বাংলাদেশীর আঁকা কার্টুন আলোরন ফেলেছে বিশ্বের ১৯ টি দেশে

দেশের খবর December 2, 2018 2,629
বাংলাদেশীর আঁকা কার্টুন আলোরন ফেলেছে বিশ্বের ১৯ টি দেশে

একজন ভার্সিটি ড্রপার ও একজন মোরশেদ মিশু!


ছোটবেলা বড় ভাইয়ের হাত ধরেই শিখেছেন কার্টুনের হাতেখড়ি। নেওয়া হয়নি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে চেয়ে ব্যার্থ হয়েছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়েও শেষ হয়নি যার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। ব্যার্থ,এই বাংলাদেশীর কার্টুন আলোরন ফেলেছে বিশ্বের ১৯ টি দেশে। দুঃখের মাঝে সুখ খুঁজে বেড়ানোই যেনো মোরশেদ মিশুর কাজ। রঙে তুলি তাঁর হাতিয়ার।


আঁকছেন ‘দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’ সিরিজ। এরই মধ্যে ৯টি ছবি এঁকেই সাড়া জাগিয়েছেন। জিতেছেন উন্মাদ উৎসবের প্রথম পুরস্কার।


১৯৯৩ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ইব্রাহীমপুরে জন্ম মিশুর। বাবার নাম মো. আব্দুর রাজ্জাক। মায়ের নাম নীলুফা রাজ্জাক। মিশু শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ২০১০ সালে ঢাকা বিএন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে ভর্তি হন। মাঝপথে ছেড়ে দেন লেখাপড়া।


মেজো ভাইর হাতেই শেখা কার্টুনের বেসিক। বন্ধু আল নাহিয়ান-এর মাধ্যমে ফান ম্যাগাজিন উন্মাদের আহসান হাবীবের সঙ্গে পরিচয়। আগ্রহ দেখে আহসান হাবীব ২০১২ সালে মিশুকে উন্মাদে কার্টুন আঁকার সুযোগ দেন। আর এটাকেই জীবনের একটি বড় প্রাপ্তি মনে করেন মিশু। এখন মিশু উন্মাদের সহকারী সম্পাদক। মিশু এরই মধ্যে ১৫টি জাতীয় এবং দুটি আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকেন মিশু।


গেল ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে আক্রান্ত মানুগুলোর ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল। কোনো কোনো ছবি এতই মর্মান্তিক ছিল, দেখাও সহজ ছিল না। রাতে মিশু ঘুমাতে পারেননি তেমন কয়েকটি ছবি দেখে। তখন তিনি ভাবতে বসলেন, ‘এই সব ছবি দেখতে চাই না, তাহলে কী দেখতে চাই?’ উত্তর পেলেন, ‘দেখতে চাই হাসিমুখ। ’ সেই চিন্তা থেকেই প্রথম ছবিটা আঁকা। আঁকা শেষে উন্মাদের নির্বাহী সম্পাদক অনিক খানকে জানালেন। তিনি সিরিজটার জন্য দুই লাইন ছড়া লিখে দিলেন আর একটা নামও—‘দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ’। আর ছড়াটি হলো ‘আমি শুধু আঁকতে জানি, কষ্টগুলো ঢাকতে জানি। ’


যমুনা টভির এক ইন্টারভিউতে মিশু বলেছেন। দ্য গ্লোবাল হ্যাপিনেস চ্যালেঞ্জ সিরিজের প্রথম ছবিটা (সম্ভবত ইরাকের মসুল এলাকায় বম্বিংয়ের সময়) একজন বাবা তাঁর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। আমি সেই ছবিকে সুখের করে তুলতে চাইলাম। তাই সেটা বাবা-মেয়ের খেলার মুহূর্ত হিসেবে কার্টুনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ছবিটি আমার ফেসবুক পাতায় দেওয়ার পর অনেক সাড়া পেলাম। বিদেশি অনেক ফেসবুক পেজও ক্রেডিট দিয়ে, আবার না দিয়েও আপলোড করেছে ছবিটি। এভাবে এই সিরিজের এমন কার্টুন আমি আটটি এঁকেছি। আমি প্রতিবাদ করতে চাইনি, চেয়েছি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিতে।


মিশুর এই ছবি পৌছে গেছে বিশ্বের ১৯ টি দেশে। ভার্সিটি ড্রপার বাংলাদেশের সুনাম পৌছে দিছে ১৯ টি দেশে। তার আকা ছবিগুলো দিয়ে হয়েছে প্রতিবাদ।


মিশু শুধুই আঁকতে চান সুখের ছবি। গত ২৭ তারিখ মিশু সম্পূর্ণ করেছেন গ্লোবাল হ্যাপিনেস সিরিজের ১০ নাম্বার ছবিটি।