বেশি যোগ্য প্রার্থী কে: হিরো আলম, নাকি খালেদা জিয়া?

দেশের খবর November 19, 2018 2,001
বেশি যোগ্য প্রার্থী কে: হিরো আলম, নাকি খালেদা জিয়া?

হঠাৎ করেই শোনা যাচ্ছিল এবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন হিরো আলম। হিরো আলমের ইচ্ছে ছিল বগুড়া ছয় আসন থেকে মনোনয়ন নেবেন, যে আসন থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচন করে থাকেন৷ যদিও হিরো আলম পরে বগুড়া ৬ আসনের নমিনেশন না নিয়ে বগুড়া ৪ আসনের নমিনেশন কেনেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে লড়বেন, এমন একটি খবর অবশ্য চাউর হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ সেটা সত্যি না হলেও এই দুজনই বেশ আলোচনায় রয়েছেন নির্বাচনকে ঘিরে।

তবে জনগণ বিশ্বাস করুক না করুক, বিএনপির সমর্থকরা মনে করে, মুক্ত খালেদার চেয়ে বন্দী খালেদা বেশি জনপ্রিয়। এখানেই খেলাটা দেখার বিষয়, জনপ্রিয়তা কি আসলেই কাজ করে কিনা? হিরো আলমও ব্যাপক জনপ্রিয় এবং তিনিও মনে করেন তার জনপ্রিয়তা দিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবেন৷ সময়ই বলে দিবে কে পার হতে পারবে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ। তবে এ কথা বলাই যায়, হিরো আলম এবং খালেদা জিয়া যদি একই আসন থেকে নির্বাচন করতেন,তাহলে সাধারণ নিরপেক্ষ জনগণকে সত্যিই চ্যালেঞ্জিং অবস্থার মুখোমুখি হতে হতো, যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য! তবুও তুলনামূলক একটা বিশ্লেষণ করাই যায়, দেখে নেয়া যাক হিরো আলম এবং খালেদা জিয়ার মধ্যে কে অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রার্থী-

১। প্রথমেই শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা যাক। বিএনপি কর্মীসমর্থকরা অবশ্যই খুশি হবেন এবং খুশি হয়ে পরের ঈদের আন্দোলনের প্রস্তুতির জন্য মোটিভশন খুঁজে পাবেন এই ভেবে যে, আপনাদের নেত্রী শিক্ষাগত যোগ্যতায় যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে আছেন হিরো আলমের থেকে। যেখানে হিরো আলম টেনে হিঁচড়ে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন মাত্র, সেখানে বিএনপি নেত্রী খালেদা অষ্টম শ্রেণী পাশ! ভাবা যায়, বর্তমান সরকারের সিস্টেমে পরীক্ষা দিলে খালেদা জিয়ার একটা জেএসসি সার্টিফিকেট থাকত, হিরো আলমকে সেই দিক থেকে মোটামুটি অশিক্ষিতই বলা যায়।


২। কথায় আছে আগে দর্শনদারি, পরে গুণবিচারী। বাঙ্গালিদের জন্য এই কথা আরো বেশি সত্য। খালেদা জিয়া এবং হিরো আলম যদি একই আসনে নির্বাচনে নামতেন, তাহলে হিরো আলম একটু ব্যাকফুটে থাকতেন নিশ্চিত। এমনিতেই বেচারাকে শুধু চেহারার জন্য কত ট্রলের শিকার হতে হয়। তার চেহারা নিয়ে লোকে হাসাহাসি করে। তার নাম হিরো কিন্তু চেহারায় হিরো ভাবটা নেই। এইদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন খালেদা জিয়া। তাকে অনেকে গোলাপি সুন্দরী বলেও ডাকে তার সৌন্দর্যের জন্য। তবে জেলে যাওয়ার পর বর্তমান হাল-হকিকত কেমন, কে জানে। তবুও হিরো আলমের চেয়ে তিনি একটু হলেও এগিয়ে থাকবেন।


৩। অভিজ্ঞতার দিক থেকেও এগিয়ে থাকবেন খালেদা জিয়া। দুবার তিনি পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। আর ওইদিকে হিরো আলম দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে ফেইল মেরেছেন। তবে দুইজনের একটি জায়গায় বেশ মিল আছে। দুইজনই আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছেন। খালেদা জিয়া যেমন দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করতে অবদান রেখেছেন, হিরো আলমও কম যান না। আন্তজার্তিক বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম হয়ে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গণের শক্তিশালী অবস্থা আর এই দেশের মানুষের রুচিকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বহির্বিশ্বে।


৪। হিরো আলম পিছিয়ে আছেন মামলার দৃষ্টিকোণ থেকেও। খালেদা জিয়ার নামে যে কয়টা মামলা আছে, হিরো আলমের বয়স তার চেয়েও কম। এই কাঁচা বয়সে তিনি মামলা না খেয়েই রাজনীতিতে নামছেন, এই দুঃসাহসটাই এক অসামান্য পুঁজি!

৫। কে বেশি বড় কমেডিয়ান? হিরো আলম নাকি খালেদা জিয়া? এই দিক থেকে হিরো আলমকে খানিকটা এগিয়ে রাখা যায়। না না খালেদা জিয়া বোধহয় এটাতেও এগিয়ে থাকবেন। ‘ঈদের পর তেব্র আন্দোলন’ এই কথাটি যতবার তিনি বলেছেন ততবার বিরাট কোহলি সেঞ্চুরিও করেছেন কিনা নিশ্চিত না। কিন্তু, প্রত্যেকবারই তার দল আন্দোলনে নামার আগেই নেতিয়ে পড়ে। কাজেই কে বড় কমেডিয়ান, সেখানে একটু বেশি মার্কস পেয়েই জিতে যাবেন সম্ভবত খালেদা জিয়া।


৬। কে বেশি বোকা? হিরো আলম নাকি খালেদা জিয়া? আমার মনে হয় হিরো আলমই তুলনামূলকভাবে বেশি বোকা। কারণ, তার রাজনৈতিক শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, তার উপর এখনো সে মিথ্যা বলা রপ্ত করতে পারেনি। এছাড়াও নিজের দোষত্রুটি মিডিয়ার সামনে অবাধে স্বীকার করে নিজের বোকামির পরিচয়ই দিয়েছে সে। সে সুন্দর না, ঠিকভাবে কথা বলতে পারে না এসব কথা অবলীলায় সে বলেছে মিডিয়ার সামনে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া কখনোই টিভির সামনে নিজের দোষ স্বীকার করেননি, করবেন বলে ভাবাটাও বোকামি। এই বছরের জানুয়ারি মাসের কথা। জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত বেগম খালেদা জিয়ার বাঘা বাঘা আইনজীবীরা কেউই সাংবাদিকদের “জিয়া এতিমখানা কোথায়” এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারছিলেন না! প্রশ্নের সামনে এসে রীতিমত তোতলাচ্ছিলেন কেউ কেউ, আবার জিয়া এতিমখানার ঠিকানা জিজ্ঞেস করায় প্রবল রেগে যাচ্ছিলেন বেগম জিয়ার আইনজীবীরা! তার আইনজীবীদেরই যেখানে এই দশা, খালেদা জিয়ার সততা নিয়ে আর কী বলার আছে!


৭। জন্মদিনের হিসাবেও পিছিয়ে আছেন হিরো আলম। খালেদা জিয়ার যেখানে একাধিক জন্মদিন সেখানে হিরো আলম একটা জন্মদিনই ঠিকমতো মনে রাখতে পারেন না। কারণ, তাকে অতি অল্প বয়স থেকেই কর্মক্ষেত্রে নামতে হয়েছে, পড়ালেখার সুযোগ বাদ দিয়ে নিজের ভাগ্য অন্বেষণে তাকে নামতে হয়েছে। আজকে যা কিছু আলোচনা, সব তিনি অর্জন করেছেন কষ্ট করে। যেই বয়সে তিনি কাজে নেমেছেন ওই বয়সে অনেকের প্রধান কাজ শুয়ে শুয়ে বিছানায় মুত্র ত্যাগ করা। খালেদা জিয়া এইদিক থেকে অবশ্য বেশ লাকি। তিনি একাধিক জন্মদিন পালন করেন। সেটিও মহা ধুমধাম করে। একের অধিকবার জন্ম নিয়েছেন বলেই তিনি এমন বহুরুপী সুন্দরী। এর মাধ্যমে বলা যায়, হিরো আলমকে খালেদা জিয়ার সমকক্ষ হতে হলে কয়েকবার জন্মাতে হবে এবং ভ্রু হালকা করে প্লাক করতে হবে।

বিশ্লেষণে তুলনামূলকভাবে হিরো আলম পিছিয়ে থাকলেও জনপ্রিয়তায় তিনি বেশ এগিয়ে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। যেহেতু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তাই হিরো আলম যদি সত্যিই খালেদা জিয়ার সাথে একই নির্বাচনী আসনে লড়তেন তাহলে সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুব টাফই হতো জনগণের জন্য। কারণ, গত দশ বছর ধরে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় নেই। এই সময় তার পুত্র খাম্বা চুরি করে জনগণের মেহনত করার সুযোগ পাননি। খালেদা জিয়াও দেশকে হালি হালি বার দুর্নীতি আর নৈরাজ্যে চ্যাম্পিয়ন করে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারেননি। হাওয়া ভবন নামক কমিশন ভবনও দেশের অসহায় মানুষদের সেবা দিতে পারেনি এক বছর। ফলে জনগণ প্রায় ভুলেই গেছে হয়তো খালেদা জিয়ার আমলকে।


তবে, নামটা যেহেতু খালেদা জিয়া, রেকর্ডবুকে তার অবস্থান হারাবার নয়। শুধু জন্মদিনের রেকর্ড ঘাঁটলেও তার নাম মুছে ফেলা কঠিন হবে। চার পাঁচটা জন্মদিন যার, তার কথা এতো সহজে লোকে ভুলবে কী করে! তবে এরই মধ্যে আবার উত্থান হয়ে গেছে হিরো আলমের, নিজের প্রতিভা দিয়ে জনমনে জায়গা করে নিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে চলে গেছেন। ইতিমধ্যে তার ৫০০ ভিডিও প্রকাশিত হয়ে গেছে। জনগণকে তিনি খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি বিনোদন দিয়েছেন। ফলে এই নির্বাচনে তিনি খালেদা জিয়ার আসন থেকে লড়াই করলে নিশ্চিতভাবে একটা মুখোমুখি অবস্থার তৈরি হতো। হিরো আলম ভক্তরা এবং খালেদা জিয়ার অনুসারীরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে যেতেন। খালেদা জিয়া হয়তো দুই একটা গাড়ি ভাঙচুরের নির্দেশ দিয়ে দিতেন। হিরো আলম হয়ত সেগুলো ভিডিও করে বোমা ছাড়তেন। যাক সেই অবস্থা তৈরি হয়নি।


এমন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী একই আসনে নির্বাচন না করায় জনগণ স্বস্তিতে আছে। আমিও স্বস্তিতে আছি। এত সাসপেন্স এক জনমে কিভাবে নিব!