পুরুষের ক্যানসারের যেসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস October 26, 2017 731
পুরুষের ক্যানসারের যেসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না

অনেক পুরুষের ক্যানসারের লক্ষণ অন্যান্য রোগ বা শারীরিক সমস্যার উপসর্গকে অনুকরণ করতে পারে এবং অনেক পুরুষ শরীরে উপসর্গ খুঁজে পেলেও ডাক্তার দেখাতে দেরি করে ফেলেন।


এভাবে হয়তো আপনি ক্যানসারের উপসর্গকে উপেক্ষা করছেন। তাই শরীরকে জানা গুরুত্বপূর্ণ।


পুরুষদের সম্ভাব্য ক্যানসারের ১৩ লক্ষণ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে ৬টি লক্ষণ তুলে ধরা হলো। শরীরে এসব পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অথবা এসবের যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ ধরতে পারলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।


১. মূত্রত্যাগে সমস্যা

আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে মূত্রত্যাগে কাঠিন্যতার সম্মুখীন হন অথবা যদি আপনার প্রস্রাব বা বীর্যের সঙ্গে রক্ত বের হয় অথবা আপনার যদি আনেক্সপ্লেনড ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যা থাকে, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এসব প্রস্টেট ক্যানসার বা মূত্রথলি ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যানসার সেন্টারের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. মোশে শাইক বলেন, দুর্ভাগ্যবশত চরম পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত প্রস্টেট ক্যানসারের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ডা. শাইক এমন রোগীদের দেখেন যারা মেডিক্যাল সেবা অনুসন্ধানের আগে ছয়মাস পর্যন্ত এসব উপসর্গ উপেক্ষা করেন। কিন্তু আপনি যত দ্রুত এসব লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করবেন, আপনার জন্য তত ভালো হবে।


২. অণ্ডকোষে পরিবর্তন

নারীদের যেমন তাদের স্তনের ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত, ঠিক তেমনি পুরুষদের উচিত হবে তাদের টেস্টিকল বা অণ্ডকোষের প্রতি লক্ষ্য রাখা। ক্যানসার ট্রিটমেন্ট সেন্টার অব আমেরিকার অনকোলজিস্ট বা ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. মৌরি মার্কম্যানের মতে, ‘একটি বা উভয় অণ্ডকোষের আকারের পরিবর্তন, অণ্ডকোষ স্ফীত হওয়া বা ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত ভারী মনে হওয়া অথবা অণ্ডকোষে লাম্প বা পিণ্ড হওয়া- হতে পারে টেস্টিকিউলার ক্যানসার বা অণ্ডকোষ ক্যানসারের উপসর্গ।’ টেস্টিকিউলার ক্যানসার তরুণ এবং মধ্যবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে খুব কমন।


৩. ত্বকে লক্ষণীয় পরিবর্তন

স্কিন ক্যানসার ফাউন্ডেশনের মতে, ‘স্কিন ক্যানসার বা ত্বক ক্যানসারের বিকাশ এবং এ ক্যানসারে মৃত্যু নারীদের চেয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে। ম্যালানোমা রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ হচ্ছে তরুণবয়স্ক এবং ম্যালানোমা জনিত মৃত্যুর ৬০ শতাংশ হয় তরুণবয়স্কদের। কেন? ন্যাশনাল সান প্রোটেকশন অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় পাওয়া যায়, পুরুষরা সূর্যের আলোতে নারীদের তুলনায় বেশি সময় কাটায় এবং তারা সানস্ক্রিন কম ব্যবহার করে; পুরুষদের স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক ও কান ঢাকার জন্য কম চুল থাকে এবং তাদের এই দুই অংশ ক্যানসার হওয়ার প্রবণতাযুক্ত। এছাড়াও গতানুগতিকভাবে পুরুষরা সাধারণত ডাক্তারের কাছে নারীদের চেয়ে কম যায়। তাই তাদের ক্যানসার শুরুতেই ধরা পড়ে না। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির চিফ ক্যানসার কন্ট্রোল অফিসার ডা. রিচ ওয়েন্ডার বলেন, স্কিন ক্যানসারের প্রারম্ভিক সতর্কীকরণ উপসর্গসমূহ খুব সহজেই উপেক্ষিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘অনেক লোক ছুলি, আঁচিল বা তিল এবং ডার্কার এজ স্পটকে (বয়সজনিত বা সূর্যালোকজনিত কালো দাগ) স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়।’


আপনি যদি দেখতে পান যে কোনো আঁচিল বা তিল কালো হচ্ছে বা বড় হচ্ছে বা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাহলে তা পরীক্ষা করুন। ডা. ওয়েন্ডার বলেন, মেলানোমার ক্ষেত্রে দাগ অস্বাভাবিক আকৃতির হয়, বিশেষ করে কালো রঙয়ের হয়- এমনকি একই দাগে দুই রকম রঙও হতে পারে। তিনি আরো বলেন, মেলানোমা অন্যান্য স্কিন ক্যানসারের তুলনায় কম কমন, কিন্তু প্রাণঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি যোগ করেন, অনেক ম্যালানোমা দীর্ঘসময় ধরে থাকে যা আক্রমণাত্মক নয় এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্ণয় করতে পারলে সহজে প্রতিরোধ করা যায়।


৪. মুখে ফোঁড়া বা ব্যথা

সেরে যায় প্রকৃতির ফোঁড়া বা ফোস্কা কিংবা ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার পর যে দাঁত ব্যথা সেরে যায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যদি আপনি ব্যথাযুক্ত ও সেরে যাচ্ছে না এমন ফোঁড়া, মাড়ি বা জিহ্বায় সাদা বা লাল দাগ, চোয়ালের অসাড়তা ও স্ফীতি লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে বুঝবেন যে এসব উপসর্গ সম্ভবত মুখ ক্যানসারের ইঙ্গিত করছে। ডা. মার্কম্যান বলেন, যেসব পুরুষেরা ধূমপান করে বা চুয়িং টোবাকো ব্যবহার করে তাদের মধ্যে মুখ ক্যানসারের বিকাশের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ‘বেশিরভাগ পুরুষ নারীদের চেয়ে বেশি ধূমপান করে। ধূমপায়ী এবং চুয়িং টোবাকো ব্যবহারকারীদের দ্রুত সেরে যায় না জাতীয় মুখের ফোঁড়া নিয়ে অধূমপায়ীদের চেয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত।’


৫. দীর্ঘস্থায়ী কাশি

যে কাশি অন্যান্য উপসর্গ (যেমন- ঠান্ডা বা অ্যালার্জি) ছাড়া তিন সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লেগে থাকে তা ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে। লিউকেমিয়ার কারণেও ব্রংকাইটিসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ডা. মার্কম্যান বলেন, যদি কাশি আপনার স্বাভাবিক কাশির চেয়ে ভিন্ন হয় এবং তা যদি লেগেই থাকে অথবা কাশির সঙ্গে রক্ত আসলে তা ফুসফুস ক্যানসারের নির্দেশক হতে পারে। ফুসফুস ক্যানসারের কিছু রোগী বুকের ব্যথা কাঁধ বা বাহুর নিচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন।


৬. মলে রক্ত

হেমোরয়েড বা অর্শ অথবা বিনাইন বা বিপজ্জনক নয় এমন কোনো সমস্যার কারণে মলের সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে, কিন্তু এটি কোলন ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছর বয়স থেকে রুটিন স্ক্রিনিং শুরু হয়, কিন্তু এ রোগ বর্তমানে অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রেও বেশ কমন- যে কারণে সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তার দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। ডা. ওয়েন্ডার বলেন, অর্শ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে রক্ত পড়া বন্ধ করা যায় এবং এ সমস্যা আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক লোক (বিশেষ করে অল্পবয়সীরা) নিজেদের আশ্বস্ত করে যে ত্রুটিপূর্ণ কিছু হচ্ছে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগের সময় রক্ত বের হওয়া কখনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, তাই ডাক্তারি পরীক্ষা করুন।