মর্গে নুসরাতকে ‘গোসল’ দিয়ে আপ্লুত হয়ে যা বললেন তিন নারী

দেশের খবর April 11, 2019 2,421
মর্গে নুসরাতকে ‘গোসল’ দিয়ে আপ্লুত হয়ে যা বললেন তিন নারী

দেশজুড়ে আলোচিত ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিয়ার নিথর শরীরে হাত বুলিয়ে শেষ স্নেহ আর ভালোবাসা দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গের তিন নারী।


বৃহস্পতিবার ঢামেক মর্গে লাশের ময়না তদন্তের পর নুসরাতের শরীরে স্নেহের পরশ বুলিয়ে গোসল দিয়েছেন চাঁন বিবি, মনি বেগম আর আনসারী বেগম নামের এই তিন নারী।


দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাবা ও স্বজনদের কাছে নুসরাতের লাশ হস্তান্তরের পর একান্ত আলাপচারিতায় এই তিন নারী জানালেন কিভাবে তারা মাতৃস্নেহের পরম আদরে শেষ গোসল দিয়েছেন নুসরাতকে।


নুসরাতের মায়াবী চোখ-মুখ আর চাহনীর বর্ণনা দিতে গিয়ে বারে বারে আঁচলে চোখ মুচছিলেন চাঁন বিবি। বলছিলেন, এমন নির্দয় মানুষ পৃথিবীতে আছে? এমন নিষ্পাপ মেয়ের শরীরে আগুন দিয়ে হত্যা কেউ করতে পারে?


মনি বেগম বলছিলেন, নুসরাতের পোড়ে যাওয়া শরীরের কথা। বুক এবং গলার নিচ থেকে পুরো শরীরই পুড়ে গেছে। গলার নিচের দিকেই ক্ষত ছিল বেশি। পিঠের কিছু অংশও পুড়ে ক্ষত হয়েছে।


আনসারী বেগম বর্ণনা দিয়েছেন নুসরাতের মুখের। ‘আহ! কি সুন্দর মেয়ে! চোখে মুখে যেন মায়া লেগে আছে নুসরাতের। পুরো শরীরে পোড়া আর ক্ষতের চিহ্ন থাকলেও মুখে কোনো আচড়ও লাগেনি। মনে হয়েছে যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে নুসরাত।’


তারা তিনজনই জানান, ‘আমরা পেপার পত্রিকা পড়ি না। তবে ডাক্তার স্যার আর সিস্টার আপাদের কাছে নুসরাত সম্পর্কে আগে থেকেই শুনেছি। নুসরাতের জন্য দোয়াও করেছি। আল্লাহর কাছে বলেছি, মেয়েটি যেন বেঁচে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলেই গেল নুসরাত।’


এদিকে নুসরাতের লাশ দেখতে সকাল থেকেই মর্গে ভিড় করেন তার স্বজনরা। স্বজনদের বাইরেও অনেকে আসেন মর্গের সামনে। মিরপুর থেকে সকালেই মর্গের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন শায়না নামের এক গৃহিণী।


নুসরাত তার কেউ না, তার সাথে নেই কোনো আত্মীয়তারও বন্ধন। তারপরেও কেন নুসরাতের লাশ দেখতে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নারী জানান, ‘আমার একমাত্র মেয়ে ব্ল্যাড ক্যান্সারে মারা গিছে তিন/চার বছর আগে।


তখন থেকেই আমার মেয়ের বয়সী অন্য কোনো মেয়ে মারা গেলে আমার অন্তরে ব্যথা অনুভব করি। লাশ দেখতে হাসপাতালে চলে আমি। নুসরাতের মারা যাওয়ার খবর টিভিতে আগের রাতেই জানতে পেরেছি। তাই ভোরেই আমি চলে এসেছি মর্গে।’


কিন্তু এখানকার লোকজন বাইরের কাউকেই মর্গের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। ভেতরে ঢুকতে না পারলেও এর জন্য কোনো দুঃখবোধ নেই শায়লা বেগমের। অন্তর থেকে নুসরাতের জন্য দোয়া করছেন তিনি।


এরকম আরো অনেকেই আসেন মর্গের সামনে। যাদের সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই নুসরাতের। তারপরেও নুসরাতের সাথে কী যেন এক আত্মীক বন্ধনের যোগসূত্র খুঁজে পান সবাই।


সূত্রঃ নয়াদিগন্ত অনলাইন