সৌরজগতের যে ৭ স্থানে প্রাণের সম্ভাবনা

বিজ্ঞান জগৎ September 24, 2017 1,508
সৌরজগতের যে ৭ স্থানে প্রাণের সম্ভাবনা

আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের বাইরে জীবন্ত প্রাণীর সন্ধান করা হচ্ছে, এটা প্রমাণ করার জন্য যে, এই মহাবিশ্বে আমরা এক নই।


যদিও এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব মেলেনি কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার তথ্য আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সৌরজগতের বাইরে কোথায় আরো ভালো ভাবে নজর দিতে হবে।


সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনস্টিটিউটের (এসইটিআই) একজন সিনিয়র জোতির্বিজ্ঞানী সেথ সোস্টাক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পৃথিবীর কাছাকাছি একাধিক স্থান রয়েছে, যেখানে কিছু ধরনের মাইক্রোবিয়াল লাইফ বা অনুজীব বিদ্যমান।


ফিউচারিজমকে সোস্টাক বলেন, ‘আমাদের সৌরজগতে কমপক্ষে আরো ৭টি স্থান রয়েছে, যেখানে রকেট নিয়ে যাওয়া যেতে পারে এবং সেখানে মাইক্রোবিয়াল লাইফ থাকতে পারে।’


তিনি আরো বলেন করেন, পৃথিবীর বাইরের এই অনুজীব অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুব শিগগির বুদ্ধিমান জীবের সন্ধান মিলতে পারে।


চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পৃথিবী ছাড়াও মাইক্রোবিয়াল লাইফ থাকতে পারে সৌরজগতের এমন ৭টি স্থান সম্পর্কে।


লাল গ্রহ এবং বৃহস্পতির চাঁদ

সোস্টাক বলেন, লাল গ্রহ অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহ অবশ্যই এর মধ্যে অন্যতম। সম্ভবত মঙ্গল গ্রহের ধূলার নিচে অনুজীব লুকিয়ে রয়েছে, গ্রহটির পৃষ্ঠের ৩০ মিটার নিচে বা আরো বেশি গভীরে তরল জল থাকতে পারে। মঙ্গলের পাশাপাশি সম্ভাব্য আরো তিনটি স্থান হচ্ছে, বৃহস্পতি গ্রহের ৩টি উপগ্রহ। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউরোপা। বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার পৃষ্ঠের নিচে মাইক্রোবিয়াল লাইফ উপযোগী সাগর রয়েছে। সম্ভাব্য আরেকটি উপগ্রহ হচ্ছে গ্যানিমেড, এটি পুরো সৌরজগতের মধ্যে সবচেয়ে বড় উপগ্রহ এবং পৃথিবীর সাগরের মতোই এখানে সাগর রয়েছে কিন্তু তা পুরু বরফে ঢাকা স্তরের নিচে। এছাড়া বৃহস্পতির ক্যালিস্টো উপগ্রহে সাগর ও বায়ুমণ্ডল রয়েছে। বৃহস্পতির মোট উপগ্রহের সংখ্যা ৬৭টি।


শনির চাঁদ এবং আমাদের প্রিয় বামন গ্রহ

শনি গ্রহে ৬২টি উপগ্রহের মধ্যে অনুজীব থাকতে পারে এমন দুইটি উপগ্রহের মধ্যে একটি হচ্ছে টাইটান, এখানে প্রাকৃতির গ্যাসের তরল হ্রদ রয়েছে। আরেকটি উপগ্রহ হচ্ছে এনসেলাডাস, এটি আরো বেশি অনুকূল পরিবেশের স্থান। এখানে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া আরো সহজ হতে পারে কারণ এই উপগ্রহের পুরু বরফের তলায় লুকিয়ে থাকা এই মিথেন ও ইথেনের তরল সাগরগুলোর একেবারে নিচে প্রচন্ড তাপে জল বাস্পীভূত ধোঁয়ার মতো উপরে উঠে আসছে। প্রাণ না থাকলে বা কোনো জৈবনিক ক্রিয়া না ঘটলে এমনটা হতো না।


সোস্টাক বলেন, এনসেলাডাসে পা রাখার প্রয়োজন নেই কিংবা গর্ত খুঁড়ার প্রয়োজন নেই। কেবল কিছু তরল নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসলেই সম্ভবত দেখা যাবে যে, প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে।


সম্ভাব্য সর্বশেষ স্থানটি হচ্ছে, বামনগ্রহ প্লুটো। সোস্টাক বলেন, ‘প্লুটোর পৃষ্ঠের নিচে প্রচুর তরল জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর বাইরে তরল জল রয়েছে এমন কোনো স্থান, তরল জলের প্রকার যেমনই হোক না কেন, সম্ভবত সেসব স্থানে মাইক্রোবাইল লাইফ রয়েছে। তবে আমি নির্দিষ্ট করে বলছি না যে, গ্রহটি প্লুটো।’


সৌরজগতের এই ৭টি স্থানে সম্ভবত সঠিক জৈবিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যা তাদের খাদ্য বা শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে, পাশাপাশি তরল ফর্ম হিসেবেও। মাইক্রোবাইল লাইফ বজায় রাখার জন্য শুধু পানি প্রয়োজনীয় নয়। সোস্টাক বলেন, ‘আপনার এমন কিছু প্রয়োজন যা আপনাকে খাদ্য সরবরাহ করে মৌলিকভাবে এবং জীবন তৈরি করার সুযোগ দেয়, যা সবশেষে আসলে সঠিক জৈব রসায়ন।’


বুদ্ধিমান অ্যালিয়েন লাইফ কবে নাগাদ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে সোস্টাক বলেন, তার বিশ্বাস আগামী দুই দশকের মধ্যেই হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্যালাক্সিতে ট্রিলিয়ন পরিমাণ গ্রহ রয়েছে। মহাকাশে ট্রিলিয়ন পরিমাণ গ্যালাক্সি রয়েছে। প্রতিটি গ্যালাক্সি কয়েক ট্রিলিয়ন গ্রহ রয়েছে। এই অগণিত গ্রহের মধ্যে যদি কোনো প্রাণের অস্তিত্ব না পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের এই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব সত্যিই বিশেষ কিছু।’