মোবাইল ফোন ব্যবহারের ১০টি স্বাস্থ্য ঝুঁকি!

মোবাইল টিপস May 4, 2016 1,376
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ১০টি স্বাস্থ্য ঝুঁকি!

বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সকাল থেকে রাত-এটি এখন আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।


মোবাইল ফোন যেমন বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের উপকার করছে, একইভাবে স্বাস্থ্যগতভাবে আমাদের নানাদিক দিয়ে ঝুঁকির মুখোমুখি করছে। চলুন জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে স্রিষ্ট ১০ স্বাস্থ্যঝুঁকি।


(১) অমনোযোগিতা


গবেষকরা দেখেছেন, বেশিরভাগ মানুষই প্রয়োজন না থাকলেও তাদের মোবাইলের মেনু স্ক্রিন, ই-মেইল বা এপ্লিকেশন চেক করার জন্য বার বার ফোন চেক করে। যদিও নতুন কোন ইমেইল, এস এম এস কিংবা নোটিফিকেশন আসার সম্ভাবনা হয়তো থাকে না বললেই চলে।


এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা সারাক্ষণ তাদের ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তারা যে কোন জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ২৩% দেরিতে সক্রিয় হন। যে কারণে বিশ্বের বহু দেশে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা আইনত নিষিদ্ধ। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, মোবাইল ফোন আমাদের কোন কাজের প্রতি একাগ্রতা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে যে কোন কাজ করতে আমাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।


(২) সাধারণ অসুস্থতা


আপনার মোবাইল ফোনের কারণেও কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন! কিভাবে? আপনি সারাক্ষণই আপনার প্রিয় ফোনটি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে ধূলোবালি তো জমা হয়ই, সাথে থাকে অনেক রোগ-জীবাণুও। খাবার সময় হলে আপনি হয়তো খুব ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসলেন। খাবার খাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে আপনার ফোন বেজে উঠলো কিংবা একটা মেসেজ এলো, আপনি সেটার রিপ্লাই দিয়ে এসে খেতে বসে গেলেন।


আর এরই সাথে মোবাইল ফোন থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস খাবারের সাথে আপনার দেহে প্রবেশ করলো। আপনি হয়ত সাথে সাথে অসুস্থ হবেন না, কিন্তু পরবর্তীতে যেকোন অসুস্থতার জন্য এই বিষয়গুলোই দায়ী থাকবে।


(৩) চোখের সমস্যা


যারা চোখের খুব কাছাকাছি দূরত্বে রেখে ফোন ব্যবহার করেন তারা ধীরে ধীরে মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা-এরকম নানা রকম সমস্যায় আক্রান্ত হন। এজন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ফোনের বিভিন্ন লেখার ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে দেয়া, চোখ থেকে ন্যুনতম ১৬ ইঞ্চি দূরত্বে ফোন ব্যবহার করা। আর যদি বেশ দীর্ঘ কোন লেখা ফোনে পড়তে হয়, তবে কিছুক্ষণ পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখকে বিশ্রাম দিন।


(৪) মানসিক চাপ


আমরা ফোন ব্যবহার করি যাতে সব সময় অন্যদের সাথে যোগাযোগ রাখা যায়। কিন্তু এটি একইসাথে আমাদের মানসিক প্রশান্তিও কেড়ে নেয়। কিভাবে? আমরা সব সময় আশা করতে থাকি এই বুঝি ফোনটি বেজে উঠবে কিংবা কেউ হয়তো মেসেজ দিবে।


সচেতনভাবে না হলেও আমাদের অবচেতন মন আমাদের সব মনোযোগ এই ক্ষুদ্র ফোনটির কাছে কেন্দ্রীভূত করে। এধরণের চিন্তার কারণে এক ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন এক ঘন্টার জন্য ফোনটি সুইচ অফ করে রাখুন। এটি আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিবে।


(৫) স্নায়বিক সমস্যা


মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আমাদের ডি এন এ-কে। কোন কারণে মস্তিষ্কের কোষের ডি এন এ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা স্নায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক কাজের ক্ষতিসাধন করে।


মোবাইল ফোনের তেজস্ক্রিয়তা মস্তিষ্কে মেলাটনিনের পরিমাণ হ্রাস করে, যার ফলে বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তড়িত-চৌম্বকীয় তরঙ্গের কারণে অনিদ্রা, আলঝেইমার ও পারকিনসন’স ডিজিজের মত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।


(৬) হার্টের সমস্যা


গবেষণায় জানা গিয়েছে, মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা মানুষের হার্টের স্বাভাবিক কর্মকান্ডকে ব্যহত করে। এর ফলে রক্তের লোহিত রক্তকণিকাতে থাকা হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যেতে থাকে।


এছাড়া হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত কণিকার মাঝে তৈরি না হয়ে দেহের অন্যত্র তৈরি হতে থাকে, যেটি বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। যে কারণে বুক পকেটে ফোন রাখা একদমই অনুচিত। এছাড়া যারা হার্টে পেসমেকার বসিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও মোবাইল ফোন ব্যবহারে যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


(৭) শুক্রাণুর গুনগত মান ও পরিমাণ হ্রাস


এখনকার সময়ে ছেলেদের প্রায় সবাই নিজেদের প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন রাখে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব পুরুষ বা ছেলে খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের শুক্রাণু খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া শুক্রাণুর ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে। আমরা যখন ফোনে কথা বলার পর ফোন পকেটে রেখে দিই, তখন এটি কিছুটা উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। এর ফলে অন্ডকোষের চারপাশে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।


অথচ শুক্রাণু দেহের ভেতরে মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সক্রিয় থাকে। তাই অতিরিক্ত তাপমাত্রা শুক্রাণুর জন্য ক্ষতিকর। আবার আমাদের শরীর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে উপকারী তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরংগ বের হয়, কিন্তু মোবাইল ফোনের উচ্চ মাত্রার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ আমাদের দেহের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের নিঃসরণকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণু তৈরি হয়।


(৮) শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া


যারা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে কথা বলেন তাদের কানের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-কানে কম শোনার ঝুঁকি অনেক বেশি। বর্তমানে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর, তাদের মাঝে শ্রবণশক্তি হ্রাসের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে।


চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্যপক ব্যবহার এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। যারা দৈনিক ২-৩ ঘন্টার চেয়ে বেশি ফোনে ব্যস্ত থাকেন তারা ৩ থেকে ৫ বছরের মাথায় আংশিকভাবে বধির হয়ে যান। তাই এটি রোধ করতে আপনার ফোনের রিং-টোন যতটুকু সম্ভব কমিয়ে রাখুন ও ফোনে খুব বেশি গান শোনা থেকে বিরত থাকুন।


(৯) মস্তিষ্কের ক্যান্সার


মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজষ্ক্রিয় রশ্মি আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলতে পারে। মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট বেতার তরঙ্গ আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উত্তপ্ত করে তোলে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তরঙ্গকে কারসিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বলে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।


(১০) গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি


গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব নারীরা তাদের গর্ভাবস্থায় খুব বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত হয়। এছাড়া পরবর্তীতে এই শিশুদের মাঝে আচরণগত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় মায়েদের উচিত মোবাইল ফোন যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।


বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনকে একেবারে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি।