বরফাবৃত পানির নিচে কচ্ছপেরা ঘুমিয়ে শীত কাটায় কীভাবে?

জানা অজানা November 28, 2017 1,967
বরফাবৃত পানির নিচে কচ্ছপেরা ঘুমিয়ে শীত কাটায় কীভাবে?

আপনি যদি এমন কোনো পুকুরে ডুবে যান যেখানকার তাপমাত্রা বরফ জমাট বাধার তাপমাত্রার একটু ওপরে অবস্থান করছে। আর যার ওপরটা ঢেকে রয়েছে বরফের আস্তরণে ১০০ দিন ধরে। আপনি নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুবরণ করবেন। কার‌ণ আপনি কচ্ছপের মতো অতটা শীতল নন। আর তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, আপনি পশ্চাদ্দেশ দিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করতে পারবেন না!


কিন্তু কচ্ছপরা সেটাই করতে পারে। আর কচ্ছপদের সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ বা বিস্ময়কর হয়ে ওঠার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি কারণ। কচ্ছপের দেহ পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে নিজের দেহের তাপমাত্রাকে অ্যাডজাস্ট করে নেয়। পুকুরের তাপমাত্রা যদি হয় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাহলে কচ্ছপের দেহের তাপমাত্রাও হবে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


কিন্তু কচ্ছপদের তো ফুসফুস আছে এবং তারা নিঃশ্বাসে বাতাস গ্রহণে করে। তাহলে কীভাবে তারা বেঁচে থাকে বরফে আবৃত একটি পুকুরের পানির নিচে? কীভাবে তারা বরফের আস্তরণ ভেদ করে ওপরে উঠে আসে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য? এর উত্তর আছে কচ্ছপের দেহের তাপমাত্রা এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়ার সম্পর্কের মধ্যে।


ঠাণ্ডা পানিতে একটি ঠাণ্ডা কচ্ছপের বিপাকীয় প্রক্রিয়াও একটু ধীর গতির হয়ে থাকে। এটি যত ঠাণ্ডা হয় ততই এর বিপাকীয় প্রক্রিয়ার গতিও আরো ধীর হয়ে আসে। ফলে এর শক্তি এবং অক্সিজেনের চাহিদাও কমে আসে।


কচ্ছপরা যখন হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রায় যায় তখন তারা জমা করা শক্তির ওপর নির্ভর করে। আর নিশ্বাঃস নেয় পানিতে থাকা অক্সিজেন থেকে। কচ্ছপরা পানি থেকে কীভাবে অক্সিজেন সংগ্রহ করে? দেহের উপরিতল দিয়ে পানিকে দ্রুত গতিতে বাহিত করার মাধ্যমে।


কচ্ছপদের দেহের পৃষ্ঠতলের সঙ্গে তাদের রক্তের শিরা-উপশিরার ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। আর কচ্ছপদের পশ্চাদ্দেশ তাদের রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যুক্ত। সেখান দিয়েই সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে তারা! একে বলা হয় পায়ুপথ শ্বসন।


তবে ঠাণ্ডা পানিতে কচ্ছপদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপরা বরফজমাট পানিতে বাঁচতে পারে না। তারা তাদের দেহে বরফ ক্রিস্টাল নিয়ে বাঁচতে পারে না। এ কারণেই মিঠা পানির কচ্ছপরা মিঠা পানিতেই শীতনিদ্রা যাপন করে। তারা কখনোই বরফজমাট তাপমাত্রার নিচে যায় না।


বরফে আবৃত পুকুর কচ্ছপদের জন্য দুটি সমস্যা হাজির করে। তারা নিঃশ্বাস গ্রহণের জন্য পানির ওপরে উঠতে পারে না। আর সেখানে অন্যান্য প্রাণীরাও আছে যারা পানিতে থাকা অক্সিজেন ভোগ করে ফেলে। যে অক্সিজেন গ্রীষ্মের সময় তৈরি হয় অ্যাকুয়াটিক গাছের দ্বারা।


কিছু কিছু কচ্ছপ পুকুরের অক্সিজেন কমে যাওয়া সত্ত্বেও টিকে থাকতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু কচ্ছপ আছে তা করতে পারে না। কিছু কচ্ছপ আছে যারা নিজেদেরকে এমন কোনো বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত করতে পারে যার আর অক্সিজেন দরকার হয় না। এই সক্ষমতা খুবই বিস্ময়কর। কিন্তু এতে বিপদও আছে। এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা চলতে থাকলে তাদের টিস্যুতে এসিড জমতে থাকে।


বসন্তে এই কচ্ছপরা যখন ওপরে উঠে আসে তখন ইতিমধ্যেই তাদের মাংসপেশিতে খিল ধরে গেছে। ফলে তারা দ্রুত সূর্যের আলোতে নিজেদের দেহের তাপমাত্রা বাড়াতে থাকে। যাতে তাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়াও দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং এসিডের বাইপ্রডাক্ট দূর হয়ে যায়। আর তখন এরা দ্রুত হাঁটতেও পারে না। ফলে অন্য প্রাণিরা তাদের ওপর হামলা চালায় এবং অন্য কোনো বিপর্যয়ে পড়ে তারা।


সূত্র: লাইভ সায়েন্স