দারুচিনি কী সত্যিই ওজন কমাতে কার্যকরী?

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস November 14, 2017 1,160
দারুচিনি কী সত্যিই ওজন কমাতে কার্যকরী?

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দারুচিনি বিশ্বজুড়ে বেশ খ্যাত। ওজন কমানোর ব্যাপার আসলে সকলেই এটি একবার হলেও ট্রাই করে দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু দারুচিনি যে সত্যিই ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এর সত্যতা কতটুকু? নাকি এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা?


পাঠকসমাজে দারুচিনি সম্পর্কে বেশ মিশ্র এক ধরনের অনুভূতি কাজ করে। সেগুলো নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। চলুন তবে কালক্ষেপণ না করে জেনে আসা যাক-


দারুচিনি কী


খাবার এবং ঔষধের কাজে ব্যবহৃত হয় দারুচিনি। আমরা এটি ‘সিনামোমাম’ গাছের বাকল থেকে পেয়ে থাকি। এ বাকলটি চাষ করা হয় এবং শুকোনো হয় যার ফলে এটি বেঁকে যায়। উক্ত বেঁকে যাওয়া অংশগুলোকেই দারুচিনি স্টিক বলা হয়। দারুচিনি সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় পাউডার কিংবা গুঁড়ো আকারে। তবে এটি স্টিক এবং পাউডার উভয় পদ্ধতিতেই পাওয়া যায়। ভেজাল এড়ানোর জন্যে এটি গুঁড়ো আকারে কেনার চাইতে স্টিক আকারে কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।


এটির গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী


দারুচিনি সিনামালডিহাইড, সিনামাইল অ্যাসটেট এবং সিনামাইল অ্যালকোহলে পরিপূর্ণ। এ উপাদানগুলোই দারুচিনির তীব্র স্বাদ এবং গন্ধের জন্য দায়ী।


পুষ্টিগত দিক দিয়ে দারুচিনিতে কিন্তু কোন ভিটামিন ও মিনারেল নেই তবে এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। ২৬ ধরনের হার্ব এবং মসলা দিয়ে করা এক ধরনের পরীক্ষায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণে দ্বিতীয় স্থানে ছিলো দারুচিনি, যেটি কী না রসুন কিংবা অরিগ্যানোর চাইতেও ওপরে। শরীরের ধকল কমানোর পাশাপাশি এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।


এটি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। প্রথমত এর উপকারী এনজাইমসমূহ শর্করা জাতীয় খাদ্য হজমের প্রক্রিয়া কমিয়ে দেয়। এতে করে পাকস্থলী দীর্ঘ সময় পরিপূর্ণ থাকে এবং পুষ্টি ভালোমত গৃহীত হয়।


দারুচিনি রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতেও সাহায্য করে। সেজন্যে ডায়াবেটিস আছে এমন কোন রোগী যদি প্রত্যহ এটি গ্রহণ করেন, তিনি খুব লাভবান হবেন।


সেই সঙ্গে এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা, কোষ পরিবহন, গ্লুকোজ শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়, খাদ্য থেকে অধিক শক্তি গ্রহণে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, দারুচিনির গুণাগুণ আমাদের শরীরে বারো ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তবে অল্প একটু দারুচিনিই আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজন হবে।


কতটুকু গ্রহণ করা প্রয়োজন


দারুচিনির এক ধরনের তীব্র স্বাদ আছে। যে দারুচিনি যত খাঁটি তার স্বাদ তত তীব্র। সুতরাং, একেবারে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলেই যথেষ্ট। দুটি কারণে আপনার অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয় এটি।


এক, দারুচিনিতে কুমারিন নামে এক ধরনের যৌগ থাকে যেটী মানব শরীরের জন্য বিষাক্ত। কয়েকটি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে এটি ইঁদুরের যকৃতের জন্য মারাত্মক, সুতরাং মানুষের শরীরেও বিরুপ প্রভাব ফেলার জন্য দায়ী।


ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথোরিটি জানিয়েছে যে ৭৫ কেজি ওজনের একজন মানুষের দৈনিক আধা চা চামচ (আড়াই গ্রাম) দারুচিনি খাওয়াই যথেষ্ট।


দুই, বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে অতিরিক্ত পরিমাণে দারুচিনি গ্রহণ করলে এটির উপকারিতা অনেকাংশে কমে যায়। দৈনিক এক গ্রাম গ্রহণ করলেই লক্ষণীয় ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা যায়।


তাছাড়া, কেউ যদি ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন গ্রহণ করে থাকেন কিংবা অন্যান্য ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে তাকে বেশ যত্নশীল হতে হবে কারণ অতিরিক্ত দারুচিনি গ্রহণ হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।


কীভাবে গ্রহণ করবেন?


খাদ্যতালিকায় দারুচিনি অন্তর্ভূক্ত করা বেশ সহজ। আপনি যদি এর স্বাদ পছন্দ করে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই! মসলা হবার দরুণ এটি মিষ্টি কিংবা ঝাল যেকোণ খাবারেই যোগ করা যায়। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো চা, কফি, সবুজ চা, স্মুদি, হট চকোলেট এবং স্যুপের সঙ্গে মিশিয়ে দারুচিনি খাওয়া।


সকালের নাস্তার সঙ্গে এটি আরো ভালোভাবে যায় যেমন ফল, পরিজ, টক দই, ওটমিল এমনকি ডিমের সঙ্গেও। আপনি যদি সকালে দারুচিনি গ্রহণ করতে পারেন তবে সারাদিন এর উপকার উপভোগ করতে পারবেন।


তো, এখন থেকে শুরু করছেন তো প্রতিদিন খানিকটা দারুচিনি গ্রহণ করা? খেয়াল করবেন যেন কোনভাবেই এক-আড়াই গ্রামের অধিক গ্রহণ না করে ফেলেন।


সূত্র: Femina