উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের এই দেহরক্ষীরা কারা? জানুন চমকপ্রদ তথ্য

আন্তর্জাতিক June 12, 2018 1,194
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের এই দেহরক্ষীরা কারা? জানুন চমকপ্রদ তথ্য

কিম জং আনের দেহরক্ষী দল। নেতার লিমুজিন ঘিরে দৌড়াতে থাকেন তারা। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের সেই দেহরক্ষীরা, যারা স্যুট পরে তাদের নেতাকে ঘিরে বলয় তৈরি করে দৌড়ান, আবার তাদেরকে দেখার সুযোগ হলো বাকী বিশ্বের।


ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য সিঙ্গাপুরে যখন এসে পৌঁছালেন কিম জং আন, সেখানে সারাক্ষণ তাকে ঘিরে রাখছে এই দেহরক্ষীরা।


তবে এই সুদর্শন এবং সুসজ্জিত দেহরক্ষীদের কেবল চোখ ধাঁধানোর জন্যই রাখা হয়েছে বলে ভাবলে ভুল করা হবে। উত্তর কোরিয়া তাদের নেতার নিরাপত্তার ব্যাপারে কোন রকমের ঝুঁকি নিতেই রাজী নয়।


কিভাবে এই রহস্যময় দেহরক্ষী দলের সদস্যদের বাছাই করা হয়, কিভাবে তারা কাজ করেন তা ব্যাখ্যা করেছেন বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাডেন ।


কিম জং আনের দেহরক্ষী দলকে ডাকা হয় সেন্ট্রাল পার্টি অফিস-সিক্স নামে। তাদের আনুষ্ঠানিক নাম অবশ্য ভিন্ন। সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয় 'মেইন অফিস অ্যাডজুট্যান্টস' বলে। মিস্টার কিমের একেবারে খুব কাছে তাকে ঘিরে একটি বৃত্ত তৈরি করে রাখেন তারা।


কোরিয়ান পিপলস আর্মির বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে তৈরি করা হয় এই দেহরক্ষী দল। মিস্টার কিমের শারীরিক উচ্চতা যতটুকু, দেহরক্ষী দলের সদস্যদের অন্তত ততটুকু উচ্চতার হতে হবে। তাদের দৃষ্টিশক্তি হতে হবে প্রখর, চোখে সমস্যা থাকলে চলবে না।


সদস্য বাছাই করা হয় আরও অনেক ধরণের দক্ষতার ভিত্তিতে। যেমন মার্কসম্যানশিপ। কত দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে বন্দুকের গুলি চালিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারেন তারা। এর পাশাপাশি দেখা হয় মার্শাল আর্টে তাদের দক্ষতা।


দেহরক্ষী হিসেবে বাছাই করার আগে তার এবং পুরো পরিবারের কয়েক প্রজন্মের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালোভাবে যাচাই করা হয়। দেহরক্ষীদের অনেকেই কিম জং আনের নিজ পরিবার বা উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীনদের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়।


দেহরক্ষী হিসেবে বাছাই করার পর তাদের খুবই নিবিড় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোরিয়ান পিপলস আর্মির স্পেশ্যাল অপারেশন ফোর্সেস এর সদস্যদের যে ধরণের প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, এই দেহরক্ষীদেরও সেই একই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।


কিম জং আনকে ঘিরে সাধারণত একটি বৃত্ত তৈরি করে রাখেন দেহরক্ষীরা। যেসব লোকজন মিস্টার কিমের কাছাকাছি থাকেন, তাদের সারাক্ষণ নজরে রাখেন এরা।


তিনি যখন গাড়িতে থাকেন, এরা আগে আগে এবং পাশাপাশি দৌড়াতে থাকে। আর তার সঙ্গে থাকে চার থেকে ছ'জন দেহরক্ষী। এদের মধ্যে দেহরক্ষী দলের প্রধানও আছেন।


উত্তর কোরিয়ায় কিম জং আনের কাছাকাছি থাকা লোকজনের মধ্যে এই দেহরক্ষী দলের সদস্যরাই একমাত্র সেমি-অটোমেটিক হ্যান্ডগান বহন করতে পারে।


দেহরক্ষীরা সাধারণত পশ্চিমা ধাঁচের স্যুট-টাই পরেন। মিস্টার কিমের গাড়ীচালক পরেন লিনেনের স্যুট এবং হাতে থাকে চামড়ার দস্তানা।


দেহরক্ষী দলের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক দুশো হতে তিনশো। সাধারণত একজন সদস্য দশ বছর পর্যন্ত কাজ করেন।


তবে দেহরক্ষীদের দ্বিতীয় একটি দল আছে, যার নাম গার্ড কমান্ড। এরা মিস্টার কিমের চারপাশে দ্বিতীয় ধাপের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে।


সাধারণ কিম জং আন যখন কোন জায়গায় যান, সেই জায়গাটিকে তার জন্য নিরাপদ করা এদের কাজ। সেটা অফিস ভবন হতে পারে, কারও ব্যক্তিগত বাড়ি হতে পারে বা উত্তর কোরিয়া কিংবা দেশের বাইরে অন্য কোন জায়গা হতে পারে।


গার্ড কমান্ডের আরও অনেক কাজ আছে। কিম জং আনের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের যাবতীয় জিনিস বহন এবং যোগানো তাদের কাজ। সিঙ্গাপুরে হোটেলের বাইরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনের দেহরক্ষী দলের সদস্যরা এদের বাছাই এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে দেহরক্ষীদের মতো একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।


সিঙ্গাপুরে মিস্টার কিমের সাম্প্রতিক সফরের সময় দেখা গেছে, তার সঙ্গে উত্তর কোরিয়া থেকে তিনটি বিমান এসেছিল। সেখানে একটি বিমান ভর্তি ছিল এই গার্ড কমান্ডের লোকজন।


এরা মিস্টার কিমের জন্য গোপন ও সুরক্ষিত টেলিফোন লাইনের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে তার কম্পিউটার এবং আইটি সুবিধা জোগানো, সব কিছুই করে থাকে।


সেই সঙ্গে মিস্টার কিমের জন্য পানীয়, খাবার, সিগারেট থেকে শুরু করে তার যা যা চাহিদা, সেগুলোও তাদের মেটাতে হয়। দলে থাকেন মিস্টার কিমের ব্যক্তিগত চিকিৎসকও।


কিম পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে স্যুট পরে দৌড়ানো দেহরক্ষীদের তৎপরতাই হয়তো বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন যারা, তারা কিন্তু চোখের আড়ালেই থাকেন।-বিবিসি