মানব সভ্যতার ইতিহাসের চমকপ্রদ গুহা (পর্ব ২)

জানা অজানা April 21, 2016 2,016
মানব সভ্যতার ইতিহাসের চমকপ্রদ গুহা (পর্ব ২)

গুহা- মানুষের আদিম আবাসস্থল। গুহা থেকে কুঁজো মানুষ পিঠ সোজা করে উঠে এসেছে আজকের শহরের দালানে। ইতিহাসটা কম লম্বা নয়। গুহাকে আমরা দেখি ফিকশনে, উপন্যাসে, রহস্যের বর্ননায়। আলী বাবা এক যাদুকরী গুহাতেই খুঁজে পেয়েছিল তাঁর রত্ন ভান্ডার। আবার হ্যারি পটারের জীবন হুমকীর মুখে পড়েছিল এক ক্রিস্টাল গুহাতে। বাস্তব জীবনে গুহা সভ্যতার অংশ, বিকাশের অংশ। মানুষের পদচারণায় প্রকৃতির অংশ গুহাগুলো রূপ বদলে হয়েছে তথ্যের ভান্ডার। তার গায়ে অঙ্কিত হয়েছে পৃথিবীর প্রথম লেখনী।


★ আসুন জেনে নিই, বিস্ময়ের ঝুড়ি এইসব গুহাদের কথা....


ভিমবেতকা রক শেল্টারস, ইন্ডিয়া

ইন্ডিয়ার মধ্য প্রদেশে এই গুহার অবস্থান। ইন্ডিয়ার প্রাচীন মানবজীবন বুঝতে হলে এই নৃতাত্ত্বিক স্থানটি আপনাকে সাহায্য করবে। এখানে দেখা মিলবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রস্তরযুগের পাথরে করা চিত্রকর্ম যাদের বয়স ৩০,০০০ বছরেরও বেশী। গুহার দেয়ালগুলো পুরু ফয়েলেজ এবং প্রাকৃতিক উপাদানে ঢাকা। চিত্রকর্মগুলো করা হয়েছে জলরঙে। গুহার ছবিগুলোর মধ্যে আছে পশুপাখি আর মানুষের অবয়ব, শিকারের ছবি, বিভিন্নরকম অস্ত্রের, কমিউনাল নাচের, ধর্মীয় প্রতীকের ছবি। ছবিগুলো থেকে সহজেই অনেক তথ্য পাওয়া যায় সে সময়ের মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে, তাদের ধর্ম বিশ্বাস এবং সংস্কৃতিচর্চা সম্পর্কে। গুহাটির সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায় ফ্রান্সের লাস্কক্স গুহার এবং স্পেনের আলতামিরা গুহার।


স্কাই কেভ অব মাস্টাং কিংডম, নেপাল

গুহাগুলোকে স্কাই কেভ বা আকাশ গুহা বলার কারণ হল এটি হিমালয় পর্বতের দৈত্যাকার ক্লিফে অভ্যন্তরে অবস্থিত। গুহাগুলো ক্লিফসাইড থেকে খনন করা হয়েছে অথবা উপর থেকে টানেল আকারে কাঁটা হয়েছে। এমন গুহার সংখ্যা কত সেটা জানলে আপনি আকাশ থেকে পড়বেন। ১০,০০০ মনুষ্য নির্মিত গুহা আছে এখানে। এগুলো দেখতে দৈত্যাকৃতির বালির ক্যাসলের মত। মনে করা হয়, অন্তত ১ হাজার বছর বয়স হবে গুহাগুলোর। কিন্তু কারা এগুলো তৈরি করেছে এবং কি উদ্দেশ্যে তৈরি করেছে তা এখনও রহস্য। অনেক গুহার দেয়ালে বিভিন্ন রকম প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে।


বাটু গুহা, মালয়শিয়া

কুয়ালামপুরের লাইমস্টোন পর্বতগুলোতে দেখা মেলে একদল গুহার যাদের বলা হয় বাটু গুহা। ইন্ডিয়ার বাইরে অবস্থিত অন্যতম হিন্দু ঐতিহ্যের নিদর্শন এটি। এটি দেবতা মুরুগান এর উদ্দেশ্যে সমর্পিত এবং মূল অংশটি ব্যবহৃত হয় থাইপুসাম সেলিব্রেশনের জন্য। মন্দির গুহাগুলোয় উচ্চ ভোল্টের সিলিং এর নীচে অনেকগুলো হিন্দু কুঠি রয়েছে। ২৭২ টি কংক্রীটের ধাপ আপনাকে পৌঁছে দেবে গুহাদ্বারে। আপনি দেখতে পাবেন বিশালাকৃতির মুরুগান স্বামীর মূর্তি। ৩টি প্রধাণ গুহার পাশাপাশি ছোট ছোট কয়েকটি গুহা আছে। প্রত্যেকটি পরিপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা এবং চিত্রকর্মে। হিন্দু ধর্মের অনন্য বহুমূল্য নিদর্শন এগুলো।


কিয়ট সাএ গুহা, মায়ানমার

মায়ানমারের এই শান্ত, রহস্যময় গুহাটির অভ্যন্তরে স্থাপিত আছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। ত্যোদশ শতাব্দীতে গুহাটি ব্যবহৃত হত মঙ্গোলদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য লুকিয়ে থাকার স্থান হিসেবে। কিন্তু এর ব্যবহার বিভিন্ন উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। ক্লিফের পাশে আছে একটি মন্দির যা মূলত গুহার প্রবেশ দ্বার। ভিক্ষুরা এই জায়গাটিকে ধ্যানের জন্য ব্যবহার করেন। সুন্দর শান্তিময় গুহাটিতে সময় যেন থমকে আছে। যদিও পর্যটকরা এখানে আসতে পারেন, তবে খুব কম সংখ্যার মানুষকেই এই অনুমতি দেওয়া হয়। এটাই অবশ্য গুহার পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করছে।


মোগাও গ্রটোস, চীন

মোগাও গ্রটোস বা মোগাও গুহাকে বলা হয় হাজার বুদ্ধের গুহা। দুনহাং গুহা এখানকার সবচেয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক অর্থে মূল্যবাণ গুহা। বৌদ্ধ চিত্রকর্মের বিশাল ভান্ডার পাওয়া যায় এখানে। খনন করে আবিষ্কৃত হয়েছে ১ হাজারেরও বেশী মন্দির, যার মধ্যে সবচেয়ে প্রচীনটি নির্মিত হয় ৩৬৬ অব্ধে। এখনও ৪৯২ টি মন্দিরের অস্তিত্ব আছে এবং তাদের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য্যগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে যত্নের সাথে। মন্দিরগুলোয় রং করা স্থাপত্যের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশী। গুহাগুলো ৫০,০০০ ধর্মগ্রন্থ, নথিপত্র, টেক্সটাইল এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ধ্বংসাবশেষের আর্কাইভ।