পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার অসাধারণ কৌশল!

সাহায্য ও পরামর্শ May 10, 2016 7,406

মনোযোগ দিয়ে কাজ বা পড়াশোনা করাটা আমাদের অনেকের জন্যই সহজ নয়। দীর্ঘ ক্লাস বা মিটিং চলছে, আর আপনি শারীরিকভাবে সেখানে উপস্থিত থাকলেও আপনার মনটা পড়ে রয়েছে ওই দূরের তালগাছের মাথায় অথবা উড়ে যাওয়া পাখির ডানায়। এহেন উদাসীনতা শুনতে অনেক কাব্যিক মনে হলেও বাস্তবে আপনার কাজ/পড়াশোনার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে! অথবা হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়াই মনোযোগ দিয়ে কোনও কাজ করতে ব্যর্থ হওয়া, মাথায় অপ্রয়োজনীয় চিন্তা আসা এ ধরণের সমস্যা হলে আমরা নিজেদের মনকেই দোষারোপ করি। কিন্তু এই সমস্যাটা মোটামুটি সার্বজনীন। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণায় জানা যায়, প্রতিদিন একটা মানুষের মাথায় প্রায় ৩৪ গিগাবাইটের সমান তথ্য প্রবেশ করে! এত তথ্যের ভিড়ে মনোযোগ ধরে রাখার সুযোগ কোথায়? নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ ধরে রাখতে পারে এমন মানুষ কমই আছে। মনোযোগ ধরে রাখার এই ক্ষমতা ঈশ্বরপ্রদত্ত নয়। একেক মানুষের মনোযোগের সীমা একেক রকম হলেও চর্চার মাধ্যমে কিন্তু সহজেই মনোযোগ ভালো করে ফেলা যায়! কয়েকটি ছোট ছোট কৌশল আছে যেগুলো নিয়মিত চর্চায় শাণিত হয়ে উঠবে আপনার মনোযোগ রক্ষার ক্ষমতা। এর জন্য প্রয়োজন শুধুই সদিচ্ছা।


১) সময় নির্ধারণ করুন

আমাদের মন চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে আর নিজে থেকেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করলে আপনার মন নিজে থেকেই গুছিয়ে যাবে এবং কাজটা শেষ করা সহজ হবে। একটা সময় ঠিক করে নিলে কাজের মাঝখানেও আপনি বুঝতে পারবেন কতখানি কাজ শেষ করতে হবে, কতটা সময় বাকি আছে আর সে জন্য কাজের গতি কতটা বাড়াতে হবে। তবে কাজের মাঝখানে বার বার ঘড়ি দেখবেন না। সেটাও কিন্তু মনোযোগ নষ্ট করে দেয়।


২) মনকে কেন্দ্রীভূত হতে শেখান

একটা নির্দিষ্ট কাজ করার সময়ে মনে হাজারো রকমের চিন্তা আসতেই থাকে। এই বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য কোনও কাজ শুরুর আগে আপনার মনকে ঠিক করুন। কাজ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন। মনে মনে নিজেকে উদ্দেশ্য করে বলুন “ফোকাস”।কাজের মাঝেও যখন প্রিয় গানের কলি মাথায় জোর করে ঢুকে পড়তে চাচ্ছে তখনও মনকে বলুন “ফোকাস”।এতে আপনি নিজেই নিজের মনকে শাসনে রাখতে পারবেন আর কাজের গুরুত্ব মনে করিয়ে দিতে পারবেন।


৩) কাজে ছোটোখাটো বিরতি দিন

একটানা ১০ ঘণ্টা কাজ করতে গেলে মনোযোগ না থাকারই কথা। এ সময়ে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং কাজ করার ইচ্ছা উবে যায়। এ সমস্যা এড়াতে কাজের মাঝে ৫-১০ মিনিটের ছোট বিরতি দিন। একটু হাঁটাহাঁটি করুন, চা পান করুন এবং বু


৪) কাজের পরিবেশ ঠিক করুন

কাজের ফলাফলের ওপর পরিবেশের অনেক বড় প্রভাব থাকে। যথেষ্ট শান্ত পরিবেশ না হলে কাজে মন বসে না। মোবাইল ফোন বাজছে, কম্পিউটারে ক্রমাগত চ্যাট করে যাচ্ছেন, আশেপাশে উচ্চ শব্দে হইহল্লা- এমন অবস্থায় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাই স্বাভাবিক।

কাজ করার সময় দরজায় “ডোন্ট ডিস্টার্ব” কাগজ ঝুলিয়ে রাখুন, মোবাইল সাইলেন্ট করুন, চ্যাট অফ করে দিন। এছাড়া কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র এবং সরঞ্জাম একেবারে নিয়ে বসুন যাতে বার বার উঠতে না হয়। কাজের জায়গা যতটা সম্ভব গোছানো রাখার চেষ্টা করুন। এতে মনোযোগ দিতে সুবিধা হবে।


৫) অতিরিক্ত কাজ করবেন না

অনেক বেশি সময় ধরে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন। ভাবছেন আর একটু সময় মনোযোগ দেই, আর একটু! এই কাজটা করবেন না। বেশি কাজ করতে করতে শরীর ও মন উভয়েই যদি ক্লান্ত হয়ে যায় তবে তখনই কাজে বিরতি দিন। মনোযোগ বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে হবে। এক দিনেই বেশি মনযোগী হয়ে যাবার আশা করবেন না। সবার শরীরের কর্মক্ষমতার সীমা আছে। এই সীমার মধ্যে থেকেই কাজ করা ভালো।


৬) ছোট ছোট অংশে কাজ ভাগ করে নিন

একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝাই। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মোটামুটি এক লিটার পানি খাওয়া জরুরি। কিন্তু এক টানে সেটা খেয়ে শেষ করা ফেললে উপকার বেশি, নাকি এক গ্লাস করে বার বার খেলে উপকার বেশি? এর উত্তর কাউকে বলে দেবার প্রয়োজন নেই। ঠিক এভাবেই বিশাল কাজের বোঝা ছোট ছোট টুকরো করে নিলে সেটা করতে যেমন অতটা চাপ অনুভূত হয় না তেমনি মনোযোগ দেওয়াও সহজ হয়। আবার বেশি ছোট অংশ করবেন না যেন! তাহলে কাজ শেষ করতে গিয়ে বেলা গড়িয়ে যাবে।


৭) প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কাজের ক্রম ঠিক করে নিন

অনেকগুলো কাজ জমে আছে আপনার। কয়েকটা বেশি জরুরি, কয়েকটা কম জরুরি। এমন অবস্থায় কোন কাজটা আগে করবেন, কোনটা পরে করবেন সেটা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে যায় আপনার মন। এর জন্য প্রয়োজনীয়তার মাত্রা অনুযায়ী কাজের একটা তালিকা করে ফেলুন। তালিকার ওপরে থাকবে সবচাইতে জরুরি কাজটা। এভাবে তালিকা অনুযায়ী কাজ করতে থাকুন। নিয়মের মধ্যে থাকলে মনোযোগ দেওয়াটা সহজ হয়ে যায়।


৮) দরকারি ব্যাপার একটা নোটবইতে টুকে রাখার অভ্যাস করুন

দরকারি কাজ করার সময় আরও দরকারি কাজের কথা মনে আসে। এই ফাঁদে পা দেবেন না! যে কাজটি করছেন সেটাই করতে থাকুন মন দিয়ে। মাথায় অন্য যে দরকারি কাজগুলো ঘুরছে সেগুলো এক ফাঁকে টুকে রাখুন একটা নোটবই