ভাতের মত সুন্দর

জীবনের গল্প May 7, 2016 3,058
ভাতের মত সুন্দর

হোটেলে ভাত খাচ্ছিলাম। এক অন্ধ বৃদ্ধ ভিখারি এসে হোটেলের ম্যানেজারের কাছে অনুরোধ করতে লাগল, ‘দুইডা ভাত খাওয়ান, সারা দিন কিছু খাই নাই।’


ম্যানেজারের মন গলে না, ‘যাও, ভাগো, পরে আসো। এখন ঝামেলা করবা না।’


বৃদ্ধ নাছোড়বান্দা, ভাত না খেয়ে সরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখায় না। ম্যানেজার কেন যেন একটু নরম হয়, তবে শর্ত জুড়ে দেয়, ‘ভাত খাওয়াইতে পারি, কিন্তু টাকা দেওয়া লাগবে। টাকা ছাড়া খাওয়া নাই।’

বৃদ্ধ ভিখারি তার মুঠোয় ধরে রাখা কিছু খুচরো টাকা ম্যানেজারের সামনে ফেলে দেয়। ম্যানেজার বৃদ্ধকে একদম শেষ টেবিলটা দেখিয়ে দেয়।

ভিখারি হাতড়ে হাতড়ে এসে আমার সামনে বসে পড়ে। আমার খানিকটা অস্বস্তি লাগে। বৃদ্ধের পাঞ্জাবিতে ময়লার স্তর পড়েছে।


টেবিলে বসে বৃদ্ধের সুর পাল্টে যায়, হোটেলের কর্মচারীকে ধমক দিয়ে বলে, ‘লইট্টা মাছ নিয়া আয়।’


কর্মচারী ছেলেটাও ঝাঁজ দেখায়, ‘লইট্টা মাছ নাই।’


বৃদ্ধ আবার ধমকায়, ‘ট্যাকা দিয়া খাইতেছি, লইট্টা মাছ না থাকলে অন্য মাছ নিয়া আয়।’


কর্মচারী ছেলেটা রেগে যায়, ‘কোনো মাছ নাই, শুধু সবজি আছে। খাইলে খান, না খাইলে ভাগেন।’


বৃদ্ধ এবার একটু নরম হয়, ‘ঠিক আছে, সবজি আন। বেশি কইরা ভাত দে।’


বৃদ্ধ এক থালা ভাত শেষ করে আরেক থালার জন্য আদেশ দেয়। সেই থালাও শেষ করে আশপাশে তাকাতে থাকে। আমাকে যে অতিরিক্ত ভাত দিয়েছে, সেটা তাঁর নিজের থালায় ঢেলে সেগুলোও খেতে থাকে।


আমি অবাক হয়ে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকি। হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃদ্ধ খানিকটা লজ্জা পায়। একটু হেসে বলে, ‘সারা দিন কিছু খাই নাই তো, খুব খিদা লাগছে।’


বৃদ্ধের কথায় আমার ঘোর কেটে যায়। বৃদ্ধ ভিখারি যে আমার ভাতটাও খেয়ে ফেলেছে, সেটা হোটেলের কর্মচারীদের বলতে কেন যেন একটু লজ্জা লাগে। আমি খাওয়া বন্ধ করে উঠে আসি। যাকগে, একদিন আধপেটা খেলে এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না!