রসগোল্লা কিভাবে এলো, প্রথম তৈরি হয়েছিল কোথায়?

জানা অজানা November 19, 2017 1,765
রসগোল্লা কিভাবে এলো, প্রথম তৈরি হয়েছিল কোথায়?

চিনির সিরা ও ছানা দিয়ে তৈরি ধবধবে সাদা রঙের মিষ্টান্ন রসগোল্লা। শুভ উপলক্ষ্য, উৎসব-পার্বণ, অতিথি আপ্যায়ণ ও রসনা বিলাসের উপকরণ হিসেবে এর জুড়ি নেই। কিন্তু এই রসগোল্লা প্রথম কোথায় তৈরি হয়েছিল- এটি নিয়ে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিল ভারতের দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িশ্যা। এভাবে স্বত্ব নিয়ে লড়াইয়ের আড়াই বছর পর মঙ্গলবার রসগোল্লার জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।


কিন্তু এই রসগোল্লার আবিষ্কারক কে, কখন ও কোথায় এর আবিষ্কার হয়েছিল- এসব নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে।


সবচেয়ে প্রচলিত মত হলো- কলকাতার সাবেক চিনি ব্যবসায়ী নবীন চন্দ্র দাস রসগোল্লার আবিষ্কারক। তার পঞ্চম প্রজন্মের উত্তরসূরি ধীমান দাসের মতে, রসগোল্লার আবিষ্কার নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই।


তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নবীন চন্দ্র দাস ছিলেন একজন চিনি ব্যবসায়ী। ১৮৬৪ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোতে একটি মিষ্টির দোকান দেন তিনি।


দোকানটি বেশিদিন না চলায় ১৮৬৬ সালে কলকাতার বাগবাজারে আরেকটি মিষ্টির দোকান দেন নবীন। এই দোকানটির প্রধান মিষ্টি ছিল সন্দেশ। এক পর্যায়ে কলকাতার খানদানি বণিকদের জন্য নতুন মিষ্টি তৈরির কথা ভাবতে থাকেন নবীন। এবং দুই বছরের চেষ্টায় রসগোল্লা তৈরি করেন।


ধীমান দাসের মতে, কলকাতার তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যক্তি ভগবান দাস বাগলার একদিন বাগবাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঘোড়ায় টানা জুড়ি গাড়িতে তার সঙ্গে ছিল ভগবান দাসের ছেলে।


ছেলে পানি পান করতে চাইলে নবীনের মিষ্টির দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করান ভগবান। এ সময় ছেলেকে এক গ্লাস পানি ও একটি রসগোল্লা খেতে দিলে সে খুবই মজা করে খায়।


এরপর বাপ-বেটা এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এ গল্প কলকাতার ছড়িয়ে পড়ে আর রসগোল্লাও বিখ্যাত হয়ে যায়।


তবে বাংলাদেশের অনেক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ব্যবসায়ী ও রসগোল্লা ভক্তের অনেকে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের কারিগরদের হাতেই রসগোল্লার জন্ম। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে ও অতিথি আপ্যায়ণে মিষ্টি পরিবেশনের বিষয়টি বহুকাল ধরেই বাঙ্গালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নানান প্রকারের মিষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো রসগোল্লা।


খাদ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক শওকত ওসমান বিবিসিকে জানান, লিখিত কোনো প্রমাণ না থাকলেও, তাদের ধারণা, ষষ্ঠ শতকে দক্ষিণাঞ্চলীয় পটুয়াখালীতে পর্তুগিজরা দুধ থেকে পনির ও সন্দেশ তৈরি করতো। সেগুলো দিয়েই বাঙালি স্ত্রীরা রসগোল্লা বা এ ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করেছেন।


তিনি বলেন, রসগোল্লা আবিষ্কারক হিসেবে কলকাতায় যে নবীন চন্দ্রের কথা বলা হয়, তিনি বরিশাল অঞ্চলের লোক।


এক সময় তিনি পটুয়াখালীর কাছেই থাকতেন। তার হাত ধরে শিল্পটি সেখানে (কলকাতায়) যেতে পারে।


১৪৫ বছর ধরে মিষ্টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মরণ চাঁদ গ্র্যান্ড সন্স। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকটি শাখা রয়েছে ঢাকায়।


ফার্মগেট শাখার ব্যবস্থাপক রবীন্দ্রনাথ রায়ও বিবিসিকে বলেন, রসগোল্লা বাংলাদেশের কারিগরদেরই একটি অসাধারণ উদ্ভাবন।


আর উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, রসগোল্লার আদি উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে।


বিশেষ করে, পর্তুগিজদের সময় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ময়রারা ছানা, চিনি, দুধ ও সুজি দিয়ে গোলাকার এক ধরণের মিষ্টান্ন তৈরি করেছিলেন। সেটাই ক্ষীরমোহন বা রসগোল্লা নামে পরিচিত।


পরবর্তীতে বরিশাল এলাকার হিন্দু ময়রাদের বংশধর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতা কিংবা উড়িশ্যায় বিস্তার লাভ করে।


কলকাতার আজকাল পত্রিকাও রসগোল্লার আবিষ্কার বিষয়ে একই তথ্য দিয়েছে।


তবে আজকাল রসগোল্লা আবিষ্কারের বিষয়ে আরেকটি মত উল্লেখ করেছে। পত্রিকাটির একটি সংবাদে বলা হয়, কেউ কেউ মনে করেন, রানাঘাটের হারাধন ময়রা প্রথম রসগোল্লা বানান। তার দোকানে একবার চিনির রসে দুর্ঘটনাক্রমে কিছু ছানার গোল্লা পড়ে যায়। আর সেটাই হয়ে যায় রসগোল্লা।


তবে রসগোল্লাকে তাদের ৮০০ বছরের পুরনো নিজস্ব আবিষ্কার বলে দাবি করে উড়িশ্যা। তাদের প্রচলিত মত, রথযাত্রা শেষে সাত দিন খালার বাড়ি কাটিয়ে মন্দিরে ফেরার সময় রসগোল্লা ছিলো জগন্নাথ দেবের ‘পাসওয়ার্ড’। স্ত্রী লক্ষ্মীর মান ভাঙিয়ে মন্দিরে ঢুকতে হয় তাকে। হাঁড়িভরা রসগোল্লা দিয়ে বৌয়ের মন গলান তিনি।