সব সাপেরই রয়েছে একই ধরনের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা

জানা অজানা May 12, 2016 1,301
সব সাপেরই রয়েছে একই ধরনের অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা

একটি সাপ যখন কাউকে আক্রমণ করে তখন তার গতি এত বেশি থাকে যে, তা আপনার চোখের পলক ফেলার সময়ই চারবার ছোবল মারার জন্য যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, সাপের রয়েছে দীর্ঘ সময় শিকারের জন্য ওত পেতে থাকার মতো ক্ষমতা। আর এ সময় তারা এতটাই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয় যে নিজে থেকে জানান না দিলে তা অন্য কেউ বুঝতে পারে না। এসব নানা কারণে সাপ 'অতীন্দ্রিয় ক্ষমতাধর' বলেই মনে করছেন গবেষকরা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিবিসি।


বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ শিকারী সাপের অন্যতম হলো ওয়েস্টার্ন ডায়মন্ডব্যাক র‌্যাটলস্নেক। এটি ঘাসের জঙ্গলে অত্যন্ত দক্ষভাবে লুকিয়ে থাকতে পরদর্শী। এগুলো স্বাধীনভাবে বাঁচতে পছন্দ করে। ঝোপ ও জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে এবং সুযোগ পেলে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে শিকার ধরার জন্য তারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতেও পারদর্শী। কোনো কোনো সাপ দীর্ঘ দুই বছর ধরে এ জন্য অপেক্ষায় থাকতে পারে। তবে কোনো শিকার পাওয়া গেলে তারা সবচেয়ে আক্রমণাত্মক প্রাণী হয়ে উঠতে একটুও দেরি করে না।


সাপের ক্ষমতা কখনোই আকার কিংবা আকৃতির ওপর নির্ভর করে না। যে সাপের গতি যত বেশি, সে সাপ তত দক্ষ। এ গতিই তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।


সাপ কাউকে আক্রমণ করলে একবার ছোবল দিতে তার সময় লাগে ৪৪ থেকে ৭০ মিলিসেকেন্ড। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে। অন্যদিকে মানুষের একবার চোখের পলক ফেলতে সময় লাগে ২০০ মিলিসেকেন্ড। এ কারণে সাপের চারবার ছোবল দিতে যত সময় লাগে সে সময়ে মানুষ একবার চোখের পলক ফেলতে পারে। মানুষ যদি সাপের মতো এত দ্রুতগতি অর্জন করে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে অচেতন হয়ে পড়ে।


এ গবেষণায় আরও জানা গেছে, সাপের এ দ্রুতগতি অর্জনের পেছনে কাজ করছে তাদের অত্যন্ত কার্যকর পেশি। মানুষের দেহে রয়েছে ৭০০-৮০০ পেশি। অন্যদিকে সাপের রয়েছে ছোট ছোট ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ পেশি। তবে মানুষের পেশিগুলোর তুলনায় সাপের পেশি এত কার্যকর হওয়ার কারণ কী, সে বিষয়টি এখনও সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেননি গবেষকরা। তবে তারা ধারণা করছেন সাপের পেগিুলো একত্রে সংযুক্ত থাকায় তা রাবার ব্যান্ডের মতো অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করে।


সম্প্রতি মার্কিন গবেষকরা সাপের এসব বিষয় গবেষণা করে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। ইউনিভার্সিটি অব লুইজিয়ানার গবেষক ডেভিড পেনিং এ বিষয় গবেষণার জন্য বেশ কয়েক মাস র‌্যাটলস্নেক পর্যবেক্ষণ করেন। তারা স্পিড ক্যামেরাসহ নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সাপের আক্রমণের সময়ের গতি পরিমাপ করেন।


এ বিষয়ে ডেভিড পেনিং বলেন, 'আমরা যে প্রাণীর কথা বলছি তা তার শিকারকে আক্রমণ ও তার কাছে পৌঁছাতে এত কম সময় ব্যবহার করে যে, সে আগে বুঝতেও পারে না যে তাকে আক্রমণ করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, এটি শুধু র‌্যাটলস্নেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। বিশ্বের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সাপের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে পাতলা থেকে শুরু করে বিশালাকার অজগর পর্যন্ত সাপের প্রায় একই ক্ষমতা দেখা গিয়েছে।