অতৃপ্ত ভালবাসার কথা

ভালোবাসার গল্প May 22, 2016 8,433
অতৃপ্ত ভালবাসার কথা

বাংলাদেশ একটি নাতিশীতোষ্ণ দেশ। নেই খুব বেশী গরম বা ঠান্ডা। হিমালয়ের পাশ ঘিরে একটি জেলা। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম জেলা দিনাজপুর। লিচুর রঙে রজ্ঞিন এই জেলা। শিক্ষা দীক্ষার দিক দিয়েও অগিয়ে। আছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।


রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান প্রতিযোগীতার এই বাজারে নিজেকে শ্রেষ্ট প্রমান করে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে নিজেকে বিজয়ী করে ভর্তি হয়েছে একটি ছেলে। তার নাম আবীর। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোনে তার অবস্থান।


প্রথম বর্ষের ক্লাশ শুরু হল। সবাই নিজেদের সাথে পরিচিত হচ্ছে। ক্লাশে একে অপরের সাথে গল্পে মেতেছে। পুরদমে শুরু হল ক্লাশ। আস্তে আস্তে সবার সাথে সবাই বন্ধুত্ত গড়ে তুলল। শিক্ষকদের রসিকতায় বেশ মজা পাচ্ছে সবাই।


একে অপরের দিকে তাকিয়ে মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করছে। হাসিও পাচ্ছে অনেকে। তার মধ্যেও আছে আবীর। সবার দিকে দেখছে সে। এমন সময় একটি মেয়েকে তার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। তার এক বান্ধবীর মত মনে করছে একটি মেয়েকে। সেই বান্ধবী ছিল তার খুব প্রিয়। যাই হোক কিছু কারনে অনেক দিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। হারানো বান্ধবীর মত এর এক জন কে দেখতে পেয়ে সে খুব মনযোগ দিয়ে, বার বার তার দিকে তাকিয়ে দেখে।


দেখতে বেশ সুন্দর ছিল মেয়েটি। মিস্টি নাম কুমী। সুযোগ পেলেই ক্লাশের ফাকে দেখতে থাকে তাকে । দেখে আর হাসে মনে মনে। তার গতি বিধি লক্ষ করে। দেখতে দেখতে প্রায় অনেক দিন অতিবাহিত হল। এবার গায়ে হাওয়া বদল করে কিছু শিখতে আয়োজন হল শিক্ষা সফরের। সবাই খুশিতে আনন্দিত হয়ে পিকনিক এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এলো সেই প্রতক্ষিত দিন। সবাই খুব ভালো সাজে সেজেছে। সেই মেয়েটি সুন্দর একটি লাল শাড়ী পরেছে। বেশ সুন্দর লাগছিল তাকে। আবীর বার বার তার দিকে তাকিয়ে দেখছে। এভাবে অনেক ভালো কাটলো পিকনিক।


আনন্দ বিনোদন এবার শেষ। শুরু হল আবার যথারীতি ক্লাশ। সামনে কিছুদিন পরে গরমের ছুটি হল। সবাই বাসায় গেল ছুটি কাটাতে। এর মধ্যেই একদিন আবীর তার এক বন্ধুর মোবাইল থেকে সেই মেয়েটির নাম্বার। নাম্বার তার কাছে, মনটাও চাইছে কথা বলতে। তার পরেও কখনও কথা বলেনি সে। এর মধ্যেই সামনে চলে এল রমজান। ঈদ –উল ফিতর। শুরু হল বন্ধু-বান্ধবীদের এস এম এস এ আমন্ত্রন জানানোর পালা, সবার নাম্বারে পাঠানো হচ্ছে আমন্ত্রন বার্তা। বাদ যায় নী কুমীর নাম্বার ও। অনেকের কাছ থেকে ফিরতি এস এম এস পেয়েছে। কুমীর কাছ থেকেও।

ম্যাসেজের উত্তর পেয়ে অনেক সাহস পেয়েছে সে। এখন ফোনে কথা বলার সাহস হয়েছে। ঠিক ঈদের দিক বিকালে ফোন দিল আবীর …। হ্যালো…

কে বলছেন?

প্রথম মিনিট ছিল পরিচয় জনিত জটিলতা, পরে বেশ ভালো চলছে।

আরে চিনছোনা আমি আবীর, তোমার ক্লাশমেট। কেমন আছো?

চলল কিছুক্ষন, বেশ ভালো লাগছে আবীরকে।


সুললীত কন্ঠে হাসি সহ কথা বেশ উপভোগ করছিল সে। এভাবে শুরু হল ফোনে কথা বলা। তার বারবার মনে পড়ে সেই আনন্দঘন আলাপের কথা গুলো। মনটা চায় বার বার কথা বলতে। সে বুদ্ধি করে কথাপোকথন গুলো রেকর্ড করে রাখত। মাঝে মাঝেই শুনত সে গুলো। এভাবে ছুটির সময় গুলো পার হত। তার কেন যেন তার বাসায় সময় গুলো পার হতনা। তাই কথা বলে সময় কাটাত। যখন তখন তাকে ফোন দিয়ে মিস্টি কন্ঠ শুনত। আর এমন ও হত ফোনে ব্যালান্স না থাকলে রেকর্ড শুনে ইচ্ছা পুরন করত।


আর কত অপেক্ষা করতে হবে? সেই দিনের জন্যে, যখন দিনের অধিকাংশ সময় গুলো তাকে দেখতে দেখতে পার হবে। নজরে থাকবে সেই মেয়েটি। অনেক চিন্তা ও পরিকল্পনা শেষে খুলল ক্যাম্পাস। সবকিছু তার গতি ফিরে পেল। ক্লাশ পরীক্ষায় ব্যাস্ত সময় শুরু হল। সে কবে যাবে ক্যাম্পাস তা জানতেও অনেকবার কথা হত তার সাথে। ক্যাম্পাসে এসে মেয়েকে ফোন দিয়ে জানতে চায় …………

বলত আমি কোথায় ?

ক্যাম্পাসে। বাহ তুমি তো ভালোই বুঝেছ।

ক্লাশ শুরু হওয়ার আগের দিন রাতে তাকে বার্তা দিল , কালকে ক্লাশ শেষে একটু অপেক্ষা করিও। মেয়েটি ছিল বেশ ভদ্র। কথামত থামল ক্লাশ শেষে। কথা হল দুই জনের। আবীর তাকে বলল, তুমি দেখকে ঠিক আমার এক বান্ধবীর মত!

কঃ ভালো তো , আবার ভার্সিটিতে পেয়ে গেলা। একথা শুনে মুচকি হাসল তারা দুই জনেই।


আবীর মেয়েদের সাথে সামনাসামনি কথা বলতে ভালো পারে না। কেমন যেন একটা ভয় কাজ করে তার ভিতর। তার পরেও ভালোমতই শেষ হল সেই দিনের কথা। প্রতিদিন যেমন সুর্য ওঠে, তেমনী প্রতি দিনই তাকে মনে পড়ত আবীরের। ক্লাশে দেখা হত কিন্তু কথা হত না। কথা হত রুমে এসে রাত্রে বেলা। দিনের অনন্দময় সময় গুলো শেয়ার করত কথার মাধ্যমে। আবীর এর রুমমেট ছিল তার বন্ধু। সে অনেক বেশী উৎসাহ দিত কথা বলতে। মনে করিয়ে দিত তাকে।


রুম বন্ধ করে কথা বলত, যেন কেউ বিরক্ত না করে। এভাবে প্রায় প্রতিদিন কথা হত। অনেক দিন কথা বলার পর, তার রুমমেট আবীরকে পরামর্শ দিল। যদি ভালোলেগে থাকে তাহলে দেরী না করে বলে ফেল। এমনিতেই নিজের ভাললাগা তার পরে রুমমেটের সুপারিশ, এই দুই একসাথে হলে কি আর দেরী করা যায়?


এই ভেবে আবীর সুযোগ খুজতে লাগলো। কিভাবে বলা যায় তার মনে লুকানো আবেগ, তার ভালবাসার কথা। এক দিন সুর্যাস্ত হওয়ার পরে সে ভাবল। আজ আকাশে অনেক তারা। বেশ সুন্দর বাতাস বয়ছে। হয়ত ভাল ফল হবে এই কল্পনা নিয়ে ফোন দিলো তাকে। খুব টেনশন কাজ করছে তার ভিতর। জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে তার এত ভালো লেগেছে। আর তাকেই তার মনের কথা বলবে। কিভাবে বলা যায় এই নিয়ে পরামর্শ ও নিয়েছে রুমমেটের কাছ থেকে। যাই হোক অন্যের পরামর্শ ও নিজের উপর আত্ত বিশ্বাস রেখে বলবে সে কথা। ফোন দিয়ে খোজ খবর নেয়ার পর বলল

আজকে কিছু কথা বলতাম তোমাকে।

বল।

না আজ না, থাক অন্যদিন বলব।


কুমীঃ না আজকেই বলতে হবে, যেহেতু তুমি বলার প্রস্তুতি নিয়েছ। তাই আজকেই বলতে হবে। পরে বললে আর শুনব না।


আবীরঃ উপায় না পেয়ে বলেই ফেলল। “তোমাকে আমার ভালো লাগে ” ভয়ে ভয়ে সাহস করে বলে ফেলল। একথা শুনে সে তো মনে মনে খুব হাসতেছে। আর বলছে, আমাকে তোমার ভালো লাগে?

হ্যা, লাগে তাইতো বললাম।


কুমীঃ ভালো লাগতেই পারে! আমি তো ভাবছিলাম তোমার সাথে তুই করে কথা বলব। আর এখন দেখী তোমার অনেক কিছু ফ্রিলি বলা হচ্ছে, আমি যার সাথে বেশী মিশি সবার সাথেই তুই করে কথা বলি। এখন যদি তোমাকে তুই করে বলি তুমি কি কিছু মনে করবা?


আবীর কোন কিছু না ভেবেই বলল না, কোন সমস্যা নাই। তো ঠিক আছে। বাই।

বাই।


এভাবে সে প্রথম কোন মেয়েকে তার মনের কথা খুলে বলল। যদিও সব কিছু তেমন বোঝাতে পারেনি আবীর। না বললে একথা সমস্যা বার বার মনে হবে। আর এখন বলে যেন বিপদে পড়ল সে। এত দিন তাও তুমি করে কথা বলছিল। এখন হয়ত সেটা ও হারাল। মন খারাপ কি হয় ফলাফল। তুমি থেকে তুই শুরু হয় নাকী। সেটাই দেখার বিষয় এখন।


প্রায় ১ ঘন্ঠা পর , ক্লাশের প্রয়জনে ফোন দিলো তাকে। কথা হল আগের মতই। মানে তুমি করেই কথা হল। যাক মনে মনে সাহস পেয়েছে আবীর। অন্তত আগের অবস্থান বহাল আছে। আবার প্রতিদিন কথা হয়। বেশ দীর্ঘ ক্ষন কথা হয়। এক দিন কুমী কথা বলার মাঝে তাকে বলল , একটা কথা বলব ?

হ্যা বল,

কিছু মনে করবা নাতো ?

না বল, বলে সম্মতি দিল আবীর।

কুমীঃ ভাল লাগে বলেই, তুমি কি আমাকে ফোন দাও প্রতিদিন।

আঃহ্যা।


কুঃ যদি ভাললাগার জন্যেই ফোন দিয়ে থাক তাহলে আর ফোন দিয়োনা। কারন পরে কষ্ট পাবা। আর যদি এমনই বন্ধু হিসেবে ফোন দাও তাহলে দিতে পার। আমার কথা বলতে কোন আপত্তি নায়।


বুঝতে পারল আবীর। জিজ্জেস করল, কেন কি সমস্যা?

আমাকে যেমন তোমার ভাল লাগে তেমনি আমারও তো কাউকে ভালো লাগে। উত্তরে বলল কুমী। আবীর বলল তেমন কিছু নয়, আমি ফোন দিলে একটু ভাল করে কথা বলিও।


কুমী তখন হেসে হেসে একটা কথা বলল, তবে তোমার অনেক সাহস আছে, আমরা কয়েকজন একসাথে থাকতাম, আমাদের সাথে কথা বলার সাহস হত না । তুমি বেশ সাহস নিয়েই বলেছ। আমি অবশ্য তোমার কথা আমার মাকে বলেছিলাম, আমি মায়ের সাথে ফ্রি, সব কথায় শেয়ার করি। মা বলেছে, যদি তোমার ভাল লাগে করতে পারো। ‘আমি এমনিতেই পড়া শুনা শেষ করতে পারিনা আর এই গুলো। আপাতত চিন্তা ভাবনা নাই’। এই বলে তার মন্তব্য জানিয়ে দিল কুমী।


আগে যত টুকু আশা ছিল আবীরের। তা কমে গেল অনেকটা। তার পরেও যেন এক অজানা আশায় বুক বেধেছিল সে। প্রায় ফোন দিয়ে কথা বলত সে।


সময় তখন ভালোবাসার। মানে ভালবাসা দিবসের। সবাই খুব নতুন সাজে প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। ঘুরার মত এত বড় আশা করেনি আবীর। শুধু লাল শাড়িতে দেখতে চেয়েছিল তাকে। কেমন যেন না না ভাব ছিল তার মাঝে। দেখা করেনি সে। কিন্তু সেই মেয়েটি একটি ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল একজায়গায়।


একথা জানতে পেরে তার প্রতি যে ভাল ধারন ছিল। সেই দিন তার ভুল বুঝতে পেরেছিল আবীর। ভালবাসা , ভাললাগা কমিয়ে শুন্যের ঘরে নিয়ে আসতে চেয়েছিল সে। পুরোটা না হলেও অনেকটা সফল সে। আর তেমন আশা করেনা তাকে নিয়ে।


এখন বেশ উন্নতি হয়েছে আবীরের। ভাল লিখে গল্প , কবিতা , গান। তবুও ভালবাসায় তৃপ্তি পায়নি সে। ভুলে থাকতে চেয়েও তেমন ভুলে থাকতে পারিনি। এত কিছুর পরেও প্রায় মনে পড়ে তাকে। কারন এটাই ছিল তার প্রথম প্রেম।