তামিমের পর রিশাদের তাণ্ডবে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

ক্রিকেট দুনিয়া March 18, 2024 1,018
তামিমের পর রিশাদের তাণ্ডবে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তানজিদ তামিমের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটাররা সুবিধা করতে পারেননি। তাওহিদ হৃদয়-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা ব্যর্থ হলে ম্যাচে ফেরে শ্রীলঙ্কা। শঙ্কা জেগেছিল জয় নিয়েও। সেই শঙ্কা উড়ে গেছে রিশাদ হোসেনের ঝড়ে। তার ক্যামিওতে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।


সোমবার (১৮ মার্চ) টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে ২৩৬ রানের লক্ষ্য দেয় শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে চার উইকেট এবং ৫৮ বল হাতে থাকতে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ ঘরে তুলেছে শান্ত-মিরাজরা।


শ্রীলঙ্কার দেওয়া মাঝারি রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম। লক্ষ্য তাড়ায় বিজয় দেখে শুনে ধীরে খেলতে থাকলেও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন তামিম। এই দুই জুটিতে ৫০ করেন। তবে পাওয়ার প্লের আগের ওভারে টাইগারদের এই জুটি ভাঙেন লঙ্কান বোলার লাহিরু কুমারা। লঙ্কান পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ফার্নান্দোর তালুবন্দী হন বিজয়। সাজঘরে যাবার আগে ২২ বলে ১২ রান করেন তিনি।


বিজয়ের বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে নিজের নামের পাশে ১ রান যোগ করেন তিনি। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ।


এরপর তৃতীয় উইকেটে এসে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয়। দুই জনের জুটিতে আসে ৪৯ রান। এরপর আবার বাংলাদেশের জুটি ভাঙেন লঙ্কান পেসার কুমার। ইনিংসের ২২তম ওভারে তার শর্ট লেংথের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে মাদুশানের তালুবন্দী হন হৃদয়। সাজঘরে যাবার আগে ২২ রান করেন তাওহীদ।


হৃদয়ের আউটের পর বাইশ গজের উইকেটে আসেন মাহামুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি এই অভিঙ ব্যাটার। দলীয় ১১৩ রানে কুমারার চতুর্থ শিকারে পরিনিত হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে ১ রান করেন রিয়াদ। একপ্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম।



কিন্তু শতকের দাঁড় প্রান্তে ছুটতে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটার দলীয় ১৩০ রানে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে ৮১ বলে ৮৪ রান করেছেন তিনি। এরপর ষষ্ট উইকেটে মুশফিক-মিরাজের ব্যাটে চাপ সামলিয়ে রানের চাকা সচল রেখে এগোতে থাকে।


তবে দলীয় ১৭৮ রান আউট হলে ভাঙে ৪৮ রানের এই জুটি। সাজঘরে যাবার আগে ২৫ রান করেন তিনি। এরপর টাইগারদের জয়ের মঞ্চটা তৈরি করেন তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ইনিংসের ৪০তম ওভারে লঙ্কান স্পিনার হাসারাঙ্গার ওভারে ২৪ রান তুলে জয়ের ভিত তৈরি করে ফেলেন রিশাদ।


তার অপারিজিত ৪৮ ও মুশিফিকের ৩৭ রানের ইনিংসে ৫৮ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন লাহিরু কুমারা।


এর আগে টসে হেরে টাইগারদের হয়ে বল হাতে ইনিংসের সূচনা করেন শরিফুল ইসলাম। টাইগার পেসারের করা প্রথম ওভারে স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ করতে সক্ষম হয় দুই লঙ্কান ওপেনার। এরপর দ্বিতীয় ওভারে বল করতে আসেন আরেক পেসার তাসকিন। তাসকিনের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুইটি বল দেখেশুনেই খেলেছিলেন আগের ম্যাচে শতক হাঁকানো লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। তবে তৃতীয় বলেই লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন তিনি। ফলে ফিরতে হয়েছে ১ রানেই।


এদিকে নিজের করা দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আরেক লঙ্কান ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোকেও ফিরিয়েছেন তাসকিন। চতুর্থ ওভারে টাইগার স্পিডস্টারের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে আউট হন ফার্নান্দো। ফার্নান্দো ফেরার পর ক্রিজে মেন্ডিসের সঙ্গী হন সাদিরা সামারাবিক্রমা। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর এ দুজন মিলে ইনিংসের হাল ধরেন। দুজন মিলে গড়েন ২৬ রানের জুটি। তবে একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসেই সামারাবিক্রমাকে সাজঘরে ফেরান মোস্তাফিজ। টাইগার এই পেসারের বলে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দী হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লঙ্কান এই ব্যাটার।


এরপর ক্রিজে অধিনায়ক মেন্ডিসের সঙ্গী হন চারিথ আসালাঙ্কা। এ দুজন মিলে টাইগার বোলারদের দেখেশুনে খেলে গড়েছিলেন ৩৩ রানের জুটি। তবে অষ্টাদশ ওভারে নিজের প্রথম বলেই মেন্ডিসকে সাজঘরের পথ দেখান রিশাদ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর প্রথম এটি। তরুণ এই লেগ স্পিনারের বলে সাজঘরে ফেরার আগে ৫১ বল খেলে ২৯ রান করেছেন মেন্ডিস।


মেন্ডিস ফেরার পর ক্রিজে আসালাংকার সঙ্গী হন জানিথ লিয়ানাগে। এ দুজন মিলে টাইগার বোলারদের দেখেশুনে খেলে সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। দুজন মিলে জুটি গড়ে স্কোরবোর্ডে তুলেন ৪৩ রান। তবে পচিশতম ওভারে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে উইকেটরক্ষকের মুঠোবন্দী হন আসালাঙ্কা। দলীয় ১১৭ রানে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বল খেলে ৫ চারে ৩৭ রান করেছেন লঙ্কান এই ব্যাটার।


এরপর ব্যাট করতে নেমে দুনিথ ওয়াল্লালেগেও ফিরেছেন দ্রুতই। মিরাজের বলে সৌম্য সরকারের মুঠোবন্দী হন তিনি। লঙ্কান এই ব্যাটারকে ফেরানোর পর হাসারাঙ্গাকেও সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন মিরাজই। এদিকে একপ্রান্তে যাওয়া-আসার খেলা চলতে থাকলেও অপরপ্রান্তে আজ লঙ্কানদের হয়ে বিপর্যয় সামলেছেন লিয়ানাগে। দলীয় ৭৪ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে নামেন তিনি। এরপর একে একে তিনি জুটি গড়েছেন আসালাঙ্কা, ওয়াল্লালেগে, হাসারাঙ্গা এবং থিকসানার সঙ্গে। টাইগার বোলারদের সামলে ৬৫ বলে তুলে নিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক।


অষ্টম উইকেটে থিকসানাকে সঙ্গে নিয়ে আজ দারুণ এক জুটি গড়েন লিয়ানাগে। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৬০ রান। এই জুটিতেই ম্যাচে ফিরে লঙ্কানরা। তবে ৪৮ ওভারে সৌম্যর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন থিকসানা। তবে শেষ পর্যন্ত আজ অপরাজিত ছিলেন লিয়ানাগে, দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন নিজের অর্ধশতকও। তাঁর ১০১ রানের ইনিংসের সুবাদেই অলআউট হওয়ার আগে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। টাইগারদের হয়ে আজ বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান এবং মেহেদী মিরাজ।



সংক্ষিপ্ত স্কোর:


শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৩৫ (নিসাঙ্কা ১, আভিশকা ৪, মেন্ডিস ২৯, সামারাউইক্রামা ১৪, আসালাঙ্কা ৩৭, লিয়ানাগে ১০১*, ওয়েলালাগে ১, হাসারাঙ্গা ১১, থিকশানা ১৫, মাদুশান ৩, কুমারা ১; শরিফুল ১০-০-৫৫-০, তাসকিন ১০-১-৪২-৩, মুস্তাফিজ ৯-১-৩৯-২, সৌম্য ২-০-১০-১, মিরাজ ১০-১-৩৮-২, রিশাদ ৯-০-৫১-১)


বাংলাদেশ: ৪০.২ ওভারে ২৩৭/৬ (এনামুল ১২, তানজিদ ৮৪, শান্ত ১, হৃদয় ২২, মাহমুদউল্লাহ ১, মুশফিক ৩৭, মিরাজ ২৫, রিশাদ ৪৮*; থিকশানা ৯.২-১-৩৫-০, মাদুশান ৭-০-৫২-০, কুমারা ৮-০-৪৮-৪, হাসারাঙ্গা ৯-০-৬৪-২, ওয়েলালাগে ৬-০-৩০-০, আসালাঙ্কা ১-০-৮-০)