

যখন বাংলাদেশের একাদশ ঘোষণা করা হলো, তখনই বোঝা গিয়েছিল, ম্যাচের উইকেটের নিচে পুঁতে রাখা আছে বিধ্বংসী স্পিন মাইনফিল্ড। একাদশে চার স্পিনার, পেসার নেই একজনও! ওয়েস্ট ইন্ডিজও নীল হলো সেই স্পিনবিষেই। পিচে আহামরি কোন স্পিনার না থাকলেও, মিরাজ-সাকিব-তাইজুলরা রীতিমতো ভেবচেকা খাইয়ে ছাড়লেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের৷ আর তাতেই এলো বাংলাদেশের জয়টা, তাও মাত্র আড়াই দিনে! দুই টেস্টের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নাক চুবানি করে, কিছুদিন আগে তাদের মাটিতে হারের বদলাটাও নেয়া হয়ে গেল।
দুই ইনিংসে বারো উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার ঘরে তুলেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ দলও জন্ম দিয়েছে অনেক রেকর্ডের। দুই টেস্টের এই সিরিজে প্রতিপক্ষের চল্লিশ উইকেটের সবগুলোই শিকার করেছেন বাংলাদেশী বোলাররা৷ চট্টগ্রামের পর ঢাকাতেই একই ঘটনা ঘটিয়ে নতুন রেকর্ডে নাম লিখিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। টেস্টে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটলো৷ এর আগে দুই ম্যাচের সিরিজে স্পিনারদের সর্বোচ্চ উইকেট নেয়ার রেকর্ডটাও ছিল টাইগারদের দখলেই (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮ উইকেট)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিমরন হেটমেয়ারকে দুই টেস্টের চার ইনিংসেই আউট করেছেন মিরাজ, এই নিয়ে টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে পাঁঁচবারই হেটমেয়ারের উইকেটটা মিরাজের দখলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম ভরসা হেটমেয়ার৷ মিরাজও বাংলাদেশ দলের বড় সম্পদগুলোর একটিতে পরিণত হচ্ছেন৷ তবে এই সিরিজে ব্যক্তিগত লড়াইতে মিরাজের কাছে হেরেছেন হেটমেয়ার৷ ১১২ রানের বিনিময়ে ১২ উইকেট মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা, সেইসঙ্গে কোন বাংলাদেশী বোলারেরও বেস্ট টেস্ট বোলিং ফিগার এটাই।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করেছেন মোটে ৯৬ ওভার। মিরাজ আর সাকিব প্রথম ইনিংসের উইকেটলীলা চালিয়েছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছে ১১১ রানে৷ টেস্টে এর আগে এত কম রানে বাংলাদেশ কোন প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে মিরাজ ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল, তাকে সঙ্গ দিয়েছেন তাইজুলও৷
উজ্জ্বল হয়ে আছে বাংলাদেশের অর্জনটা৷ একশোর বেশি টেস্ট খেলার পরে এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করাতে পারলো বাংলাদেশ, পেলো নিজেদের ইতিহাসের প্রথম ইনিংস ব্যবধানে জয়টাও। এক টেস্ট আগেই জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন করানোর সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্ত সেবার টেস্ট জেতার তাড়ায় ফলোঅন করানোর বিলাসিতা দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। একটা সময় এই ফলোঅন বা ইনিংস ব্যবধান শব্দগুলোই ছিল বাংলাদেশের জন্যে আতঙ্কের নাম। অনেক ম্যাচ আমরা হেরেছি ইনিংস ব্যবধানে, অনেকবার প্রতিপক্ষ ফলোঅনে ফেলেছে আমাদের। অথচ এখন বাংলাদেশ নিজেরাই ইনিংস ব্যবধানে জিতছে!
মাস কয়েক আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে ভরাডুবি হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। ৪৩ রানে অলআউট হবার লজ্জাতেও ডুবতে হয়েছিল সাকিবের দলকে। সেই হারের বরাবর প্রতিশোধটা তার নিয়েছে, নিজেদের ক্ষোভটা পারফরম্যান্স দিয়ে উগরে দিয়েছে মাঠে। সামনে থেকে দলকে উজ্জীবিত করেছেন সাকিব, বলেছেন সেই হারের কথা ভুলে না যাতে। অধিনায়ক যদি এভাবে পুরো দলকে তাতিয়ে দেন, বারুদটা তো সবার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবেই, আর সেই বারুদের আঁচে পুড়বে প্রতিপক্ষ।







