বিরক্তিকর মানুষের অভ্যাস (পর্ব-১)

লাইফ স্টাইল August 3, 2017 995
বিরক্তিকর মানুষের অভ্যাস (পর্ব-১)

জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কিংবা কর্মস্থলে সহকর্মীর সঙ্গে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই কথা যেন শেষ হয়ে যায়।


এর ফলে নিজের মধ্যেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। মনে হতে পারে যে, আমি আসলে ততটা আকর্ষণীয় না যতটা আসলে আমি ভাবি। কিংবা আমি কি খুব বেশি বিরক্তিকর?


না, আপনাকে বিরক্তিকর মানুষের আখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। সবারই আকর্ষণীয় হওয়ার যোগ্যতা বা গুণ আছে। কিন্তু আপনার মনে যদি ভয়ের সঞ্চার হয় যে, আপনি বিরক্তি মানুষের হিসেবে পরিণত হতে যাচ্ছেন কিনা, তাহলে নিচের লক্ষণগুলো থেকে জেনে নিন যে, কোন অভ্যাসের কারণে একজন মানুষ আসলে খুবই বিরক্তিকর হিসেবে গণ্য হয়। চরম বিরক্তিকর মানুষের ১৫ অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে আজ ৭টি অভ্যাস তুলে ধরা হল।


১. অসংগতিপূর্ণ কথোপকথন : একজন বিরক্তিকর মানুষ কথা বলা এবং শোনা- এই দুটির তাল ঠিক রাখতে পারেন না। কথা বলা এবং শোনায় অসামঞ্জস্য থাকে। কুয়োরা ব্যবহারকারী জ্যাকবেনেট এই অসঙ্গতিকে ‘কথোপকথনের অসমতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, একজন বিরক্তিকর মানুষ অনবরত কথা বলতেই থাকেন কিংবা একেবারেই চুপ হয়ে যান।


২. অন্যের ইশারায় ভ্রুক্ষেপ না করা : আপনি যদি অতিমাত্রায় বিরক্তিকর হন তাহলে কথোপকথনের সময় অপর ব্যক্তির ইশারা বুঝতে পারবেন না। গ্যারিক নামক এক কুয়োরা ব্যবহারকারীর মতে, ‘আপনি যদি ক্রমাগত আবোল-তাবোল বলতেই থাকেন এবং অন্যের ইশারা না বোঝার ভান করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি ব্যক্তি হিসেবে খুবই বিরক্তিকর।’


৩. বিরক্তিকর লোকেরা অন্যকে হাসাতে পারে না : হাস্যরস ‘জ্ঞানীয় নমনীয়তা’ দেখায়। কথোপকথনে হাসিখুশি থাকলে সেটি অনেকটাই ফলপ্রসু হয়। বিভিন্ন ধারণা থেকে একটি ধারণা বা একটি ঘটনা মূল্যায়ন করার ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু কাঠখোট্টা বা বিরক্তিকর মানুষদের মধ্যে এই গুণটি নেই।


৪. কথোপকথনে বিরক্তিকর মানুষের কিছু বলার থাকে না : এক প্রকার বিরক্তিকর মানুষ রয়েছেন, যারা নিজেদেরকে সবার মাঝে আকর্ষণীয় মনে করেন। আরেক দল বিরক্তিকর মানুষ আছে যারা ভাবেন, আমার কিইবা বলার আছে।


৫. বিরক্তিকর ব্যক্তিরা সবসময় একই কাজ করে : বিরক্তিকর ব্যক্তিরা সবসময় একই ধরনের কাজ করে থাকেন। তাদের জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাবে গেলে তারা শেষ পর্যন্ত আর তাদের সঙ্গে মিলতে পারে না। ওয়ারউইক নামক একজন বলেন, ‘আমার কাছে তখনি একজন ব্যক্তিকে বিরক্তিকর মনে হয় যখন সে একই রকম জীবনযাপন করে।’ জীবনযাপনে ব্যতিক্রমতা আসলেই আপনার কথোপকথনের পর্যায় পরিবর্তিত হবে। ক্লাবে যেয়েও আপনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।


৬. নিজস্ব মতামত বলে কিছু নেই : বিরক্তিকর মানুষদের নিজেদের মতামত বলতে কিছু নেই। বলা হয়ে থাকে, যদি আপনি আপনার আশেপাশে পরিবেশ প্রকৃতি ও এই পৃথিবীকে নিয়ে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা করতে না পারেন তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনার জানানোর মতো কিছুই থাকবে না। মারান্দামার্ভিন বলেন, যেসকল মানুষ অতীত থেকে গৃহীত শিক্ষাকে গ্রহণ করে না তারাই আসলে বিরক্তিকর মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়। তারা কোনো বিষয়ে তাদের স্বল্প জ্ঞানের আলোকে মতামত দিয়ে থাকে।


৭. ভালো গল্প বলার অক্ষমতা : ডেভচেং এর মতে, ‘কাউকে কোনো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে চাইলে বা তাকে সাহস দিতে চাইলে তাকে কোনো গল্প বা সফলতার ঘটনা শোনাতে হবে। যাতে করে সে তার কাজটি করার সাহস সঞ্চয় করতে পারে। আর অবশ্যই সে গল্পের ঘটনার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’


২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা ভালো গল্প বলতে পারে তারা নারীদের কাছে অতিমাত্রায় আকর্ষণীয়। ডেভচেং বলেন, আপনাকে অন্যদের জীবনের গল্পকেও তুলে ধরতে হবে। এবং সে সকল গল্প বলার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।


৮. নতুন কিছু যোগ করার প্রবণতা : আমাদের মস্তিস্কে পরিচালিত এক গবেষণায় জানা যায় যে, আমাদের মস্তিস্ক নতুন কিছু খোঁজার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকে। প্রায় ৮ লক্ষাধিক বছর ধরে বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটিও বিবর্তিত হয়ে আসছে। আপনি যদি আপনার কথাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চান তাহলে আপনার বক্তব্যে নতুন কিছু সংযোগ করতে হবে। তা না হলে শ্রোতারা কেউ অনুপ্রাণিত হবে না।


স্ট্যানহেওয়ার্ড বলেন, ‘আমার কাছে বিরক্তিকর মানুষ হচ্ছে তারা যাদের কাছ থেকে আমি নতুন কিছু শিখতে পারব না।’