‘মুখের লালা পেটে ঢুকলে কী রোজা ভাঙে?’ জেনে নিন রোজায় ৬ টি সাধারণ ভুল ধারণা

ইসলামিক শিক্ষা May 19, 2018 2,472
‘মুখের লালা পেটে ঢুকলে কী রোজা ভাঙে?’ জেনে নিন রোজায় ৬ টি সাধারণ ভুল ধারণা

পবিত্র মাহে রমজান শুরু। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়ষ্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর রোজা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়।এসময় মুমিন মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোন ধরণের পানাহার থেকে বিরত থাকেন। রোজা সহজ সরল একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ভুল ধারণা সমাজে বিদ্যমান। যেগুলো নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতভেদও রয়েছে।


ব্রিটেনের অ্যাডভান্সড (অগ্রসর) ইসলামি বিজ্ঞান এবং শারিয়া আইনের সদস্য ইসলামী চিন্তাবিদ সাব্বির হাসান সেরকম প্রচলিত ছয়টি ভুল ধারণা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।


দাঁত ব্রাশ করলে কী রোজা ভেঙে যায়?

অনেকে মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন এটি ভুল ধারণা, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙে না। কারণ পেস্টের স্বাদ পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছায় না। তবে অনেক মানুষ অতি সাবধানী।


তাদের জন্য পরামর্শ হলো- অল্প পরিমাণ পেস্ট নিন। মিন্টের গন্ধ কম এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন। ভয় পেলে গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহার করেন।


মুখের লালা পেটে ঢুকলে কী রোজা ভাঙে?

মুখের লালা পেটে ঢুকলে কোনো অসুবিধা নেই। মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। নিজের লালা খাওয়া খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া।


এতে অবশ্যই রোজা ভাঙে না। বরঞ্চ ইসলামে রোজার সময় মুখের লালা খাওয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজা রাখা অবস্থায় আপনার সঙ্গীকে চুম খেতে পারবেন না, অন্তরঙ্গ হওয়া যাবে না। এর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে সংযত করা। সে কারণেই খাবার, পানীয় বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে।



শুধু খাবার খেলেই নয় অন্য কিছু কারণেও রোজা ভাঙবে

শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙে যাবে তাই নয়। আরও কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিছু অপরাধ জিহ্বা দিয়ে হয়। যেমন কারো সম্পর্কে দুর্নাম রটানো। গুজবে অংশ নেয়া বা কাউকে গালিগালাজ করা। তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।


অসাবধানতা বশত কিছু খেয়ে ফেললে কী রোজা ভেঙে যায়?

আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন তাহলেও আপনার রোজা বৈধ থাকবে। যদি না আপনি বোঝার সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি খেয়ে ফেলেন তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ এই ভুল এড়ানো সম্ভব। এ কারণে রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনি শুধু কুলি করে পানি ফেলে দিন।


রোজা রেখে ওষুধ কী খাওয়া যাবে?

মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সাথে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ।


এমসিবি বলেছে, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ । সেহেরির আগে এবং ইফতারির পর তা খেতে হবে। প্রথম কথা আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কিনা? কুরআনে পরিষ্কার বলা আছে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলুন।


কাদের ওপর রোজা ফরজ?

ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির ওপর রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে।


এমসিবি বলছে – শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। যদি স্বল্প সময়ের জন্য কেউ অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙা রোজাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন। যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো অসুস্থতা থাকে এবং রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে রোজার মাসের প্রতিদিন ফিদা অর্থাৎ গরিবকে কিছু দান করুন। ব্রিটেনে এই ফিদার পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়েছে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ পাউন্ড।