গল্পঃ প্রতিশোধ

হৃদয় স্পর্শকাতর গল্প July 19, 2018 4,666
গল্পঃ প্রতিশোধ

হঠাৎ চোখে মুখে পানির ছিটা অনুভব করছি।

বুঝতে পারছি প্রিয়তা তার চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে।


এই পাগলি মেয়েটা প্রতিটা দিন তার চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুমা ভাঙাই।


~হিমেল এই হিমেল, বাবু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠো।

-- প্রিয়তা প্লিজ আর একটু ঘুমাই।

~না বাবু, সাড়ে ৮ টা বাজে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হও অফিস যেতে হবে তো। আমি টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি..


ঘুম ঘুম চোখে বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় এসে দেখি বাহিরের আকাশটা মেঘলা। মনে হয় একটু পর ঝুম বৃষ্টি নামবে।


কয়েক বছর আগে যখন আমি আর প্রিয়তা একসাথে ভার্সিটিতে পড়তাম তখন বৃষ্টির দিনে আমরা দুজন রিকশার হুট খুলে সারা শহর ঘুড়ে বেড়াতাম আর বৃষ্টিতে ভিজতাম।


~কি হলো হিমেল এইখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছ?


--আজ অফিসে না গেলে হয় না? একটু পর মনে হয় বৃষ্টি হবে। চল না তুমি আর আমি আজ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রিক্সায় করে পুরো শহর ঘুড়ে বেড়াবো। অনেকদিন তো আমরা বৃষ্টিতে ভিজি না।


~২দিন পর পর অফিস না যাওয়ার বাহানা । যাও চুপচাপ নাস্তা করে অফিসে যাও।

কি আর করা কোন উপায় না দেখে বউয়ের কথা মত অফিসে চলে এলাম। কিন্তু কাজে কিছুতেই মন বসছে না। ঝুম বৃষ্টি নেমেছে পুরো শহর জুড়ে। এমন দিনে ভুনাখিচুড়ির সাথে ইলিশ ভাজা খাওয়ার মজাই আলাদা।


এখন যদি প্রিয়তাকে কিছু না জানিয়ে ২ টা ইলিশ মাছ কিনে ওর সামনে দাঁড়াই তাহলে কেমন হবে।


হয়তো প্রিয়তা একদম চমকে যাবে।

যেই ভাবা সেই কাজ ২ টা ইলিশ কিনে বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।


অনেকক্ষণ ধরে দরজাতে ঠোকা দিচ্ছি কিন্ত প্রিয়তা দরজা খুলছে না। মনে মনে ভাবলাম প্রিয়তা হয়তো ঘুমাচ্ছে তাই শব্দ শুনতে পারচ্ছে না। হঠাৎ মনে হলো আমার কাছে তো এক্সট্রা একটা চাবি আছে।


দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখি সোফাতে একটা কোট পড়ে আছে। দেখে তো মনে হচ্ছে কোটটা আমার না। টেবিলে তাকিয়ে দেখি প্রিয়তার পছন্দের অনেকগুলো সাদা গোলাপ। কি ব্যাপার বাসায় কোন অতিথি আসলো না কি।

হঠাৎ দেখলাম প্রিয়তা ওয়াশরুম থেকে বের হলো। আমাকে দেখে খুব অবাক হয়ে বললো,


~তুমি এইসময় বাসায়?


--ভুনাখিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে খুব তাই এসে পড়লাম। আচ্ছা তুমি না সকালে গোসল করেছ আবার গোসল করলে যে। বৃষ্টিতে ভিজেছিলে নাকি?


প্রিয়তা আমতা আমতা করে বললো,

~হ্যাঁ ভিজেছিলাম একটু।

--আচ্ছা বাসায় কেউ এসেছে নাকি?


প্রিয়তা কিছু বললো না শুধু চুপ করে রইলো।


রুমে ঢুকে দেখি বিছানা অগোছালো।

এমন সময় রুমের ওয়াশরুম থেকে কেউ একজন বললো,


-প্রিয়তা সোনা তোমার গোসল শেষ? বললাম ২ জনে একসাথে গোসল করি তুমি রাজি হলে না। তোমার নাকি লজ্জা লাগে। আচ্ছা আমার কাছে লজ্জার কি আছে বলো তো?


কথাগুলো শুনে আমি চুপচাপ বিছানায় বসে পড়লাম। প্রিয়তা আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।


একটু পর ওয়াশরুম থেকে আমার বন্ধু নীলয় বের হয়ে এলো। আমাকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেল। আমি নীলয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,

--কি রে আমার টিশার্ট আর টাউজারটা তো তোকে খুব মানিয়েছে। যায় হোক ইলিশ মাছ এনেছি আর এই বৃষ্টির মুখর দিনে ভুনাখিচুড়ির সাথে ইলিশ ভাজা খুব ভাল লাগবে। আজ আমি নিজে রান্না করে তোদের খাওয়াবো।


আমি রান্না করে টেবিলে খাবার রেখে এসে দেখি প্রিয়তা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।

--নীলয় কোথায়?


প্রিয়তা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।


--কি হলো, নীলয় কোথায়?

~চলে গেছে

--এটা কোন কথা আমি এত কষ্ট করে রান্না করলাম।


খাবার টেবিলে আমি আর প্রিয়তা বসে আছি। আমি খাচ্ছি কিন্তু প্রিয়তা খাবার মুখে তুলছে না।


--কি হলো খাচ্ছ না কেন? খেয়ে দেখো খুব মজা হয়েছে।


এমন সময় প্রিয়তা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

~প্লিজ হিমেল আমায়...

আমি প্রিয়তার কথা থামিয়ে দিয়ে বললাম,

-- এই নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চায় না। চুপচাপ খাবার শেষ করো।


পরের দিন অফিসে এসে দেখি নীলয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখে মাথা নিচু করে বললো,


-বন্ধু প্লিজ আমায় মাফ করে দে। আমার খুব বড় ভুল হয়ে গেছে।

আমি নীলয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,


--চল আমার সাথে এক জায়গাতে।

-কোথায় যাবি?

-- গেলেই বুঝতে পারবি।

আমি নীলয়কে নিয়ে হাসপাতালে আসলাম।

নীলয় তখন অবাক হয়ে বললো,

- আমাকে হাসপাতালে কেন নিয়ে আসলি?


--ভয় পাচ্ছিস নাকি? আমি তোর কোন ক্ষতি করবো না। শুধু তোর কয়েকটা পরীক্ষা করাবো।


ডাক্তার পরীক্ষার রিপোর্ট গুলো অনেকক্ষণ হাতে নিয়ে দেখার পর বললেন,


- সরি, নীলয় সাহেব। আপনার বাবা হবার ক্ষমতা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি কখনো বাবা হতে পারবেন না।

এই বলে ডাক্তার চলে গেলন।


নীলয় ডাক্তারের মুখ থেকে কথাটা শুনার পর খুব অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,


-তাহলে?


--তাহলে কিছুই না তোর বাবা হবার ক্ষমতা নেই কিন্তু তারপরেও তুমি ২ সন্তানের বাবা। কথাটা বলে আমি পাগলের মত হা হা করে হাসতে লাগলাম। আর তখন নীলয় আমার কলার চেপে বললো,

-তুই বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে এমনটা করতে পারলি?


--এই প্রশ্নটা নিজে নিজেকে কর। তুই বন্ধুত্বের কতটা মর্যাদা রেখেছিস? আমি সিগারেট খাই না তারপরেও আমার বেডরুমে আমি সিগারেটের প্যাকেট পায়। তোর নতুন কিনা সানগ্লাসও আমি আমার বেডরুমের ড্রয়ার থেকে পেয়েছি। তুই যদি বন্ধু হয়ে বন্ধুর পিছনে ছুরি মারতে পারিস তাহলে আমি কেন পারবো না?


প্রিয়তাকে আমি মাফ করে দিবো হয়তো একটা সময় সবকিছু ভুলেও যাবো কিন্তু তুই তো কখনো চাইলেও ভুলতে পারবি না কারণ যে সন্তান গুলো তকে বাবা বাবা বলে ডাকবে সেই সন্তান গুলোর বাবা তুই না। আমাকে তুই যতখানি কষ্ট দিয়েছিস আমি তার ৩ ডাবল তকে ফেরত দিয়েছি।