আজ পবিত্র শবে বরাত!

ইসলামিক সংবাদ May 22, 2016 3,066
আজ পবিত্র শবে বরাত!

আজ ১৪ শাবান রোববার দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবে বরাত যা লাইলাতুল বরাত বা ভাগ্য রজনী নামেও পরিচিত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ভাগ্য নির্ধারণ এবং গুনাহ মাফ করে দেন মর্মে কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায়।


ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল নামাজ রোজার পাশাপাশি, কুরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত জিকির, বিশেষ দোয়া, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করে থাকেন। অনেকে গরিবদের মধ্যে হালুয়া রুটি, মিষ্টি ইত্যাদি বিতরণ করেন। করেন দান সদকাহ। শবেবরাত উপলক্ষে কাল সোমবার সরকারি ছুটি।


শবে বরাত একটি ফারসি বাক্য। শবে অর্থ রাত। বরাত অর্থ ভাগ্য। এ জন্য অনেকে একে ভাগ্যরজনী বলে থাকেন।


আবার একে অনেকে লাইলাতুল বরাতও বলে থাকেন। যার শাব্দিক অর্থ- মাগফিরাত বা মুক্তির রাত। পাক-ভারত উপমহাদেশে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শবে বরাত পালন করা হয়।


এ রাতে সবার ভাগ্য নির্ধারিত হয় এবং আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন- এ বিশ্বাস পোষণ করা হয়।


শবে বরাতের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে সরাসরি কেনো নির্দেশনা নেই। হাদিস শরীফ থেকে জানা যায়, রাসূল

(সা:) মধ্য শাবানের রাতে নামাজ আদায় ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন।


পবিত্র কুরআনের একটি সূরায় ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে – ‘এটা সে রাত যাতে প্রতিটি বিষয়ের বিজ্ঞতাপূর্ণ ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ করা হয়।’ (সূরা দুখান, আয়াত ৩ ও ৪ )।


কোনো কোনো তাফসিরকারক এ আয়াতকে উদ্ধৃত করে সেটাকেই শবেবরাত বলে অভিমত দিয়েছেন।


হযরত ইকরামাহসহ কিছু তাফসিরকারকের মতে, পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ’ দ্বারা শাবান মাসের মধ্যভাগের রাতকে (১৪ শাবান) বোঝানো হয়েছে।


এ রাতে প্রত্যেক ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করে আল্লাহ ফেরেস্তাদের ওপর অর্পণ করেন। ইবনে কাসির তার তাফসির গ্রন্থে এবং ইবনুল আরাবি তার আহকামুল কুরআনে ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মধ্য শাবানের রাতে ভাগ্যের ফয়সালা হয়ে থাকে।


অন্য দিকে হজরত ইবনে আব্বাস রা:, ইবনুল উমার রা:, মুজাহিদ রা:, কাতাদা রা:, হাসান বসরী রা:-সহ বেশির ভাগ প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ বলতে লাইলাতুল কদরকে আখ্যায়িত করেছেন, যা রমজান মাসে আসে।


হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন। কিন্তু উম্মতকে এ মাসে বেশি রোজা রাখতে নিষেধ করেন, যাতে রমজানের জন্য সতেজ থাকে।


অবশ্য তিনি মধ্য শাবানের রাতে নামাজ আদায় করা ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। (ইবনে মাজা : কিতাবুল ইকামা)।


তিরমিযী শরীফে এসেছে এ রাতে আল্লাহতায়ালা সর্বনিম্ন আকাশে (দুনিয়ার আকাশে) অবতরণ করেন এবং মানুষকে তাদের পাপ ক্ষমা করানোর জন্য আহ্বান জানান।


শবে বরাত সম্পর্কিত যে কয়েকটি হাদিসের বর্ণনা পাওয়া পওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনাকারী দুর্বল বলে অনেকে মত দিয়েছেন।


শবেবরাতের রাতে আলোকসজ্জারও আয়োজন করে থাকে অনেকে। শবে বরাতের রাতে পটকা ফোটানোর একটি প্রবণতা শহরাঞ্চলে লক্ষ করা যায়, যা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক এবং বেআইনি।


মহিমান্বিত এ রাত ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালনের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।


অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ওয়াজ মাহফিল, কোরান তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ্-না’ত, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ এবং আখেরি মোনাজাত।