মুসলিম নারীর অবশ্যই পালনীয় কতিপয় আমল- পর্ব৩

ইসলামিক শিক্ষা May 30, 2016 1,004
মুসলিম নারীর অবশ্যই পালনীয় কতিপয় আমল- পর্ব৩

২. যদি বিবাহিত হন, তাহলে স্বামীর অনুগত থাকবেন এবং অবিবাহিত হলে মাতা পিতার অনুগত থাকবেন। এর মধ্যে রয়েছে: তাদের কথা শ্রবণ করা এবং তাদের হুকুম প্রতিপালন করা এবং তাদের সাথে সুন্দরভাবে এবং নীচু স্বরে আদবের সাথে কথা বলা, তাদের সাথে অনর্থক ঝগড়া ফাসাদ কিংবা রাগারাগি না করা। যদি কোন ভুল হয়, তাহলে তাদের নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং ওযর পেশ করা। সর্বদা তাদের সাথে হাসি খুশী দেখা সাক্ষাত ও কথা বর্তা বলা।


৩. আপনি যদি সন্তানের মা হন, তাহলে সন্তানের উত্তমরূপে প্রতিপালন করবেন। এর মধ্যে রয়েছে, তাদের উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করা, তাদের চরিত্র গঠন ও সংশোধন করা। তাদেরকে ধীরে ধীরে উত্তম কথা ও কাজে অভ্যস্ত করে তোলা। যেমন প্রতিজ্ঞা পালন, সত্য কথা বলা, আজে বাজে কাজ ও কথা হতে বিরত থাকা। সাথে সাথে তাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সচেষ্ট থাকবেন এবং তাদের পোশাক পরিচ্ছদ পরিস্কার রাখবেন।

৪. আপনার উপর দায়িত্ব হচ্ছে, বাড়ীকে সুন্দরভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। জিনিসপত্রসমূহ সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা, খাদ্য দ্রব্য ইত্যাদি তৈরী করা। পোশাক রিপু করা, বসার জায়গাসমূহ ধৌত ও পাক পবিত্র রাখা। আর অন্যান্য কাজগুলি করবেন ধীরস্থিরভাবে, কোন রকম চেচামেচি কিংবা তাড়াহুড়ো করবেন না, যাতে অন্যের শান্তিতে কোন বিঘ্ন অথবা কারো কোন দু:খ কষ্টের কারণ না হয়ে দাড়ান।


৫. মাতা পিতার হক্ক আদায় করা এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা। এগুলি খুব গুরুত্ববহ ওয়াজিব। কারণ, এদের সন্বন্ধে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কিতাবে হুকুম করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসেও বর্ণনা করেছেন।

আল্লাহ বলেন-

وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا

….. এবং তোমরা মাতা পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।

أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ. ﴿14﴾لقمان

….. সুতরাং তুমি আমার প্রতি এবং তোমার মাতা পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।

وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ. النساء

…… এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে।

সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্বন্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

الشِّرْكُ باللهِ وَعُقُوْقُ الْوَالدَيْنِ

‌আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া। (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন-

لا يَدْخُلُ الْجنَّةَ قَاطِعُ رَحْمٍ

আত্মীয়তা চ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

মাতা পিতার সাথে ভাল ব্যবহারের মধ্যে আছে, ভাল কাজে তাদের কথা মান্য করা, তাদেরকে কোন কষ্ট না দেয়া, তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা।

আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্যে আছে, তাদের খোজ খবর নেয়া, তাদের বাড়ীতে যাওয়া, তাদের সাহায্য করা, তাদের আনন্দ উৎসবে যোগদান করা, আর দু:খ কষ্টে সমবেদনা জানান, কথা ও কাজে তাদের কোন রকম কষ্ট না দেয়া।


৬. আপনি নিজের লজ্জা সম্ভ্রমের হিফাযত করবেন, কণ্ঠস্বরকে সংযত করবেন, চোখের দৃস্টি হিফাযত করবেন। বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে ঘর হতে বের হবেন না। দরজা, বারান্দা কিংবা জানালার সম্মুখে দাড়াবেন না। ব্যালকনি কিংবা ছাদে ঘুরাফিরা না করা। আপনার যে সকল গায়েব মাহরিম আত্মীয় রয়েছে, তাদেরকে আপনার সাথে দেখা সাক্ষাতের কিংবা পর্দা লংঘনের জন্য অনুমতি দেবেন না। তাদের সাথে একাকী অবস্থান করবেন না। তাদের সাথে হাতে হাত মিলাবেন না। কারণ, তারা গায়েরে মাহরিম আত্মীয় স্বজন। আর আপনার বাড়ীতে যদি কোন মেহমান থাকে, সে যেন আপনার কণ্ঠস্বর শুনতে না পায়।

মহিলাদের মধ্যে যারা দাইউস – লজ্জাহীনা তাদের কণ্ঠস্বরই মেহমানরা শুনতে পায় যদিও সে তার নিজের কক্ষে কথা বলে অর্থাৎ লজ্জাহীন নারীরাই জোরে কথা বলে।


৭. প্রতিবেশিনী মেয়েদের খোজ খবর নেয়া এবং তাদের প্রতি দরদ ও সহানুভূতি দেখান। তাদেরকে কোন রকম কষ্ট না দেয়া। যদি তাদের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের সাহায্য সহায়তা করা। তাদেরকে হাদীয়া দেয়া, যদিও তা হাড্ডিযুক্ত এক টুকরা গোস্ত হয়।

কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

কোন মহিলা যেন তার প্রতিবেশিনীকে কুদৃষ্টিতে না দেখে, আর প্রয়োজনে এক টুকরা হাড্ডিযুক্ত গোস্ত দিয়ে হলেও তাকে যেন সাহায্য করে। (বুখারী, মুসলিম)

প্রতিবেশীদের প্রতি কতিপয় হক- আধিকার আল্লাহ ওয়াজিব করে দিয়েছেন।

وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ.سورة النساء 36

এবং তোমরা সদ্ব্যবহার কর নিকট আত্মীয় প্রতিবেশী, এবং অনাত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে বলেছেন:

مَازَالَ جِبْريِلُ يُوْصِيْنِيْ بِالْجَارِ حَتى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ

আমাকে জিব্রীল আ: প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে এতো বেশী উপদেশ দিতেন যে, মতে হতো তিনি যেন তাদেরকেই ওয়ারিশ বানাবেন। (বুখারী, মুসলিম)