পাঞ্জাব-রাজস্থানের ঐতিহাসিক ম্যাচে যত রেকর্ড

ক্রিকেট দুনিয়া September 28, 2020 2,894
পাঞ্জাব-রাজস্থানের ঐতিহাসিক ম্যাচে যত রেকর্ড

স্টিভেন স্মিথ ও সাঞ্জু স্যামসনের ব্যাটে চড়ে ২২৪ রানের লক্ষ্যে দুর্দান্ত খেলছিল রাজস্থান রয়্যালস। ইনিংসের নবম ওভারেই দলীয় শতক পূরণ করে ফেলে রাজস্থান। কিন্তু সেই ওভারের শেষ বলেই সাজঘরে ফিরে যান ২৭ বলে ৫০ রান করা স্মিথ। চার নম্বরে পাঠানো হয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রাহুল তেওয়াতিয়াকে। অথচ তখনও ডাগআউটে বসা রবিন উথাপ্পার মতো পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান।


উথাপ্পাকে বসিয়ে রেখে তেওয়াতিয়াকে নামানোর সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে আসছিল রাজস্থানের জন্য। মুখোমুখি প্রথম ১৯ বলে মাত্র ৮ রান করতে পেরেছিলেন তেওয়াতিয়া। তার এমন ব্যাটিংয়ের কারণে চাপে পড়ে যায় রাজস্থান। একপর্যায়ে একপর্যায়ে সমীকরণ দাঁড়ায় ৩৬ বলে করতে হবে ৯২ রান। অথচ ৬৬ বলে প্রয়োজন ছিল ১২৪ রান।


তেওয়াতিয়া নামার পরের পাঁচ ওভারে মাত্র ৩২ রান করতে সক্ষম হয় রাজস্থান। অপরপ্রান্তে সাঞ্জু স্যামসন আপ্রাণ চেষ্টা করেও সমীকরণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছিলেন না। ফলে ইনিংসের ১৬তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওভার পুরোটা নিজেই খেলার সিদ্ধান্ত নেন স্যামসন। সে ওভারের তৃতীয় বলে নিশ্চিত একটি সিঙ্গেল নেননি তিনি, যাতে করে তেওয়াতিয়া স্ট্রাইক না আসেন।


ম্যাক্সওয়েলের সেই ওভারে ২১ রান নিয়ে সমীকরণ ৩০ বলে ৭১ রানে নামান স্যামসন। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে যান ৪২ বলে ৮৫ রান করা স্যামসন। তখন তেওয়াতিয়া অপরাজিত ২১ বলে মাত্র ১৪ রান করে। তার ব্যাটে জিতবে রাজস্থান, এমন আশা হয়তো ঘোরতর আশাবাদীরাও করেননি। কিন্তু সেটিই সত্যি করে দেখান বাঁহাতি তেওয়াতিয়া।


রাজস্থান ইনিংসের ১৮তম ওভারে আসেন শেলডন কটরেল, সমীকরণ তখন ১৮ বলে ৫১ রান। সেই ওভারে পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৩০ রান নিয়ে ফেলেন তেওয়াতিয়া। এতক্ষণ ধরে যার ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না একদমই, সেই তেওয়াতিয়াই আবার ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের মোড়। প্রথম ১৯ বলে মাত্র ৮ রান করলেও, শেষের ১২ বলে ৪৩ রান করে দলকে এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়।


স্মিথ, স্যামসন ও তেওয়াতিয়ার ফিফটিতে ভর করে ৩ বল হাতে রেখেই রেকর্ডগড়া জয় পায় রাজস্থান। অবিশ্বাস্য এই ম্যাচটিতে ওলটপালট হয়েছে রেকর্ডের পাতা। উল্লেখযোগ্য কিছু রেকর্ড নিচে তুলে ধরা হলো:


২২৪- আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছে রাজস্থান। এর আগে ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে ২০১৫ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল এই রাজস্থানই। নিজেদের রেকর্ড ভেঙে রোববার ২২৪ রান তাড়া করল তারা। সবধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের নজির রয়েছে মাত্র ৫টি।


৮৬- বিশাল এই লক্ষ্য তাড়া করার পথে শেষের ৫ ওভারে ৮৬ রান করেছে রাজস্থান। আইপিএলে সফল রান তাড়া ম্যাচে এটিই শেষ পাঁচ ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, সবমিলিয়ে দ্বিতীয়। ২০১৮ সালের ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সেইন্ট লুসিয়ার বিপক্ষে শেষ ৫ ওভারে ৯০ রান তুলে ম্যাচ জিতেছিল ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। আইপিএলে এতদিন সফল রান তাড়ার ম্যাচে শেষ ৫ ওভারে সর্বোচ্চ রান ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের ৭৭।


৫- শেলডন কটরেলের করা ১৮তম ওভারে পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন রাহুল তেওয়াতিয়া। এটিই আইপিএলে এক ওভারে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। তার আগে ২০১২ সালের আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর জার্সি গায়ে পুনে ওয়ারিয়র্সের লেগস্পিনার রাহুল শর্মার এক ওভারে ৫ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ক্রিস গেইল।


১৭ (২৩) - তাণ্ডব শুরুর আগে ২৩ বলে ১৭ রান করেছিলেন তেওয়াতিয়া। এর মধ্যে নিজের প্রথম ১৭ বলে ১২টিই ডট খেলেছেন তিনি, যেখানে বাউন্ডারি ছিল মাত্র একটি। আর শেষের আট বলেই ৬টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। একপর্যায়ে ১৮ বলে ৫১ রান প্রয়োজন ছিল রাজস্থানের। কিন্তু তেওয়াতিয়া আউট হওয়ার সময় এটি হয়ে যায় ৬ বলে মাত্র ২ রান।


৪৪৯ - রাজস্থান ও পাঞ্জাবের ম্যাচটিতে দুই দল মিলে মোট করেছে ৪৪৯ রান। আইপিএল ইতিহাসে দুই দল মিলে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় এটি চতুর্থ। সবার ওপরে রয়েছে ২০১০ সালে চেন্নাই ও রাজস্থানের মধ্যকার ম্যাচে হওয়া ৪৬৯ রান।


১৮৩ - ম্যাচের প্রথম ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে ১৮৩ রান করেছেন লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। আইপিএল ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড। মাত্র দুই রানের জন্য এক নম্বরে উঠতে পারেননি তারা। গত বছর ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ১৮৫ রান করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও জনি বেয়ারস্টো।


৬২ - এবারের আইপিএলে শারজাহর মাঠে এখনও পর্যন্ত হওয়া দুই ম্যাচে ছক্কা হয়েছে মোট ৬২টি। রাজস্থান ও চেন্নাইয়ের মধ্যকার ম্যাচে ছক্কার সংখ্যা ছিল ৩৩টি। রোববার পাঞ্জাব-রাজস্থান ম্যাচে হয়েছে আরও ২৯টি। অথচ দুবাই ও আবুধাবিতে হওয়া বাকি সাত ম্যাচে মোট ছক্কার সংখ্যা ৫৫টি। শারজাহয় মাত্র দুই ম্যাচেই ছাপিয়ে গেছে সেটি।


১ - টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো কোনো দলের দুই উদ্বোধনী বোলার একসঙ্গে ৫০'র বেশি রান খরচ করেছেন। রাজস্থান ইনিংসের পাঞ্জাবের দুই উদ্বোধনী বোলার কটরেল ও শামী যথাক্রমে ৫২ ও ৫৩ রান বিলিয়েছেন।