

বনি কাপুর-শ্রীদেবীর ১ম দেখা ২৭ বছর আগে ‘মি.ইন্ডিয়া’-র সেটে। সেটা অনেকেরই জানা। অতীত কিন্তু অন্য কথা বলছে।বনির তার অনেক আগে থেকেই শ্রীদেবীর ওপর প্রচণ্ড দুর্বল ছিলেন।তখনও বিয়ে হয়নি বনির। শ্রীও অবিবাহিত।
১৯৭০-এ শ্রীদেবীর তামিল ছবি মুক্তি পেয়েছে।সেই ছবি দেখে বনির মনে হয়েছিল, এই মেয়ে শুধুই তার।শুধু এই অনুভূতি থেকে বনি ছুটে গিয়েছিলেন চেন্নাইয়ে।শ্রীদেবীর সঙ্গে আলাপ করবেন, তাকে কাছ থেকে দেখবেন বলে।
চেন্নাই গিয়ে দেখলেন, শ্রী সিঙ্গাপুরে শুটিংয়ে ব্যস্ত।খুব মন খারাপ হয়ে গেছিল সেদিন বনির।কিন্তু আশা ছাড়েননি।এর কয়েক মাস পরে শ্রীর প্রথম হিন্দি ছবি ‘সোলভা শাওন’ মুক্তি পায়।ছবিটা দেখার পরেই বনি ঠিক করেন শ্রী এবার তার ছবির নায়িকা হবেন।এই জেদ বনিকে নিয়ে গিয়েছিল শ্রী-র কাছে।শ্রী তখন মুম্বাইয়ের একটি ষ্টুডিওতে ব্যস্ত।বরাবরই খুব চাপা, কম কথার মানুষ ছিলেন শ্রী।
বনি তার সঙ্গে দেখা করে আগামী ছবি ‘মি.ইন্ডিয়া’তে অভিনয়ের কথা বলতেই তিনি বলেন, আমার মা আমার সমস্ত কাজ দেখাশোনা করেন।আপনি আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলুন। মা রাজি হলে আমি কাজ করব।
স্বপ্নে দেখা নায়িকার মুখ থেকে এই কথা শুনে প্রথমে প্রচণ্ড মনমরা হয়ে পড়েছিলেন বনি।তারপরেই সব ঝেড়ে নতুন উদ্যমে জেগে উঠলেন।ঠিক করলেন, মেয়ের সঙ্গে তো কথা হলই।এবার শাশুড়ির সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ সেরে নেওয়া যাক।
এই ভেবে একদিন মুখোমুখি হলেন শ্রীর মায়ের।তাকেও ‘মি.ইন্ডিয়া’য় শ্রী-য়ের অভিনয়ের কথা বললেন।হবু শাশুড়ি তখন মেয়ের জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই বনিকে বললেন, আমার মেয়ের পারিশ্রমিক ১০ লাখ টাকা।তুমি সেটা দিতে পারবে?
বনি দেখলেন, এই সুযোগ হাতছাড়া করলে, শ্রীকে কোনদিন পাবেন না।আর কোনভাবে শাশুড়িকে বাগে আনতে পারলে শ্রীকে পেতে একটুও অসুবিধা হবে না।সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ থেকে চেক বের করে তাতে সই করে হবু শাশুড়ির হাতে তুলে দিলেন।চেকে টাকার অঙ্ক দেখে চমকে গেলেন শাশুড়ি। ১০ নয়, চেকে লেখা ১১ লাখ টাকা!
এরপরে শ্রীদেবীর মা আর না বলেন কী করে? বনি-শ্রীদেবীর গাটছড়া এভাবেই বাঁধা হল ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে! কাজ করছেন দু’জনে একসঙ্গে।নিয়মিত দেখাও হচ্ছে তাদের।কিন্তু শ্রীদেবীর মন পাচ্ছেন কই বনি? নয়িকার মনে তখন একজনের জায়গা। তিনি মিঠুন চক্রবর্তী।
মিঠুনকে চোখে হারান শ্রী।মিঠুনকে ছাড়া তিনি এক মুহূর্ত থাকতে পারেন পারেন না। শ্রী আসার আগে মিঠুনের সঙ্গে দারুণ দোস্তি ছিল বনির। শ্রী আসতেই সেই বন্ধুত্ব ভেঙে খানখান! এরপরেই ১৯৮২তে লুকিয়ে মন্দিরে বিয়ে করেন মিঠুন-শ্রী। বনি নীরব দ্রষ্টা।
স্বভাবিকভাবেই আস্তে আস্তে নিজেকে সামলাতে থাকে বনি।শ্রীর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে মনকে বাড়ির দেখাশোনা পাত্রী মোনাকে বিয়ে করেন। সময়ে ছেলে অর্জুন জন্ম নিল।এদিকে লুকিয়ে ৩ বছর মিঠুনের বউ থাকার পর বিয়ে ভাঙল শ্রীদেবীর।
মিঠুন তখন দু’নৌকোয় পা দিয়ে চলছিলেন।শ্রীদেবীকেও ছাড়তে পারছেন না।যোগিতাবালিকেও ডিভোর্স দিতে পারছেন না।বাধ্য হয়ে ১৯৮৭-তে মিঠুনকে ছেড়ে চলে এলেন শ্রী।মনের দিক থেকে ক্লান্ত শ্রী একদম একা।
ছায়াসঙ্গী মা-ও মেয়েকে সামলাতে পারছেন না।সবার থেকে নিজেকে সিয়ে কিছুটা সময় একা কাটাতে এক সময় লস এঞ্জেলস চলে গেলেন শ্রী। সেখান থেকে সুইজারল্যান্ড। যশ চোপড়ার ‘চাঁদনি’র শুটিং।
নায়িকার এই অজ্ঞাতবাসের কথা জানতেন তার বোন আর বনি।সব ভুলে আবার এগিয়ে এলেন বনি।ঘরে স্ত্রী মোনা থাকতেও আবার শ্রীর প্রেমে তার পাগলপারা দশা। শ্রীকে সামলাতে ছুটলেন সুইজারল্যান্ড।
শ্রীদেবী তখনও ভাবছেন, বনিকে বরণ করবেন কিনা! কিন্তু কপালের লিখন খন্ডাবে কে? এই সময়েই শ্রীর মা প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাধ্য হয়ে চিকিৎসা করাতে শ্রী মাকে নিয়ে ছুটলেন আমেরিকা। সেই মুহূর্তে তার হাতে প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। পাশে দাঁড়াবার মত লোকও নেই।
একা একা কী করবেন, বুঝেই উঠতে পারছেন না তিনি।এমন বিপদের দিনে আবার পাশে এসে দাঁড়ালেন বনি। তার শ্রীকে তো সামলালেন-ই। বিয়ে হবার আগেই হবু শাশুড়ির হাসপাতালের সব খরচ মিটিয়ে দিলেন। শ্রী বুঝলেন, বনি তাকে সত্যি ভালবাসে। এরপর আর কী করে বনিকে না বলেন শ্রীদেবী?







