ধর্ষক প্রকাশ্যে ঘুরবে, ধর্ষিতা লুকিয়ে মরবে

দেশের খবর December 2, 2018 1,896
ধর্ষক প্রকাশ্যে ঘুরবে, ধর্ষিতা লুকিয়ে মরবে

রেইন্ট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে আটক সাফাত আহমেদকে জামিন দিলো আদালত।


বাংলাদেশে ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলো প্রকাশ হয় খুব কমই। এর মধ্যে যে ঘটনাগুলো প্রচার হয়ে যায়, আলোচনায় আসে সেগুলোর পরিণতিও কি খুব একটা সুখকর? সর্বশেষ কয়টা ধর্ষণের ধর্ষিতা বিচার পেয়েছে? আমাদের দেশে ধর্ষিতা বিচার চাইতে গেলে সমাজের আঙ্গুল ধর্ষকের দিকে উঠার আগে ধর্ষিতার দিকেই যায়। গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি ছিল বনানীর রেইন্ট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনাটি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে জন্মদিনের পার্টিতে নিয়ে ধর্ষণ। এই ঘটনাটি যখন প্রকাশ হয় তখন আলোচনার উপরে উঠে যায়। তখন দেখা যায় ধর্ষকের দলের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ ক্ষমতাধর আপন জুয়েলার্সের মালিকের পুত্র। সাফাত তার বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে সেদিন অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। সে বলে, “আমার বাপ কি বা* ফালায়? সোনা বেচে… সোনা। এই দেশের এয়ারপোর্টের সব সোনা কই যায়? কই থেইকা আসে? সব আমার বাপের আন্ডারে। তোগো মতো এমন দুই একটারে কাইটা ভাসায়া দিলে কেউ টের পাইবো না।” সাফাত তার ড্রাইভারদের দিয়ে এই ঘটনার ভিডিও করে৷ যাইহোক, এই ধর্ষকের দলকে আটক করা হয়। ড্রাইভারকেও ধরা হয়। কিন্তু, সবার সন্দেহ ছিল যেই ধর্ষকের পিতা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম, তাকে কি বিচারের মুখোমুখি করে শেষ পর্যন্ত শাস্তি দেয়া যাবে? তার উপর যখন এই ধর্ষকের পিতা পত্রিকায় প্রকাশ্যেই তার ছেলের কুকীর্তিতে বৈধতা দেয়, তখন সন্দেহ আরো বাড়ে। সেই লোক তখন বলেছিল, “আরে ভাই এমন ফালতু বিষয় নিয়ে হৈচৈ করার কি আছে? মানছি আমার ছেলে আকাম করছে। কিন্তু ওই দুইটা মেয়েও তো ভালো না। খারাপ মেয়ে। তা না হলে কেউ গভীর রাতে হোটেলে যায়? ভদ্রঘরের কোনো মেয়ে কি রাত-বিরাতে হোটেলে যাবে?” দিলদার আহমেদ সেলিম তখন পটেনশিয়াল ধর্ষকের মতো কথা বলেছিল। সে তখন নিজেরও চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়ে বলেছিল, “আমিও তো অনেক জায়গায় আকাম করি। করুম না কেন। আমি কি বুড়া হইয়া গেছি নাকি? আমার যৌবন নাই? আমিও তো হোটেলে যাই। আমার ছেলে যদি হোটেলে ওগো লগে কিছু কইরা থাকে তো মিলমিশ কইরা করছে। ধর্ষণ করতে যাইব ক্যান?” এই অবস্থায় এটা আশা করা দুরহ সাফাতকে শেষপর্যন্ত শাস্তি দেয়া যাবে। সাফাতের ড্রাইভার জামিন পেয়েছে এর আগে, এবার পেল সাফাত। আমাদের ভয় হয়, সাফাত জামিনে বেরিয়ে এসে ধর্ষিতাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে কিনা, এই মামলাকে প্রভাবিত করে কিনা। যারা প্রকাশ্যেই ধর্ষিতার দিকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে তারা যে আবারো অস্ত্রের মুখে ধর্ষিতাকে হুমকি দিয়ে মামলাকে প্রভাবিত করবে না তার নিশ্চয়তা কি?

ধর্ষণের মামলাগুলোতে এরকম বিগফিশদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি ধর্ষিতাদের জন্য সুখকর খবর নয়।