একজোড়া কানের দুল

জীবনের গল্প May 7, 2016 6,791
একজোড়া কানের দুল

-আন্টি আগামী মাসের বেতনটা অগ্রিম দেওয়া যাবে?


- খুব বেশী প্রয়োজন স্যার।


-জ্বি।


-আচ্ছা।


যাক দুই হাজার টাকার মিল হল টিউশনি থেকে। বাকী আরো তিন হাজার টাকা। হাতে আটদিন সময়। আমি হাটছি। আর ভাবছি কীভাবে তিন হাজার টাকা জোগাড় করা যায়। দোস্ত নীল বলেছিলো একটা টিউশনি পেয়েছে। সেখানে গেলাম। ক্লাশ নাইনের ছাত্র। অথচ বেতন এক হাজার। তবুও রাজী হয়ে গেলাম।


বলতেই এক মাসের বেতন অগ্রিম পেয়ে গেলাম। বাসায় এসে গত এক বছর ধরে জমানো টাকাগুলো গুনলাম। একুশ শত টাকা হল।


আজ আমি অনেক খুশি। পাঁচ হাজার টাকার মিল হল। তপু স্বর্নকারের দোকানে প্রতিদিন যেতাম। এক জোড়া কানের দুল কিনব। মনেরর মত কানের দুলটা কেবল এই দোকানটাতেই আছে।গত এক বছর যাবত দুলটি পাহারা দিয়ে আসছি।


অবশ্য প্রতিমাসে একশত টাকা করে দিতাম যাতে দুলটি বিক্রি না করে। আজ পাঁচ হাজার টাকায় আমার দুলটি কিনে নিলাম।


আমি অবর্ণ। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত টিচার। মা গৃহিনী। অভাবটা আমার বড়ই আপন। অনার্সে ভর্তি হওয়ার সময় কোনভাবেই ভর্তির টাকাটা ম্যানেজ করতে পারছিলাম না।


মা আমার বাবার দেওয়া একমাত্র স্মৃতি একজোড়া কানের দুল আমার হাতে তুলে দেন। তখন আমি নিরুপায়। বাবাও নিশ্চুপ। বাধ্য হয়ে দুল জোড়া তপু স্বর্নকারের দোকানে বিক্রি করে দিলাম।


আজ সেই দুলজোড়াই কিনলাম। আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। মা দিবস। মেস থেকে বাড়ি আসলাম। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মায়ের দুটো কান খালি। বেশ বেমানান লাগছে!


সুন্দর একটা কেক নিলাম। কেকটা মায়ের সামনে দিলাম।মাকে কেকটা কাটলেন। ঠিক মাঝখানে চোট্ট একটা কৌটা।মা হাতে নিলেন। কৌটাটি খুললেন। মা'র চোখ আটকে গেল এক বছর আগে হারানো কানের দুলটির দিকে।


মা আমার কাঁদছেন। দুচোখের অশ্রু মুছে বললাম ""সুন্দর এই দিনে কাঁদতে নেই। এই দিনটা শুধু তোমার জন্য মা""!


বাবা নিরব দর্শক ছিলেন। উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজন দুপাশে আঁকড়ে আছে আমায়। মা-বাবার শীতল স্পর্শে মনটা নেচে উঠল।

""সুখগুলো আমারই থাকে দুঃখগুলো না কস্টগুলো ভাগ করে নেন সে যে আমার মা""!


জনম জনম মায়ের প্রতি ভালোবাসা হোক অকৃত্রিম।