৫২৩ রান ও ৩৮ ছক্কার অবিশ্বাস্য ম্যাচে মুম্বাইকে হারালো হায়দ্রাবাদ

ক্রিকেট দুনিয়া March 28, 2024 1,355
৫২৩ রান ও ৩৮ ছক্কার অবিশ্বাস্য ম্যাচে মুম্বাইকে হারালো হায়দ্রাবাদ

আইপিএলে আজ ব্যাটিং–টক্করের দুর্দান্ত এক ম্যাচই দেখেছেন দর্শকেরা। যে ম্যাচে হয়েছে একের পর এক রেকর্ড। শুধু আইপিএল রেকর্ড নয়, বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটের রেকর্ড। এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান, আইপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ রান, কয়েক ওভারের ব্যবধানে একজনের রেকর্ড আরেকজনের ভেঙে দেওয়া—এমন অনেক কিছুই দেখেছে হায়দরাবাদ–মুম্বাইয়ের ম্যাচ।


বুধবার রাতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা হায়দরাবাদ ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রানের রেকর্ড স্কোর পায়। হাল না ছাড়া মুম্বাই ৫ উইকেটে ২৪৬ রানে থামে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ম্যাচটিতে হয়েছে মত ৫২৩ রান! এটি আইপিএলে এক ম্যাচে সর্বাধিক রানের নতুন রেকর্ড। ২০১০ সালে চেন্নাই-রাজস্থান ম্যাচে হয়েছিল ৪৬৯ রান।


আইপিএলে এর আগে দলীয় সর্বাধিক রানের স্কোর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দখলে ছিল। ২০১৩ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে তারা ৫ উইকেটে ২৬৩ রান তুলেছিল। সেই ম্যাচে ৬৬ বলে ১৭৫ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেছিলেন ক্যারিবীয়ান ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল।


সব ধরনের স্বীকৃত টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে চতুর্থ সর্বাধিক রানের রেকর্ড গড়েছে হায়দরাবাদ। তবে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এর চেয়ে বেশি স্কোর কোনো দলের নেই। ২০২২ সালে বিগ ব্যাশ লিগে হোবার্ট হারিকেনসের বিপক্ষে ২ উইকেটে ২৭৩ রান করেছিল মেলবোর্ন স্টারর্স।



আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে সর্বাধিক স্কোর নেপালের দখলে। গত বছর এশিয়ান গেমসে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে হিমালয়ের দেশটি ৩ উইকেটে ৩১৪ রানের এভারেস্টে চড়েছিল। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ২৭৮ রান তুলে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আফগানিস্তান। একই বছর তুরস্কের বিপক্ষে ৪ উইকেট ২৭৮ রান করেছিল চেক রিপাবলিক।


ম্যাচটিতে শুধু দলীয় স্কোরই নয়, আইপিএলের কোনো এক ম্যাচে সর্বাধিক ৩৭টি ছক্কার নতুন রেকর্ডও হয়েছে। এর আগে ফ্রাঞ্চাইজি লিগটি ২০১৮ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু-চেন্নাই সুপার কিংস এবং ২০২০ সালে রাজস্থান রয়্যালস-চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচে ৩৩ ছক্কার সাক্ষী হয়েছিল।


বিস্ময়কর হলেও সত্যি, হায়দরাবাদের পাহাড় সমান স্কোর পেলেও তাদের ব্যাটিং ইনিংসে কারোর সেঞ্চুরি নেই। যদিও বাইশ গজে ঝড় তুলেছিলেন হেনরিখ ক্লাসেন, ট্রাভিস হেড, অভিষেক শর্মা ও এইডেন মার্করাম।


মাত্র ১৮ বলে ফিফটির দেখা পান হেড। চলতি আসরে এটি ছিল দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। খানিকপর হেডকে পেছনে ফেলে মাত্র ১৬ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়ে এবারের টুর্নামেন্টের দ্রুততম ফিফটির মালিক হন অভিষেক। তিন নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটার আইপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি মারেন (সবচেয়ে দ্রুততম প্যাট কামিন্সের ১৪ বলে ফিফটি)।


৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর দ্বিতীয় উইকেটে ৬৮ রান যোগ করেন হেড ও অভিষেক। ২৪ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ রান করে হেড সাজঘরে ফেরেন। এরপর মার্করামকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রান যোগ করেন অভিষেক। স্পিনার পীযুষ চাওলার শিকারে পরিণত হওয়ার আগে অভিষেক ২৩ বলে ৩ চার ও ৭ ছক্কায় ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন।


শেষ ৯ ওভারে হায়দরাবাদ কোনো উইকেট না হারিয়ে মার্করান ও ক্লাসেনের ১১৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে পাহাড়সম স্কোর পায়। ক্লাসেন ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৭ ছক্কায় ৮০ ও মার্করাম ২৮ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন।


মুম্বাইয়ের সব বোলারই ছিলেন খরুচে। জাসপ্রীত বুমরাহর বোলিং ফিগারটাই খানিকটা কম ব্যয়বহুল, চার ওভারে ৩৬ রানে উইকেটশূন্য। অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া এক উইকেট পেলেও দেন ৪৬ রান। জেরাল্ড কোয়েটজি ৫৭ ও কোয়ানা মাফাকা ৬৬ রান দেন।


বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ জবাব দেয় মুম্বাই। মাত্র ৩.২ ওভারের উদ্বোধনী জুটিতে ৫৬ রান যোগ করেন রোহিত শর্মা ও ঈশান কিষাণ। ১৩ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৩৪ রান করে কিষাণ ফিরলে জুটি ভাঙে। রোহিত ১২ বলে এক চার ও ২ ছক্কায় ২৬ রানে প্যাট কামিন্সের বলে অভিষেকের হাতে ধরা পড়েন।


তৃতীয় উইকেটে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে অরেঞ্জ আর্মিদের ভয়ের কারণ হন তিলক ভার্মা ও নোমান ধীর। একাদশ ওভারের আগেই মুম্বাইয়ের স্কোর দেড়শ হয়ে যায়। এরপর ১৪ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ রান করা নোমানের বিদায়ে ৮৪ রানের জুটির অবসান হয়।


মাঠ কাঁপানো তিলক ভার্মা ৩৪ বলে ২ চার ও ৬ ছক্কায় ৬৪ রানে সাজঘরে ফেরার সময় মুম্বাইয়ের দরকার ছিল ৩৫ বলে ৯৫ রান। সেই অসম্ভব সমীকরণ মেলাতে মুম্বাই সর্বাত্মক চেষ্টাই চালায়। হার্দিক ২০ বলে ২৪ রানের বেশি করতে না পারলেও টিম ডেভিড ও রোমারিও শেফার্ড আক্রমণাত্মক ছিলেন। ডেভিড ২২ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ ও শেফার্ড ৬ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকলেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি।


হায়দরাবাদের হয়ে প্যাট কামিন্স চার ওভারে ৩৫ রান দিয়ে পান ২ উইকেট। জয়দেব উনাদকাট ২ উইকেট পেলেও খরচ করেন ৪৭ রান।