হে হৃদয় - জীবনানন্দ দাশ

কষ্টের কবিতা January 14, 2018 5,058
হে হৃদয় - জীবনানন্দ দাশ

হে হৃদয়

নিস্তব্ধতা?

চারিদিকে মৃত সব অরণ্যেরা বুঝি?

মাথার ওপরে চাঁদ

চলছে কেবলি মেঘ কেটে পথ খুঁজে-


পেঁচার পাখায়

জোনাকির গায়ে

ঘাসের ওপরে কী যে শিশিরের মতো ধূসরতা

দীপ্ত হয় না কিছু?

ধ্বনিও হয় না আর?


হলুদ দু’-ঠ্যাং তুলে নেচে রোগা শালিখের মতো যেন কথা

ব’লে চলে তবুও জীবনঃ

বয়স তোমার কত? চল্লিশ বছর হল?

প্রণয়ের পালা ঢের এল গেল-

হল না মিলন?


পর্বতের পথে-পথে রৌদ্রে রক্তে অক্লান্ত শফরে

খচ্চরে পিঠে কারা চড়ে?

পতঞ্জলি এসে ব’লে দেবে

প্রভেদ কী যারা শুধু ব’সে থেকে ব্যথা পায় মৃত্যর গহ্বরে

মুখে রক্ত তুলে যারা খচ্চরের পিঠ থেকে পড়ে যায়?


মৃত সব অরণ্যেরা;

আমার এ-জীবনের মৃত অরণ্যেরা বুঝি বলেঃ

কেন যাও পৃথিবীর রৌদ্র কোলাহলে

নিখিল বিষের ভোক্তা নীলকন্ঠ আকাশের নীচে

কেন চ’লে যেতে চাও মিছে;

কোথাও পাবে না কিছু;

মৃত্যুই অনন্ত শান্তি হয়ে

অন্তহীন অন্ধকারে আছে

লীন সব অরণ্যের কাছে।

আমি তবু বলিঃ

এখনও যে-ক’টা দিন বেঁচে আছি সূর্যে-সূর্যে চলি,

দেখা যাক পৃথিবীর ঘাস

সৃষ্টির বিষের বিন্দু আর

নিষ্পেষিত মনুষ্যতার

আঁধারের থেকে আনে কী ক’রে যে মহা-নীলাকাশ,

ভাবা যাক—ভাবা যাক-

ইতিহাস খুঁড়লাই রাশি-রাশি দুঃখের খনি

ভেদ ক’রে শোনা যায় শুশ্রুষার মতো শত-শত

শত জলঝর্ণার ধ্বনি।