পোকা ধ্বংস করলো বয়কটের দলিল

ইসলামিক ঘটনা April 20, 2016 1,462
পোকা ধ্বংস করলো বয়কটের দলিল

নববী ষষ্ঠ সনে কুরাইশরা মহানবী ও তাঁর গোত্রকে বয়কট করে সকলকে একসাথে ধ্বংস করে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো।


এজন্য মক্কার সকল গোত্র একত্রিত হয়ে একটি দলিল সম্পাদন করলো।


দলিলে বলা হলোঃ “মক্কার কোন ব্যক্তি বনু হাশিম গোত্রের সাথে আত্মীয়তা করবেনা, তাদের কাছে কোন বস্তু ক্রয় বিক্রয় করবেনা, তাদের কাছে খাদ্য প্রেরণ করবে না।


যতদিন পর্যন্ত তারা অর্থাৎ বনু হাশিম রাসুলকে(সা) হত্যার জন্য কুরাইশদের হাতে সমর্পণ না করবে ততদিন পর্যন্ত এই চুক্তি বলবৎ থাকবে।”


মহানবী বনু হাশিমের সমস্ত লোকজন সহ শি’আবে আবু তালিব গিরি উপত্যকায় আশ্রয় গ্রহণ করলেন।


সুদীর্ঘ তিন বছর তাঁরা অবরুদ্ধ অবস্থায় এই উপত্যকায় অবস্থান করলেন।


এই বন্দী জীবন এত কঠোর ছিল যে, জঠরজ্বালা নিবারণের জন্য তাদেরকে গাছের পাতা খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে হয়েছে। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস এক দিনের ঘটনা বলেছেনঃ সেদিন রাত্রিতে তিনি একটি শুকনা চামড়া আগুনে ঝলসিয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করেছিলেন।


ছোট ছোট শিশুরা যখন ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে চিৎকার করত, তখন বাহির থেকে কুরাইশরা তা শুনে আনন্দ নৃত্য করত।


আবার কোন কোন সহৃদয় ব্যক্তি এতে দুঃখিত হত।


একদিন হযরত খাদিজার(রা) ভ্রাতুষ্পুত্র হাকিম ইবনে হিজাম স্বীয় দানের মাধ্যমে হযরত খাদিজার(রা) নিকট সামান্য পরিমাণ গম পাঠাচ্ছিল।


কিন্তু পথের মধ্যে আবু জাহল তা দেখতে পেয়ে ছিনিয়ে নেবার উপক্রম করলে ঘটনাক্রমে আবুল বুখতারি সেখানে এসে উপস্থিত হলেন।


তিনি যদিও কাফির ছিলেন, তবু অন্তরে তার দয়ামায়া ছিল। তিনি বললেন, ফুফুর কাছে সামান্য খাবার পাঠাচ্ছে তাতে তুমি বাধা দিচ্ছ কেন?


ধীরে ধীরে খোদ কুরাইশদের মধ্যেই চুক্তিভঙ্গের জন্য আন্দোলন শুরু হয়ে গেল।


হিশাম ইবনে আমর নামক জনৈক ব্যক্তি বনু হাশিমের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন এবং স্বীয় গোত্রের মধ্যেও অত্যন্ত বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি গোপনে তাদের কাছে খাদ্য পাঠাতেন। তিনিই একদিন আবদুল মুত্তালিবের দৌহিত্র জুহাইরের নিকট গমন করলেন, “কি হে জুহাইর! তোমার কি পছন্দ হয় যে, তুমি প্রচুর পরিমানে পানাহার করবে ও যাবতীয় আনন্দ উপভোগ করবে, আর তোমার মামার ভাগ্যে এক দানাও জুটবে না।”


জুহাইর বললেন, “কি করবো? আমি একা, যদি আমাকে সমর্থন করবার মত একজন লোকও পেতাম, তাহলে ঐ অন্যায় চুক্তিপত্র অবশ্যই ছিড়ে ফেলতাম।”


হিশাম বললেন, “আমি তোমাদের সাথে আছি।”


অতঃপর তারা উভয়ে মিলে মুত’ইম ইবনে আদির কাছে উপস্থিত হলেন।


অপরদিকে আবুল বুখতারি ইবনে হিশাম এবং যুম’আ ইবনুল আসওয়াদও তাঁদেরকে সমর্থন দান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন।


একদিন সকলে মিলে কাবার অঙ্গনে গমন করলেন। সেখানে জুহাইর সমবেত জনতাকে সম্বোধনপূর্বক জিজ্ঞাসা করলেন,


“হে মক্কাবাসী! এটা কেমন কথা যে, আমরা সুখে শান্তিতে দিন যাপন করব, আর বনু হাশিমদের ভাগ্যে সামান্য খাবারও জুটবে না? খোদার কসম!


এই অন্যায় চুক্তিপত্র ছিঁড়ে না ফেলা পর্যন্ত আমি শান্ত হব না।”


এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আবু জাহল দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলো, “সাবধান, এই চুক্তিপত্রের বিরুদ্ধে কাকেও কিছু করতে দেয়া হবে না।”


যুম’আ দাঁড়িয়ে পড়লেন, “তুমি মিথ্যাবাদী। এই চুক্তিপত্র সম্পাদনের সময় আমরা রাজি ছিলাম না।”


যুম’আর কথা শেষ হতেই আবুল বুখতারি দাঁড়িয়ে বলল, “কি ছাইভস্ম লেখা হয়েছে এতে, আমরা মোটেই খুশি নই, ওসব লেখাটেখা আমরা মানিও না।”


বুখতারি থামতেই মুতইম উঠে বলল, “তোমরা দুজন ঠিকই বলেছ। ভিন্ন কথা যে বলবে সে –ই হবে মিথ্যাবাদী।” হিশাম তাকে সমর্থন করল।


আবু জাহল বলল, মনে হয়, তোমরা আগে-ভাগে জোট বেঁধে এসেছ।


এসব বাক-বিতণ্ডার মধ্যে মুতইম লাফ দিয়ে উঠে কাবার দেওয়াল থেকে বয়কটের দলিল নামিয়ে আনল ছিঁড়ে ফেলার জন্যে।


কিন্তু ছিঁড়ে ফেলতে হলো না। আল্লাহর পোকা-সৈনিকরা অনেক আগেই ধ্বংস করেছিল অন্যায় দলিলটিকে।


দেখা গেল দলিলের সব শব্দ, সব কথা পোকায় খেয়ে ফেলেছে, অক্ষত রয়েছে একমাত্র ‘বিসমিকা আল্লাহুম্মা’ শব্দ।