এপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis) কি? এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার কারন, লক্ষণ ও এর চিকিৎসা।

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস October 1, 2018 7,976
এপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis) কি? এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার কারন, লক্ষণ ও এর চিকিৎসা।

হঠাৎ করেই আপনার বাসার কারো কয়েকদিন ধরে পেটব্যথা। প্রথম দিকে সামান্য ব্যাথা হলেও আস্তে আস্তে ব্যথা বেড়ে প্রথমে নাভির চারপাশ থেকে পরে তলপেটের একটু ডান দিকে গিয়ে স্থির হল। আপনি তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন, ডাক্তার বললেন- আপনার রোগীর এপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis), আজকের মধ্যেই সার্জারি করতে হবে।


এপেন্ডিসাইটিস(Appendicitis) কি??

আমাদের দেহের বৃহদন্ত্র নলের মতো ফাঁপা।এই বৃহদন্ত্রের তিনটি অংশ। ১.সিকাম ২.ইলিয়াম ৩.জেজুনাম। এই তিনটি অংশের মধ্যে প্রথম অংশ হচ্ছে সিকাম। এই সিকামের সাথে ছোট একটি আঙ্গুলের মত দেখতে প্রবৃদ্ধি হল এপেনডিক্স(Appendix)। কোন কারণে যদি এর মধ্যে পাঁচিত খাদ্য, মল বা কৃমি ঢুকে যায়, তাহলে রক্ত ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। নানান জীবাণুর আক্রমণে এপেনডিক্সের ঐ অংশে Inflammation সহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। একেই এপেনডিসাইটিস(Appendicitis) বলে। ১৫-৩০ বছর বয়সের মানুষের এপেন্ডিসাইটিস হতে দেখা যায়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।


এপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis) হওয়ার কারন কি?

শক্ত মল বা মলের নুড়ি, হজম না হওয়া খাদ্যের অংশ যেমন— টমেটো, পেঁয়াজ, আলুর খোসা দ্বারা, অ্যাপেনডিকসের প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে অ্যাপেনডিক্স(Appendix) ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ইনফেকশন হয়ে অ্যাপেনডিসাইটিস(Appendicitis) হতে পারে।


কীভাবে বুঝবেন এপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis) হয়েছে??

প্রথম লক্ষণ হল ব্যথা। ব্যথা সাধারণত নাভির চারপাশে শুরু হয়, পরে ধীরে-ধীরে ডানে সরে গিয়ে তলপেটের ডানপাশে স্থায়ী হয়। এ স্থানে চাপ প্রয়োগ করলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে একসময় হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে ব্যথা আরও বেশি অনুভূত হয়। কাশি দিলেও ওই স্থানে ব্যথা লাগে। বমি ভাব থাকে, কখনও বমি হতে পারে, সঙ্গে জ্বর ও থাকতে পারে।


এপেন্ডিসাইটিস (Appendicitis) হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ করে??[b]

১। পেটে ব্যথাঃ

এপেন্ডিসাটিস (Appendicitis) এর ব্যথা প্রায়ই পেটের ডান পাশে উৎপন্ন হয়। সাধারণত নাভির কাছাকাছি অংশে অস্বস্তি হয়। যা আস্তে আস্তে পেটের নীচের অংশে যেতে থাকে। পা বা পেটের নাড়াচাড়ার সময়, হাঁচি বা কাশি দিলে, ঝাঁকুনি খেলে, পেটে ব্যাথা অনুভূত হয়।


২। পেট ফুলে যাওয়াঃ

তীক্ষ্ণ ব্যথার সাথে সাথে যদি পেট ফুলে যায় তাহলে সেটা এপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।


৩। বমি বমি ভাব ও বমি হওয়াঃ

যদিও বমি বমি ভাব অনেক রোগেরই লক্ষণ হতে পারে। তথাপি যদি বমি বমি ভাবের সাথে পেটে ব্যথা হয় ও সাথে সাথে বমিও হয় এবং কিছু সময় পর যদি প্রশমিত না হয় তাহলে তা এপেন্ডিসাইটিসকেই নির্দেশ করে।


৪। ক্ষুধামন্দাঃ

খাবারের প্রতি অনীহা অথবা ক্ষুধা না লাগা অথবা খাবার খেতে গেলে বমি আশা, এগুলোও এপেন্ডিসাইটিসের একটি লক্ষণ।


৫। পরিপাকের সমস্যাঃ

এপেন্ডিসাইটিস হলে হজমের সমস্যা হতে দেখা যায়। যেমন- ডায়রিয়া হতে পারে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।


৬। হালকা জ্বরঃ

এপেন্ডিসাইটিসের ফলে নিম্নমাত্রার জ্বর হতে পারে যা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের নীচে থাকে। আবার শরীর ঠাণ্ডাও হয়ে যেতে পারে। যদি এপেন্ডিক্স ব্রাস্ট হয় তাহলে জ্বর বৃদ্ধি পায়। অ্যাপেনডিসাইটিস নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করতে কয়েকটি পরীক্ষা- নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রক্তের সিবিসি, মূত্রের রুটিন পরীক্ষা, এক্সরে কেইউবি রিজিয়ন ও আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার মাধ্যমে অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়।


⏩ [b]চিকিৎসাঃ

পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে আপনার অ্যাপেনডিসাইটিস নিশ্চিত হলে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন জরুরী ভিত্তিতে অপারেশনের প্রয়োজন আছে কিনা। লেপ্রোস্কপি বা এপেন্ডেকটমি সার্জারির মাধ্যমে এপেন্ডিসাইটিস অপসারণ করা হয়।


সঠিক সময়ে অ্যাপেনডিসাইটিস অপসারণ না করা হলে যেসকল জটিলতা দেখা দিতে পারেঃ

v গ্যাংগ্রিন বা পঁচন ধরতে পারে

v অন্ত্র ছিদ্র হয়ে যেতে পারে

v পেরিটোনাইটিস

v শক

v এপেনডিকুলার লাম্প

v মৃত্য


তবে যদি ওই মুহূর্তে সার্জারির সুযোগ না থাকে তাহলেঃ

১. মুখে কিছু না খাওয়া

২. ব্যাথা নাশক ও সিডেশন দেয়া

৩. এন্টিবায়োটিক দেয়া

৪. বাওয়েল সচল রাখার ব্যবস্থা করা

৫. সর্বোপরি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


টিকাঃ

যেহেতু সার্জারি করে এপেনডিক্স কেটে ফেলে দেয়া হয়, তাই পুনরায় এপেনডিসাইটিস হবার কোন সম্ভাবনা নেই।


সতর্কবাণীঃ

লেখার উদ্দেশ্য চিকিৎসা নয়, শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন করা। কোন ভাবেই এটিকে প্রেসক্রিপসন বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা। রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া যেকোন প্রেসক্রিপসন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।