোর মতো আরও নানান আকর্ষণ। আসুন জেনে নেই কুয়াকাটা সম্পর্কে কিছু তথ্য:


ক্রাব আইল্যান্ড


কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও সামনে গেল আছে ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। এ জায়গায় আছে লাল কাঁকড়ার বসবাস। নির্জনতা পেলে এ জায়গার সৈকত লাল করে ঘুরে বেড়ায় কাঁকড়ার দল। ভ্রমণ মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত থেকে স্পিড বোটে যাওয়া যায় ক্রাব আইল্যান্ডে।


অপূর্ব সমুদ্র সৈকত


কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত।


কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সৈকত লাগোয়া পুরো জায়গাতেই আছে দীর্ঘ নারিকেল গাছের সারি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এ বনেও। বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের কবলে পড়েছে সুন্দর এই নারিকেল বাগান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই দেখা মিলবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য।


ফাতরার বন


কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে নদী পার হলেই সুন্দরবনের শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, নাম তার ফাতরার বন। সুন্দরবনের সব বৈশিষ্ট এ বনে থাকলেও নেই তেমন কোন হিংস্র প্রাণী। বন মোরগ, বানর আর নানান পাখি আছে এ বনে। কদাচিৎ এ বনে বুনো শুকরের দেখা মেলে। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হবে ইঞ্জিন নৌকায়।


কুয়াকাটার কুয়া


কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।


জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খণন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।সীমা বৌদ্ধ মন্দির কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।


শুঁটকি পল্লী


কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।


গঙ্গামতির জঙ্গল


কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খালে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গামতির জঙ্গল। অনেকে একে গজমতির জঙ্গলও বলে থাকেন। নানান রকম বৃক্ষরাজি ছাড়াও এ জঙ্গলে আছে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি।


মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির


কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায় রাখাইনদের একটি গ্রামের নাম মিশ্রিপাড়া। এখানে আছে বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির। কথিত আছে এ মন্দিরের ভেতরে আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। এছাড়া এখান থেকে সামান্য দূরে আমখোলা গ্রামে আছে এ অঞ্চলে রাখাইনদের সবচেয়ে বড় বসতি।


কেরানিপাড়া


সীমা বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনেই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী রাখানদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদের প্রধান কাজ কাপড় বুণন। রাখাইনদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।


যেভাবে যাবেন


ঢাকা থেকে নদী ও সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সবচেয়ে সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা হল ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী, সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা।


ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালী যায় এমভি পারাবত, এমভি সৈকত, এম ভি সুন্দরবন প্রভৃতি লঞ্চ। ভাড়া প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।


কুয়াকাটা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার বাস সার্ভিস আছে। এছাড়া ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশন থেকে সাকুরা পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন, সুরভী পরিবহনের বাস যায় কুয়াকাটা। ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। এছাড়া কমলাপুর বিআরটিসি ডিপো থেকেও প্রতিদিন সকাল ও রাতে কুয়াকাটার বাস ছাড়ে।