রোনালদো-মেসির হাই ফাইভ

মজার সবকিছু December 12, 2017 1,666
রোনালদো-মেসির হাই ফাইভ

পাঁচ বছর আগের কথা। সময় তখন মেসির। সময় তখন মেসিভক্তদের। মেসির শোকেসে তখন ব্যালন ডি’অর ছিল ৪টা, রোনালদোর ১টা। ফলে ফুটবলীয় আড্ডায় মেসিভক্তদের গলাই বেশি শোনা যেত। আর এখন সেই ৪-১ দাঁড়িয়েছে ৫-৫-এ। শুধু তা-ই নয়, ক্রিস্টোয়ানো রোনালদো জাতীয় দলের হয়ে ইউরোও জিতেছেন গত বছর। বর্তমান সময়টা তাই তাঁরই। এখনকার আড্ডাটা তাহলে কেমন হবে? ভেবেছেন মাসউদ ফোরকান

রোনালদোভক্ত: কী মামা, তোদের ভিনগ্রহের ফুটবলারের খবর কী? ব্যালন ডি’অর তো ধরে ফেললাম। এখন তো রোনালদোরও পাঁচটা।


মেসিভক্ত: দেখ, মেসি নিজের জন্য খেলে না। দলের প্রয়োজনে খেলে। ওর কাছে ব্যালন ডি’অরের চেয়ে দলের ট্রফি বড়।


রোনালদোভক্ত: তা–ই নাকি! বল দেখি, জাতীয় দলের হয়ে মেসি কী কী জিতছে? ও না না, অলিম্পিক ট্রফি জিতছিল একবার। সরি, ভুলে গেছিলাম।


মেসিভক্ত: রোনালদোর মুরিদ আসছে। মেসির চেয়ে রোনালদোর বয়স দুই বছর বেশি। যে কাজ মেসি অনেক আগে করে দেখাইছে, ওই লেভেলে আসতেই তোদের রোনালদোর ২০১৭ লেগে গেল। বয়সটা দেখবা না?


রোনালদোভক্ত: মেসিকে দেখলেই তো এখন চাচার বয়সী মনে হয়। ব্রাজিলের ছিল কাকা আর আর্জেন্টিনার আছে চাচা। হা হা হা। আচ্ছা, আমারে তাহলে বল, মেসির বয়স কত হইলে জাতীয় দলের হয়ে একটা টুর্নামেন্ট জিতবে?


মেসিভক্ত: ক্লাবের হয়ে যা জিতছে, মেসির আর কী জিততে হবে? বিশ্বকাপ যে পাইতেই হবে, এমন কোনো কথা আছে? আর আমরা তো তা-ও ফাইনাল খেলছি জীবনে, তোরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবছিস কখনো?


রোনালদোভক্ত: হ রে, তোদের দৌড় ওই ফাইনাল পর্যন্তই। কোপা আমেরিকার ফাইনালেও বাদ যাস, বিশ্বকাপের ফাইনালে তো উঠছিলি চামে। ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানেও মেসি বউ-বাচ্চা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে যায়। ভাবটা এমন, যেন পুরস্কারটা ওর হাতেই উঠবে। গিয়া দেখে প্রতিবার খালি রোনালদোই পায়। আহা রে!


মেসিভক্ত: জাতীয় দলের ট্রফি নিয়ে বেশি বকরবকর করিস না। পর্তুগাল ইউরো জিতছে ঠিকই, কিন্তু কখন? যখন রোনালদো মাঠ থেকে বেঞ্চে গিয়ে বসল। ও মাঠে থাকলে কি আর পর্তুগাল ওই ম্যাচ জেতে? দেখ মামা, ইতিহাস ইতিহাসই। লুকায়ছুপায় রাখতে পারবি না কিছু।


রোনালদোভক্ত: তোদের আর কী কমু! মেসির ওপর কে নজর দিল কে জানে! তোরা ওর কপালে একটা টিপ দিয়ে রাখলে তো আর রোনালদো পাঁচটা ব্যালন ডি’অরের ধারেকাছেই আসত না। কী বলিস?


মেসিভক্ত: হ। তোরা দে টিপ। লা লিগায় এইবার কার কী অবস্থা খবর রাখস তো? নাকি বছরের ওই একটা ব্যালন ডি’অরের অনুষ্ঠানই দেখস?


রোনালদোভক্ত: আমি লা লিগাও দেখি, চ্যাম্পিয়নস লিগও দেখি, সবই দেখি। বাচ্চাকাচ্চারা গোল দেয় লা লিগায় আর বসেরা গোল দেয় চ্যাম্পিয়নস লিগে। তোরে আর কী কমু! সব দিকেই তো পিছায়া পড়তাছস। রোনালদো এক ঢিলে দুই পাখি মারে, আর তোদের মেসি? রোনালদোর পিচ্চিপাচ্চা এখন চারটা আর মেসির দুইটা। মামা, কার ভাগ্য যে কখন ঘুইরা যায়, বলা যায় না। এই কারণে অহংকার করতে হয় না।


মেসিভক্ত: শোন, সামনে বিশ্বকাপ আসতেছে। স্পেনের গ্রুপে পড়ছস। গ্রুপ পর্ব থেকে আবার বিদায় নিস না কিন্তু। আমরা ফাইনাল খেলি আর তোরা যখন গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়স, তখন কষ্ট লাগে দেখতে। যত যাই কস, তোরা অ্যাট লিস্ট কোয়ার্টার ফাইনাল ডিজার্ভ করিস, এটা মানি।


রোনালদোভক্ত: একবার চামে দিয়া ফাইনালে উঠছস, তাতেই এত ফুটানি! তোরা আবার নাইজেরিয়ার বিপক্ষে হাইরা বসিস না কিন্তু। শুনলাম, কয়দিন আগে নাকি ৪-২ গোলে হারছস।


মেসিভক্ত: সময় আসলে দেখিস। এইবার নেইমার যদি মাঝখান দিয়ে আবার বাঁ হাত ঢুকায় দেয়, পরের বার মেসি-রোনালদো কারোরই ট্রফি পাওয়া লাগবে না।


রোনালদোভক্ত: হ, এইটা ঠিকই কইছস। নেইমারকেও মেসি আটকায় রাখতে পারল না। অন্য ক্লাবে গেলোগা। না থাক, আজকে আর ঝগড়া করুম না। অনেক হইছে। সামনের বছরটা গুরুত্বপূর্ণ রে মামা। যে জিতব, তারে ধরা কঠিন হয়ে যাইব। অবশ্য নেইমার জিতলে ৫-৫ সমতাটাও থাকব দুজনের। ইন্টারেস্টিং হইব বিষয়টা।


মেসিভক্ত: হ, তা ঠিক। তবে এইবারের বিশ্বকাপই মেসির শেষ সুযোগ। আমরা আশাবাদী।


রোনালদোভক্ত: তোদের আশা দেখলে হাসিও পায়, দুঃখও লাগে। বেচারা।


মেসিভক্ত: ভালো থাকিস। পরে কথা হইব। যাই গা।


রোনালদোভক্ত: আচ্ছা, ভালো থাকিস।