চীন, ভারত ও আমেরিকায় কি নবী এসেছেন?

ইসলামিক সংবাদ December 7, 2017 4,623
চীন, ভারত ও আমেরিকায় কি নবী এসেছেন?

পৃথিবীতে মহান আল্লাহর রীতি হলো, তিনি প্রতিটি যুগে, প্রত্যেক জাতির জন্য সতর্ককারী পাঠিয়েছেন। কখনো কখনো সে সতর্ককারী নবী হিসেবে আগমন করেছেন।


কখনো রাসুল হিসেবে আগমন করেছেন। কখনো দাঈ বা ধর্ম প্রচারক হিসেবে আগমন করেছেন। তিনি দাঈ বা ধর্ম প্রচারক, তাঁর জন্য নবী হওয়া জরুরি নয়। ইরশাদ হয়েছে,

وَجَاء مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَى قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ


অর্থ : অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এলো। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা রাসুলদের অনুসরণ করো। ' (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ২০)


এই ব্যক্তি নবী বা রাসুল ছিলেন না, কিন্তু ধর্ম প্রচারক ছিলেন। হজরত লুকমান (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। বিশুদ্ধ অভিমত হলো, তিনি কোনো নবী ছিলেন না। কিন্তু তিনি তাঁর ছেলেকে তাওহিদের শিক্ষা দিয়েছেন।


وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ


অর্থ : ‌'স্মরণ করো, যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল, হে বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শরিক কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মহাঅন্যায়। ' (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৩)


সুতরাং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে মহান আল্লাহ প্রতিটি জাতির উদ্দেশে পথপ্রদর্শক পাঠিয়েছেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে কোরআনে এসেছে,


وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم


مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ


অর্থ : ‌'আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই এই মর্মে রাসুল প্রেরণ করেছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে দূরে থাকো। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত দিয়েছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো মিথ্যারোপকারীদের কী পরিণতি হয়েছে। ' (সুরা নাহল, আয়াত : ৩৬)


وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَى حَتَّى يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولًا يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَمَا كُنَّا


.مُهْلِكِي الْقُرَى إِلَّا وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ


অর্থ : 'তোমার পালনকর্তা জনপদগুলো ধ্বংসকারী নন, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রাসুল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াত পাঠ করেন। আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে। ' (সুরা কাসাস, আয়াত : ৫৯)


وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ مِنْهُم مَّن قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُم مَّن لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ فَإِذَا جَاء أَمْرُ اللَّهِ قُضِيَ بِالْحَقِّ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْمُبْطِلُونَ


অর্থ : 'আমি তোমার আগে অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি, তাদের কারো কারো ঘটনা তোমার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারো কারো ঘটনা তোমার কাছে বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো নিদর্শন নিয়ে আসা কোরো রাসুলের কাজ নয়। যখন আল্লাহর আদেশ আসবে, তখন ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ' (সুরা মুমিন, আয়াত : ৭৮)


إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خلَا فِيهَا نَذِيرٌ


অর্থ : 'আমি তোমাকে সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোনো জাতি নেই, যার মধ্যে সতর্ককারী আসেনি। ' (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৪)


وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْلا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ


অর্থ : কাফিররা বলে, 'তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?' তোমার কাজ তো (আজাবের ব্যাপারে) ভয় প্রদর্শন করাই। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে। (সুরা রাদ, আয়াত : ৭)


তাহলে প্রশ্ন জাগে, ভারতবর্ষে, চীনে, আমেরিকায় ও আফ্রিকায় কোনো নবী এসেছে? বড় বড় সব নবী কেন মধ্যপ্রাচ্যে এসেছেন? কোনো কোনো মানুষ না বোঝে বলে বেড়ান যে নাউজুবিল্লাহ কোরআনে ভুল আছে! কিভাবে? কারণ কোনো বলা হয়েছে, সব জাতির জন্য নবী এসেছে। কিন্ত বাঙালি জাতির জন্য তো কোনো নবী আসেনি! আমেরিকায় তো কোনো নবী আসেনি!


এগুলো হঠকারিতামূলক প্রশ্ন। এসব প্রশ্ন চরম অজ্ঞতা থেকে উৎসারিত। প্রথম কথা হলো,


এ বিষয়ে বর্ণিত আয়াতগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এখানে কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এক. রাসুল। দুই. হাদি বা প্রথপ্রদর্শক। তিন. বাশির ও নাজির বা সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী।


‘রাসুল’ শব্দের অর্থ প্রতিনিধি। পরিভাষায় আসমানি গ্রন্থ ও বিশেষ বিধান নিয়ে আসা নবীদের ‘রাসুল’ বলা হয়।


শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী, পবিত্র কোরআনে নবীদের পাশাপাশি কোনো কোনো ফেরেশতার জন্য ‘রাসুল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ


অর্থ : ‌'নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রাসুলের আনীত। ' (সুরা হাক্বকাহ, আয়াত : ৪০)


সর্বসম্মতিক্রমে এ আয়াতে রাসুল মানে জিবরিল (আ.)। তিনিই এই কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবী (সা.)-এর কাছে নিয়ে এসেছেন।


সুতরাং এসব আয়াতে ‘রাসুল’ শব্দ যদি নবীদের জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে আয়াতের অর্থ হলো, ইবাদতের আদেশপ্রাপ্ত প্রধান দুই জাতি তথা মানুষ ও জিন জাতির কাছে আল্লাহর নবী পাঠানো হয়েছে। সে হিসেবে মানুষ একটি জাতি। জিন একটি জাতি।


এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে,


يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاء يَوْمِكُمْ هَـذَا قَالُواْ شَهِدْنَا عَلَى أَنفُسِنَا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُواْ عَلَى أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُواْ كَافِرِينَ


অর্থ : ‘(কিয়ামতের দিন বলা হবে) হে জিন ও মানব জাতি, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুলরা আগমন করেনি, যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াত বর্ণনা করত ও তোমাদের আজকের এই দিনের মুখোমুখি হওয়া সম্পর্কে সতর্ক করত? তারা বলবে, আমরা নিজ অপরাধ স্বীকার করে নিলাম। বস্তুত পার্থিব জীবন তাদের প্রতারিত করেছে। আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্যও দেবে যে তারা কাফির ছিল। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৩০)


এ আয়াত থেকে জানা যায়, মানবজাতির উদ্দেশে নবী হিসেবে যেমন মহামানব প্রেরিত হয়েছে, তেমনি জিন জাতির উদ্দেশে নবী হিসেবে জিন প্রেরিত হয়েছে। তবে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি গোটা বিশ্বের মানব ও জিন জাতির রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।


পক্ষান্তরে এসব আয়াতে যদি ‘রাসুল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা হয়, তাহলে আয়াতের মূল অর্থ হলো, প্রত্যেক জাতির জন্য মহান আল্লাহর বাণী প্রচারক ও সতর্ককারী পাঠানো হয়েছে। এই অর্থে বলা যায়, মানবজাতির মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত সব জাতিসত্তার মধ্যে আল্লাহর বাণী প্রচারক ও সতর্ককারী পাঠানো হয়েছে, যদিও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার উদ্দেশে পৃথকভাবে নবী পাঠানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবিশ্বাসীরা বলে, তার প্রতি [মহানবী (সা.)] তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? তুমি তো শুধু সতর্ককারী। আর প্রত্যেক জাতির জন্যই সতর্ককারী আছে। ’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ৭)


সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা ও আফ্রিকায় যদি কোনো নবী নাও পাঠানো হয়ে থাকে, তথাপি কোরআনের বক্তব্য সত্য। কেননা এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে কোনো ধর্মপ্রচারক যাননি।


দ্বিতীয়ত, একসময় গোটা মানবজাতি একজাতি ছিল। পরে মানুষ বহু জাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইরশাদ হয়েছে,


كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ


لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُواْ فِيهِ


অর্থ : 'সব মানুষ একই জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ নবীদের পাঠিয়েছেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাঁদের সঙ্গে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মধ্যে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। ' (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৩)


হজরত নূহ (আ.)-এর যুগ পর্যন্ত মানব জাতি একই ভূখন্ডে ছিল। সেটা ছিল মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। তাদের জন্য পৃথক পৃথক নবী এসেছেন। এতে কারো দ্বিমত নেই।


কোরআনের যেসব আয়াতে প্রত্যেক জাতির জন্য রাসুল আসার কথা বলা হয়েছে, সেটা ওইসব জাতির জন্য প্রযোজ্য। কাজেই সব জাতির জন্য রাসুল আসার কথা চিরন্তন সত্য।


একই সঙ্গে মানুষের বসতির কেন্দ্রবিন্দু মধ্যপ্রাচ্য থাকায় সেখানেই বেশির ভাগ নবী এসেছেন।


তৃতীয়ত, আলাদা আলাদাভাবে যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে দেখা যায়, ভারতের হিন্দু ধর্ম, চীনের কনফুসিয়ান ধর্ম ইত্যাদির অনেক বক্তব্য আসমানি ধর্মগুলোর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায়।


হিন্দুরা মূর্তি পূজা করলেও একজন স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। বহু বিষয়ে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের সাদৃশ্য আছে। এ বিষয়ে বাংলা ভাষায়ও বই আছে।


সিরাত বিশেষজ্ঞ আল্লামা শিবলি নোমানি ও সৈয়দ সুলাইমান নদভি লিখেন,


'তালিমে মুহাম্মদী (সা.)-এর বিধান মেতাবেক এই বিশ্বাস করাও জরুরি যে দুনিয়ার বড় বড় জাতি ও দেশ যেমন-চীন, ইরান , হিন্দুস্থানেও রাসুলুল্লাহ(সা.)-এর আগে আল্লাহর প্রেরিত নবীদের আগমন ঘটেছিল। আর এজন্য এসব অঞ্চলের অধিবাসীরা যেসব মনীষীদের পরম শ্রদ্ধা করে ও নিজেদের ধর্মকে যাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে, তাঁদের সততা, সত্যবাদিতার সার্বিক অস্বীকার কোনো মুসলমানই করতে পারে না। এই নিরিখে কোনো কোনো বিজ্ঞজন হিন্দুস্তানের কৃষ্ণ ও রামকে এবং ইরানের জরতস্তকে, এমনকি কেউ কেউ বুদ্ধকেও পয়গম্বর বলে অভিমত প্রকাশ করেছে। মোটকথা তাদের কিংবা অন্য কারোরও নবী হওয়ার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সন্দেহ করা যায় না। কিন্তু প্রকৃতই তারা নবী ছিলেন কিনা, তা নিরূপণ করার মানদণ্ড আল কোরআনেই সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে। ' (সীরাতুন নবী, খ–৬, পৃষ্ঠা-১৬৯, দি তাজ পাবলিশিং হাউজ, প্রকাশ ১৯৯১ইং)


চীনে কনফুসিয়ানিজমের সূচনা চীনের ইতিহাসের স্প্রিং অ্যান্ড অটাম পিরিয়ডে (৭৭১-৪৭৬ খ্রিষ্টপূর্ব), কারো কারো মতে, ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্ব পর্যন্ত), একটি ‘নৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক শিক্ষা’ হিসেবে। কনফুসিয়ানিজম আলোকপাত করে তিয়ান তথা চীনা উপাখ্যান, দর্শন ও ধর্মের মুখ্য ধারণা ও গডদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ওপর।


কনফুসিয়াসের কয়েকটি উপদেশ এমন : এক. 'আঘাতকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে প্রতিদান দাও, আর দয়ার প্রতিদান দাও দয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে । '


অন্যদিকে কোরআনে এসেছে, হাল জাযাউল ইহসানে ইল্লাল ইহসান। অর্থাৎ অনুগ্রহের প্রতিদান অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছুই নয়।


হাদিস শরিফে এসেছে, সিল মান কাতাআকা, ওয়াফু আম্মান জলামাকা ওয়া আহসিন ইলা মান আসাআ ইলাইকা। অর্থাৎ যে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থির রাখো, যে তোমার ওপর জুলুম করেছে, তাকে ক্ষমা করে দাও, আর তোমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে, তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।


দুই. 'যেটা তুমি নিজের ক্ষেত্রে ঘটতে দেখতে চাও না, সেটা অন্যের ক্ষেত্রেও ঘটিয়ো না । ' অন্যদিকে হাদিসে এসেছে,


لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ


হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। ' (মুসলিম : ১/১৭ হাদিস : ৪৫, আহমাদ ১২৮০১, ১৩৮৭৫) (আধুনিক প্রকাশনী : ১২ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ১২)


তিন. 'নীতিবানের সঙ্গ ছাড়া চরিত্র গঠন সম্ভব নয়। ' অন্যদিকে কোরআনে এসেছে,


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ


অর্থ : 'হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ও সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। ' (সুরা তাওবা, আয়াত :১১৯)।


অন্য আয়াতে এ দোয়া শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে,


رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ


অর্থ : 'হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সব গোনাহ মাফ করুন এবং আমাদের সব দোষত্রুটি মুছে দিন, আর আমাদের মৃত্যু দিন নেক লোকদের সঙ্গে। ' (সুরা ইমরান, আয়াত :১৯৩)


(সূত্র : প্রাচীন চিনা দর্শন লওস ও কনফুসিয়াস, হেলাল উদ্দিন আহমেদ)


দেখুন, এসব কথা ধর্মীয় মূল্যবোধপূর্ণ কথা। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন সংস্কৃতি কনফুসিয়ানিজমের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে আছে : চীন, তাইওয়ান, হংকং, ম্যাকাও, কোরিয়া, জাপান ও ভিয়েতনাম। একই সাথে চীনা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বিভিন্ন জাতিও এর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। যেমন-সিঙ্গাপুর।


কাজেই এসব মনীষী হতে পারেন আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণী প্রচার করেছেন। কিন্তু আমরা অকাট্যভাবে বলতে পারব না যে তাঁরা নবী ছিলেন। কেননা এ বিষয়ে পর্যাপ্ত দলিল-দস্তাবেজ নেই। মানুষ ইতিহাস লেখা শুরু করেছে এই সেদিন। আগের ইতিহাসের খুব সামান্যই মানুষ জানে। কোনো একটা দেশ এমন পাওয়া যাবে না, দেশের মানুষের বংশ পরম্পরা আদি পিতা থেকে বর্তমান জন্য তারা জানেন। মানুষের জ্ঞান এতই সীমিত যে, সে তার পূর্বপুরুষের বংশ তালিকাও জানে না। সেটাও সে সংরক্ষণ করতে পারেনি। আরবরা এ বিষয়ে এগিয়ে ছিল, কিন্তু সেটাও স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। বর্তমানে তো সেগুলোর চর্চাই হয় না।


Leopold Pospisil একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম The Kapauku Papuans Of West Guinea. পাপুয়া নিউ গিনির একটা অঞ্চলে বসবাসকারী কিছু প্রস্তর যুগে থেকে যাওয়া মানুষদের ব্যপারে এই বইটি লেখা হয়েছে। তাদের বলা হয় কাফাউকু জাতি। এরা পশ্চিমা সভ্যতার প্রভাবমুক্ত ছিল অনেক বছর পর্যন্ত। এরা সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সনে পশ্চিমা সভ্যতার সংস্পর্শে আসে। তাদের বেশির ভাগ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উপরে অবস্থিত, যার চারপাশ দুর্গম পর্বতসঙ্কুল আর খাড়া গিরিপথে ঘেরা। ওই বইয়ে তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে বলা হয়েছে,


The Kapauku has an interesting world view. If we have to compare their religion versus Islam!


অর্থ : কাফাউকুদের বিশ্বদর্শন আছে, তাদের ধর্মবিশ্বাসকে আমি ইসলামের সঙ্গে তুলনা করতে পারি।


The universe itself and all existence was Ebijata, "designed by Ugatame", the Creator.


অর্থ : মহাবিশ্ব আর এর অভ্যন্তরস্থ সব বস্তু ছিল Ebijata যার কারিগর ছিলেন Ugatame বা স্রষ্টা।


তাই বলা যায়, পৃথিবীর ইতিহাস যথাযথ সংরক্ষণ থাকলে জানা যেত, কোনো জাতির কাছে কোন নবী এসেছেন।


লেখক : তাফসিরকারক ও সাংবাদিক


[email protected]