কখন গর্ভধারণের পূর্বেই ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজন?

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস October 12, 2018 2,234
কখন গর্ভধারণের পূর্বেই ডাক্তারি পরামর্শের প্রয়োজন?

প্রস্তুতি ছাড়া যেমন কোন কাজই সুসম্পন্ন হয় না, তেমনি একজন সুস্থ মা থেকে সুস্থ সন্তান লাভের জন্য অনেক সময় গর্ভধারণের আগের থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। এমনি কিছু প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ


১। মায়ের কিছু কিছু রোগ থাকলে (যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড গ্রন্থির এবনরমালিটি ইত্যাদি) গর্ভধারণের পূর্বেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ এসব ক্ষেত্রে রোগের অস্বাভাবিক মাত্রা ভ্রূণের স্বাভাবিক গঠন বাধাপ্রাপ্ত করে। এর ফলে বাচ্চার বিকলঙ্গতা বাজন্মগতত্রুটিহবারসম্ভাবনাথাকে। এছাড়া অন্যান্য রোগ যেমন কিডনির সমস্যা, অধিক প্রেসার, হিস্টরিয়া, এ্যাজমা বা মানসিক রোগ থাকলে কনসিভ করার আগেই তা ডাক্তারের চিকিৎসার মাধ্যমে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। নতুবা তা মা এবং শিশুর বিভিন্ন জটিলতা ও অধিক মৃত্যুহারের কারণ হবে।


২। যাদেরকে কোনো কারণে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয় তারা কনসিভ করার পূর্বেই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।কারণ,গর্ভাবস্থায় মায়ের গ্রহণকৃত ঔষধ গর্ভ ফুল হয়ে গর্ভস্থ বাচ্চার দেহে প্রবেশ করতে পারে, তাই যেকোনো ঔষধ গ্রহণ করার আগে তা নিরাপদ কিনা জেনে নেয়া উচিত। গর্ভস্থ বাচ্চার উপর প্রভাব নির্ভর করবে আপনি কোন ঔষধ খাচ্ছেন, কি ডোজে /পরিমাণে খাচ্ছেন আর গর্ভকালীন কোন সময়ে খাচ্ছেন তার উপর। তাই কনসিভ করার আগেই তা পরিবর্তন করার দরকার হতে পারে।


৩। পূর্বের কোনো বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি থাকলে অথবা ফ্যামিলিতে এ ধরনের কোনো হিস্ট্রি থাকলে তার কারণ নির্নয় ও পরবর্তী গর্ভধারণে একই জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজোন।


৪। স্বামী বা স্ত্রী অথবা ফ্যামিলির কোন সদস্য যদি জেনেটিক রোগের বাহক হয়ে থাকেন (যেমন, থ্যালাসেমিয়া)তবে তাদের সন্তানেরও এ রোগের বাহক অথবা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে হবু বাবা-মায়েরা কনসিভের আগেই একজন জেনেটিক কাউন্সিলারের কাছ থেকে অনাগত সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি এবং পরিত্রানের উপায় সম্পর্কে পরামর্শ নিতে পারেন।


৫। বার বার গর্ভপাত হতে থাকলে এক্ষেত্রে গর্ভপাতের কারণ জানা ও এর যথাযথ চিকিৎসার জন্য পরবর্তী গর্ভধারণের আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।


৬। গর্ভধারণকালীন বিভিন্ন জটিলতা এড়ানোর জন্য গর্ভধারণের আগেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক ওজনের অধিকারী হওয়া উচিত। আদর্শ বি এম আই (Body mass Index) হচ্ছে ১৯-২৫। যারা এর মধ্যে পড়েন না তারা কনসিভের আগেই একজন পুষ্টি বিষারদের শরণাপন্ন হতে পারেন।


৭। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মায়েদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে, একই সাথে বাড়ে গর্ভধারণকালীন জটিলতা। তাছাড়া মায়ের বয়স বৃদ্ধির সাথে ডাউন সিনড্রোম (ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপুর্ন বাচ্চা) নিয়ে বাচ্চা জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। তাই যারা ৩৫ বছরের পর মা হবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের উচিত আগেই এই ঝুঁকি গুলো সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে অবহিত হওয়া এবং সতর্ক থাকা।


লিখেছেনঃ ডাঃ নুসরাত জাহান


সহকারী আধ্যাপকা(অবস-গাইনি)


ডেলটা মেডিকেল কলেজ,মিরপুর ১,ঢাকা।