‘মুসাফির’ : ঢালিউডের নতুন দিনের ইউটার্ন [part 2]

মুভি রিভিউ April 30, 2016 2,851
‘মুসাফির’ : ঢালিউডের নতুন দিনের ইউটার্ন [part 2]

স্ট্যান্ডিং কমেডি ও হারুন রশীদ..

এখন টলিউড, বলিউডের বেশিরভাগ সিনেমায় ‘স্ট্যাডিং কমেডি’-র ব্যবহার হচ্ছে।এর চাহিদা ব্যাপক।আমাদের এখানে তত অায়োজন করে শুরু হয়নি।এবার এ সিনেমায় নতুন আর্টিস্ট যা দেখালেন এককথায় সিনেমার প্রাণ হয়ে গেলেন হারুন রশীদ।তার উপস্থিত বুদ্ধির জায়গায় বিভিন্ন সময় বাচালতার স্বাদে কমেডি ছিল সুপার।তার লুক কমেডিয়ানের না তবে পরিচালক মানিয়ে নিয়েছেন


।পরিচালক এক্সপেরিমেন্টটি ভালোমতই করেছেন কমেডিতে।স্ট্যান্ডিং কমেডিতে ‘time and place’-এর কম্বিনেশনে হারুন রশীদ হাঁটতে হাঁটতে, শপিং মলে, খোলা বাজারে, গোপন আস্তানায় তার কমেডি স্বাদ দিয়েছেন দর্শক।তাকে দেখে খুব সাবলীল মনে হয়েছে।কমেডির সময় অনেক সময় কমেডিয়ান নিজেই হাসে যেটা বিরক্তির সৃষ্টি করে।অাফজাল শরীফের এরকম সীমাবদ্ধতা আছে।হারুন রশীদ সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুনত্ব আনলেন।তার ট্যালেন্টও দেখানোর জায়গাটা তিনি পেলেন।এবার ইন্ডাস্ট্রি তাকে নিয়ে ভাবলেই তার জন্য পয়মন্ত।


ভিলেনের স্পেসিফিক ক্যারেক্টারাইজেশন..


পরিচালক ভাইয়ের সাহস আছে বলতে হবে।নইলে এত ভিলেন এনে জড়ো করলেন কেন! সব ভিলেনকে স্পেসিফিক ক্যারেক্টার দেয়া টাফ কাজ।অথচ তিনি তা করেছেন।ভিলেনের ক্যারেক্টারাইজেশনে এক্সপেরিমেন্ট করলেন ‘প্রফেশনাল + নিউকামার’ কম্বিনেশনে।এর জন্য একটা ঝুঁকি তো ছিলই তবে তিনি কাটিয়ে উঠেছেন।যেহেতু স্পেসিফিক তাই সেভাবেই বলা দরকার।


* মিশা সওদাগর – তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।ইন্ডাস্ট্রিকে যা দিয়েছেন তাতে ঋণের শেষ নেই।মিশার অভিনয়ের অনেকগুলো বাঁক ছিল।যখন যে পরিস্থিতি এসেছে জাস্ট অ্যাটাচমেন্ট করেছেন।সেজন্য একটা সিকোয়েন্সই যদি বলি একেবারে পুরো স্বাদটা মেলে।শুভকে ধরে আনার পরে তাকে বেঁধে জেরা করার সময় মিশা রিভলবার তাক করে গুলি না থেকেও ভয় দেখানোর যে চেষ্টা চালান সেখানে এক একটা সেগমেন্ট এক একরকম ছিল শুভকে যখন বলছে ‘আমার কাজকর্ম দেখে কি ভালো মানুষ মনে হচ্ছে?’ এ সংলাপে কুল থাকলেও শুভর ‘না’ জবাব শোনার পরে ট্রিগারে চাপ দেয়া পর্যন্ত রাগী ভাব আসে।মিশা এত দ্রুত ক্যারেক্টারের নানা জায়গায় সুইচ অন/অফ করতে পারে যে সেটাকে বিরল না বলে উপায় নেই।সিক্রেট অ্যাজেন্টদের সাথে তার যেমন অাচরণ ছিল সেখানেও ভিন্নতা।অন্যদের সাথে স্বাভাবিক থাকলেও ইলায়াস কোবরার সাথে সম্পর্ক শীতল ছিল না।শেষের মিনিট বিশেক তো মিশার ফোকাস দিয়েই সিনেমা শেষ হলো।টাইগার রবিকে মারার সময় মিশার নাটকীয় কৌশল দেখার মতো। মারজানকে বেঁধে নিজের বদলে যাবার গল্পটা বলে যখন ওটা ছিল অসাধারণ।মারজানের বলা ‘শুধুমাত্র স্ত্রীকে হারানোর জন্য নিজের ওপর পাওয়া কর্তব্যের এতবড় অপমান?’ তখন মিশা বলে ‘ভুল, ভুল..আমার স্ত্রীর পেটে আটমাসের শিশুসন্তান ছিল।’ঐ সময় কান্নার অভিনয় অনবদ্য ছিল।মিশার অভিনয়যুদ্ধটা মূলত নিজের সাথে নিজের।


* ইলিয়াস কোবরা – অভিজ্ঞতায় কোবরা পুরনো তাই অভিনয় সাচ্চা।তাকে দেখা গেছে মিশার কাজে নাক গলানোর ভূমিকায়।সেটা ভালোই পেরেছে।


* টাইগার রবি – ‘ভাই, আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে।আমি মারা গেলে ওরা এতিম হয়া যাবে, ভাই’….তার স্টার্টিং সসিকোয়েন্স দেখে মনে হচ্ছিল হাঁটু গেড়ে টাইগার রবি নিজেই কাকুতি মিনতি করছে জীবন বাঁচানোর জন্য।কিন্তু ঘটনা উল্টো।অন্যেরটাই নিজে করে দেখালো।নাটকীয়তা।অতঃপর তাকে মেরে সুইমিংপুলে ফেলে দেয়।টাইগার রবি সময়ের আশা জাগানিয়া ভিলেন।তার বডি ল্যাংগুয়েজ ভিলেনের সাথে মানানসই।তবরেজ ক্যারেক্টারে টাইগার খেটেছে অনেক।


* শিমুল খান – তাকে নিয়ে কিছু বলার দরকার কমই অাছে।’দেশা দ্য লিডার’-এ টিভি চ্যানেলের মালিকের গলা কাটার জন্য জাস্ট একটা দৃশ্যে যেভাবে কোনো ডায়লগ ছাড়াই রুদ্রমূর্তিতে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল সেটা ছিল তার নিজস্বতা।’মুসাফির’-এও নতুন স্বাদ।মেয়েলি ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে আর রুটিতে জেলি মাখিয়ে খেতে খেতে নিজের ভয়ংকর রূপ দেখাল দেবাশীষ বিশ্বাসের পরিবারকে মেরে।শুভর সাথেও জমেছে ফাইটটা।


* জাদু আজাদ – বেশকিছু সিনেমা করে নিজের অবস্থান পাকা করেছে।ট্রেনের মধ্যে শুভর সাথে তার সিকোয়েন্স দর্শক পছন্দ করেছে।


* সোহেল রানা – নিউকামার থিয়েটার থেকে সিনেমায় আসা ভিলেন।প্রথম কাজ হিশেবে রাফ ক্যারেক্টার প্লে করে জাত চিনিয়েছে ছেলেটা।মিশা যখন টাইগার রবিকে গ্রেফতার করতে আসে ঐ সিকোয়েন্সে তার হালকা নৃত্য করা ভঙ্গির কমেডি টাইপের অভিনয়ে ভিলেন স্বাদ জোস।প্লাস্টিক সার্জারির পরে ব্যাণ্ডেজ খুলে টাইহার রবিকে বলা ‘ভাই মাইয়াটারে আমার চাই-ই চাই’ সংলাপটির ডেলিভারি চমৎকার।উদীয়মান ভিলেন হিশেবে চমক হতে পারে সে ঢালিউডে।


* সিন্ডি রোলিং – ফিমেল ভিলেনের অভাবটা ভালোই যাচ্ছিল ঢালিউডে।সেখানে সিন্ডি রোলিং নিঃসন্দেহে সম্ভাবনা দেখাল।কিছুক্ষণের জন্য এসে ঝড়ের মতোই নিজের শক্তির জানান দিল।তাকে সামনের দিনগুলোতে ঢালিউডে দরকার হবে।


মুসাফির* ঢালিউডের নতুন দিনের ইউটার্ন।এ যাত্রা অব্যাহত থাকুক আপকামিং অন্যান্য ফুল প্যাকেজ সিনেমার মাধ্যমে…"