স্বর্গের ঝলক- বিরিশিরি

দেখা হয় নাই December 26, 2017 3,566
স্বর্গের ঝলক- বিরিশিরি

সেন্ট মার্টিন্সের গভীর নীল-রঙা পানি, কিংবা জাফলং এর কাঁচের মত স্বচ্ছ পানি দেখেছেন অনেকেই; কিন্তু সবুজ-নীলের মিশেলে অদ্ভুত-রঙা হ্রদের গল্প কি শুনেছেন?

হ্রদটার অবস্থান নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে। চীনামাটির বিশাল পাহাড়ের বুক চিরে জেগে ওঠা নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। তবে মূল হ্রদটি দেখতে যেতে হবে আরেকটু দূরে, বিজয়পুরে।বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এই হ্রদটি। এছাড়াও এখানে আছে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশ, কংশ-টেপা-সোমেশ্বরী নদীর তীরে কাশবন এবং দূরে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি।


বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমী। এখানকার অধিবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর অধিবাসী। তাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যাবে এই একাডেমীর জাদুঘরে এবং তথ্যবহুল দুই লাইব্রেরীতে। সমতলের চেয়ে অনেকটা ব্যতিক্রম তাদের জীবনাচরণ, যা আপনাকে যেমন বিস্মিত করবে, তেমনি মুগ্ধও করবে। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের নাম টুঙ্কা বিপ্লব। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের অনেকগুলো স্মৃতিস্তম্ভ; রয়েছে তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তী কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর্য।


বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়ে যেতে পথে পড়বে সেন্ট যোসেফের গীর্জা। সাজানো-গোছানো, নীরব, চমৎকার একটি গীর্জা এটি। চীনা মাটির পাহাড়ের বুক চিরে নীলচে-সবুজ হ্রদের দিকে তাকালে এক নিমেষে আপনার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপ নীলরঙা সোমেশ্বরী নদী। নদীর নীল জলে সাদা চীনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব তৈরি করে এক অলৌকিক সৌন্দর্য।


এছাড়াও দুর্গাপুরের ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে রানীখংয়ের গীর্জা অবস্থিত। এ পাহাড় চূড়া থেকে বিরিশিরিকে দেখতে অন্যরকম স্বর্গীয় লাগে।এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই রয়েছে প্রাচীন কমলা রানীর দিঘির ধ্বংসাবশেষ।


কীভাবে যাবেনঃ ঢাকার মহাখালী থেকে বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায় দুর্গাপুর এবং বিরিশিরির উদ্দেশ্যে। দিনে ভাড়া ৩০০ টাকা আর রাতে ৪০০ টাকা। রাস্তায় মাঝে মাঝে লোক উঠাবে, তবে রাতে সাধারণত ডাইরেক্ট বাস। চীনা মাটির পাহাড়ে যেতে চাইলে বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকাতে রিকশা ভাড়া করে চলে যেতে পারেন। রিকশাওয়ালাই আপনার গাইড হিসাবে কাজ করবে। মোটর সাইকেলে করেও যেতে পারেন, তাতে সময় কম লাগবে। তবে এক্ষেত্রে পয়সা বেশি লাগবে, যদিও বেশিক্ষণ ঘুরতে পারবেন না।


তবে আর দেরী কেন? চলে আসুন নেত্রকোনার বিরিশিরি, উপভোগ করুন মর্ত্যের বুকে স্বর্গের পরশ।