চলুন জেনে নিই বাঘের যত অজানা তথ্য

জানা অজানা May 7, 2016 1,925
চলুন জেনে নিই বাঘের যত অজানা তথ্য

আমাদের এই গ্রহের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক প্রাণীদের মধ্যে বাঘ অন্যতম। বিড়াল প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে বাঘ সর্ববৃহৎ। কিন্তু এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে। তাই বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক টাইগার ডে হিসেবে পালন করা হয়। টাইগার নামটি গ্রীক শব্দ ‘টাইগ্রিস’ থেকে এসেছে যার উৎপত্তি ফার্সি শব্দ থেকে এবং এর অর্থ তীর।


★ বাঘ সম্পর্কে কিছু মজার ও অজানা তথ্য জেনে নিই চলুন....


১। বাঘের চোখের পিউপিল গোলাকার। গৃহপালিত বিড়ালের চোখের পিউপিল লম্বা চিড়ের মত থাকে। কিন্তু বাঘের ক্ষেত্রে পিউপিল গোলাকার হয়। এর কারণ বাঘ প্রাথমিক ভাবে সকালে এবং সন্ধ্যায় শিকার করে। অন্যদিকে গৃহপালিত বিড়াল রাতে শিকার করা পছন্দ করে।


২। বাঘ তাদের এলাকা চিহ্নিত করে ইউরিনের মাধ্যমে যা অন্য বাঘদের সতর্ক করে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে বাঘের প্রস্রাবের গন্ধ বাটার মাখানো পপকর্ণের মত।


৩। বাঘ কদাচিৎ গর্জন করে। বাঘেরা শুধুমাত্র দূরবর্তী বাঘদের সাথে যোগাযোগের জন্যই গর্জন করে থাকে। রাতের নির্জনতায় বাঘের গর্জন ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। যখন তারা ভয় পায় তখন ঘরের বিড়ালের মতোই শিস দেয়।


৪। বাঘ উদার হয়। পুরুষ বাঘ উদার হয়, তারা স্ত্রী বাঘকে এবং শাবকদের আগে খেতে দেয় যা সিংহ ও অন্যান্য বিড়ালের স্বভাবের বিপরীত।


৫। মানুষের আঙ্গুলের ছাপের মত বাঘের ডোরা গুলো ইউনিক হয়। প্রতিটা বাঘের স্ট্রাইপ বা ডোরাগুলো অনন্য হয়। অর্থাৎ একটি বাঘের ডোরার সাথে অন্য বাঘের ডোরার কোন মিল নেই।


৬। বাঘের কপালে চীনা রাজার চিহ্ন থাকে। বাঘের কপালে যে চিহ্নটি থাকে সেটি দেখতে হুবহু চীনা ভাষায় রাজা লিখতে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তার মত।


৭। বাঘ সাঁতার কাটতে পছন্দ করে। বেশিরভাগ বিড়াল পানি অপছন্দ করে কিন্তু বাঘ পানি ভালোবাসে। বাঘ শিশুর মতোই পানি নিয়ে খেলা করে ও বয়স্কদের মত গোসল করে এবং পানিতে শিকার করতেও দেখা যায় বাঘকে।


৮। সব ধরণের বিড়ালের চেয়ে বড় হয় বাঘ। সাইবেরিয়ার বাঘ পৃথিবীর সবচাইতে বড় বিড়াল। এই বাঘ ৩.৫ মিটার লম্বা হয় এবং এর ওজন হয় ৩২০ কেজি।


৯। বাঘ অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাঘের বাচ্চাগুলো পুরোপুরি অন্ধ থাকে। এদের মধ্যে অর্ধেক সাবালকত্ব অর্জন করে।


১০। বাঘ ঘাপটি মেরে বা ওৎ পেতে শিকার করে। বাঘ হঠাৎ করে আক্রমণ করতে পছন্দ করে। তাই এরা ঘাপটি মেরে বসে থাকে ও শিকার কাছাকাছি আসলে ঝাঁপিয়ে পরে। বাঘের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করা হলে এরা খুব কমই আক্রমণ করে। এই জন্যই ভারতের কিছু স্থানে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাথার পেছনে বাঘের মুখোশ পরা হয়।


১১। বাঘ তার সুখানুভূতি প্রকাশের জন্য চোখ বন্ধ করে থাকে। কারণ তারা গড়গড় শব্দ করতে পারেনা।


১২। বাঘ পূর্ণবেগে দৌড়াতে পারে। একটি বাঘ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। কিন্তু এটি শুধুমাত্র স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে সম্ভব।


১৩। বাঘ শিকারের ডাক অনুকরণ করতে পারে। বাঘ শিকারকে আকর্ষণ করার জন্য তার ডাক অনুকরণ করে। তারা ভালুকের সাথে এই কাজটি করে থাকে এবং প্রায়ই সফল হয়।


১৪। বাঘের লালায় অ্যান্টিসেপ্টিক থাকে। বাঘ তার দেহের ক্ষততে লালা লাগায় যা শুধু পরিষ্কারই করেনা বরং সংক্রমণও প্রতিরোধ করে।


১৫। গত ৮০ বছরে বাঘের ৩টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই প্রজাতি ৩ট হল- বালি টাইগার, জাভা টাইগার ও কাস্পিয়ান টাইগার।


১৬। বন্দিদশা বা বন্য পরিবেশ যেখানেই থাকুকনা কেন বাঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে


১৭। বন্য পরিবেশে ৩৫০০ বাঘ জীবিত আছে। আমেরিকায় বনের চেয়ে বন্দিদশায় আছে বেশি বাঘ। বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঘ আছে।


১৮। একদল বাঘকে এম্বুশ বলে। একদল বাঘকে স্ট্রিক ও বলে।


১৯। বাঘের পা এতোবেশি শক্তিশালী থাকে যে মারা যাওয়ার পরও দাড়িয়ে থাকতে পারে।


২০। বাঘের কানের পেছনের সাদা দাগটিকে ওসেলি বলে।


২১। বাঘ নির্জন প্রাণী। বন্য পরিবেশে এদেরকে সংগবদ্ধ হয়ে থাকতে দেখা যায় খুব কম।


২২। সাধারণত বাঘের চোখ হলুদ বর্ণের হয়। কিন্তু হোয়াইট টাইগারের চোখের বর্ণ নীল হয়।


২৩। বাঘের মস্তিষ্ক বড় হয় যার ওজন ৩০০ গ্রামের চেয়ে বেশি হয়। বাঘের স্মৃতিশক্তি অনেক ভালো। এমনকি বাঘের স্বল্প মেয়াদী স্মরণশক্তি মানুষের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি।


২৪। বাঘ একদিনে ৩০ কেজি পর্যন্ত খেতে পারে। সাধারণত মহিষ, হরিন ও বন্য শূকর শিকার করে থাকে।


২৫। দুই থেকে তিন সপ্তাহ না খেতে পেলে একটি বাঘ মারা যায়।


২৬। বাঘ একসাথে ২-৬টি বাচ্চা প্রসব করে এবং তাদের গর্ভকালীন সময় ১০৫ দিন।


২৭। বাঘ ও সিংহ এর প্রজননের মাধ্যমে নতুন প্রজাতি লাইগার জন্ম নেয়। যা বাঘের চেয়েও বড় হতে পারে।