কেন শিখব বিদেশি ভাষা?

সাহায্য ও পরামর্শ May 15, 2016 3,433
কেন শিখব বিদেশি ভাষা?

একটা কৌতুক দিয়ে শুরু করা যাক।

এক লোক একবার ঠিক করলেন, তিনি জাহাজে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বের হবেন। শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরা বললেন, ‘ওহে, জাহাজে চড়ছ ভালো কথা, সাঁতার জানো তো?’


লোকটি জবাব দিলেন, ‘সাঁতার জানি না। তবে আমি ১২টা ভাষায় সাহায্য চাইতে জানি।’

বটে! অতল সাগরে হয়তো সাঁতার নয়, বরং ঠিকঠাক সাহায্য চাইতে পারাটাই কাজে দেবে।

রসিকতা রেখে এবার আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের দিকে তাকাই। প্রতিযোগিতার সাগরে তাঁরা তো একরকম হাবুডুবুই খাচ্ছেন। কাঁধে ঝোলা নিয়ে একেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসেন হাজারো শিক্ষার্থী। ঝোলায় আছে কী? নম্বর আছে, জিপিএ-৫ আছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ আছে। তবু প্রতিযোগিতার বাজারের মোড়লেরা বলেন, ‘সেসব তো অনেকেরই থাকে। আর? আর কী আছে তোমার ঝোলায়?’


হ্যাঁ, নিজেকে এগিয়ে রাখতে আপনার ঝোলায় আরও কিছু থাকা চাই। প্রথমত, নিজের ভাষাটা তো ভালো করে জানতেই হবে। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজিকেও খানিকটা কদর করা চাই। পাশাপাশি, একটা তৃতীয় ভাষা যদি জানা থাকে, সেটাই হয়তো আপনাকে আরও এগিয়ে দেবে।


একজন মানুষের পক্ষে পৃথিবীর সব ভাষা শেখা তো সম্ভব নয়। তবে আমাদের বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি দু-একটা বিদেশি ভাষা জানা থাকলে ক্ষতি কী? কোনো না কোনো সময় হয়তো কাজে দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন আহমেদের কথাই ধরুন। শখ করে জাপানি ভাষা শিখেছিলেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিভাগে জাপান থেকে বিশিষ্ট কেউ এলেই শারমিনের ডাক পড়ে। এরই মধ্যে জাপানের ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য শিক্ষাবৃত্তিও পেয়ে গেছেন। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন পড়াশোনার পাশাপাশি ফরাসি ভাষা শিখছেন। ‘আমার ইউরোপে পিএইচডি করতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। ডিপার্টমেন্টের রেজাল্টের সঙ্গে ভাষার দক্ষতা আমার যোগ্যতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে বলেই বিশ্বাস করি।’—বলছিলেন শাহাদাত।


শারমিন-শাহাদাতদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনার পাশাপাশি বিদেশি ভাষা শিখছেন। বাইরের নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেতে, বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে, চাকরি বা ব্যবসার জন্য অথবা নিছক আগ্রহের কারণেও তাঁরা ভাষা শিখছেন। দেশে কিংবা দেশের বাইরে বিদেশি ভাষা শিখে দোভাষী হিসেবে কাজ করার সুযোগও ঢের পাওয়া যায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে ফারজানা বিনতে ইফতেখার এখন চীনা ভাষা শিখছেন। একই সঙ্গে সুদূরপ্রসারী চিন্তাও রয়েছে তাঁর। তিনি বললেন, ‘চীনা ভাষা শেখার জন্য ভর্তি হওয়ার মূল কারণ ছিল স্কলারশিপ। কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম, শুধু স্কলারশিপ না, আরও অনেক সুযোগ আছে সামনে।’


এখন ভাবছেন, বৃত্তিটা পেয়ে গেলে তিনি সে দেশে গিয়ে চীনা ভাষায় ‘ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে পড়াশোনা করবেন। এতে একদিকে যেমন দোভাষী হিসেবে কাজ করা যাবে, তেমনি আবার চীন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও করা যাবে।

কেউ কেউ কেবল বিদেশি সংস্কৃতি ও ভাষা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেও বিদেশি ভাষা শেখেন। নৃবিজ্ঞানের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না পারভিন ও কাজল স্প্যানিশ শিখছেন স্রেফ আগ্রহের কারণে।


আবার এমন শিক্ষার্থীও রয়েছেন, যাঁরা একই সঙ্গে একাধিক ভাষা শিখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের চীনা ভাষা বিভাগের অধ্যাপক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘বিদেশি ভাষা সব সময়ই কাজ ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে। বিদেশে যাওয়ার আগে সেই দেশের ভাষা জানা থাকলে বেশ সুবিধা হয়।


টোয়েফল, আইএলটিএসের মতো অন্যান্য বিদেশি ভাষাতেও বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপে পরীক্ষার স্কোর এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বোঝা যায় ভাষাটা কেমন রপ্ত হচ্ছে।’


কোথায় শিখবেন?


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ভাষা শেখার জন্য তিন মাসের শর্টকোর্সসহ জুনিয়র, সিনিয়র, ডিপ্লোমা নানা ধরনের কোর্স রয়েছে। ভাষা শেখার জন্য আরও রয়েছে জাপানিজ কালচারাল সেন্টার, গোয়েথ ইনস্টিটিউট, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজস, ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার ইত্যাদি। চীনা ভাষা শিখতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কনফুশিয়াস ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া ইন্টারনেটে ভাষা শেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বই, ভিডিও এবং অডিও পাওয়া যায়। তাই ঘরে বসে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা সম্পর্কে জানা এখন অনেকটাই সহজ। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছে আর উদ্যোগ।