সূর্য কত বড়

বিজ্ঞান জগৎ July 29, 2017 2,330
সূর্য কত বড়

আমাদের সৌরজগতের মধ্যে যত দূরেই চোখ রাখা হোক না কেন, সূর্যের চেয়ে বড় কিছু নেই- এ বিষয়ে কোনো বিজ্ঞানী বিতর্কে যেতে চাইবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক নতুন একটি গবেষণার তথ্য ইঙ্গিত দিয়েছে যে, সূর্যের আকৃতি নিয়ে এত দিনের যে ধারণা, সূর্য তার চেয়েও বেশি বড় হতে পারে।


এখন পর্যন্ত, সূর্যের আকারের অনুমান ২০১৫ সালের একটি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা ১৮৯১ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্থার অয়ভার প্রকাশ করেছিলেন।


ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞরা সৌর ব্যাসার্ধকে ৬৯৫,৭০০ কি.মি. হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।


কিন্তু এখন, কিছু বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে, জাভিয়ার জুবিয়ার (যিনি সূর্যগ্রহণের মডেল তৈরি করেছেন যা গুগল ম্যাপস সফটওয়্যারের সঙ্গে কাজ করে) এবং নাসা গবেষক আর্নি রাইট। সূর্যগ্রহণের সময় যে ছায়া ছড়িয়ে পড়ে, তা গবেষণা করে উভয় গবেষক বলেছেন, সূর্যের আকার নিয়ে এত দিনের ধারণা সঠিক নয়।


গবেষকরা বলেন, এ বছরের ২১ আগস্ট ঐতিহাসিক যে সূর্যগ্রহণ ঘটতে যাচ্ছে তার মাধ্যমে প্রমাণ করা যেতে পারে যে, গত ২০০ বছর ধরে প্রচলিত সূর্যের আকারের ধারণা ভুল। ১৮৯১ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্থার অয়ভার সূর্যের আকার প্রথম অনুমান করেছিলেন। সূর্যের আলোকময় বহিরাবরণ (যা প্রত্যক্ষ করা যায়) হিসাব করে তিনি জানিয়েছিলেন- সূর্যের ব্যাসার্ধ ৬৯৬,০০০ কিলোমিটার। তার এই তথ্য ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা সৌর ব্যাসার্ধকে ৬৯৫,৭০০ কিলোমিটারে আপডেট করেন সূর্য-পর্যবেক্ষণ উপগ্রহের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে।


কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাটিতে বলা হচ্ছে, আগের দুটি অনুমানই খুব ছোট। সূর্য আরো অনেক বেশি বড় হতে পারে। জাভিয়ার জুবিয়ার তার গবেষণায় লক্ষ্য করেছেন যে, বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূর্যগ্রহণের সময় তোলা ছবিগুলোর সঙ্গে আগের অনুমানের তথ্যের গরমিল রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ের সূর্যগ্রহণের মডেলের সঙ্গে আগের পূর্বাভাসের মডেল যাচাই করে ছায়ার দৈর্ঘ্যে গরমিল খুঁজে পেয়েছেন। জুবিয়ার বলেন, সূর্যের আকার পরিমাপে নিশ্চয় কোথাও ভুল রয়েছে, আপাতত এতটুকুই শুধু আমি বলতে পারি। একই প্রমাণ পেয়েছেন নাসার গবেষক আর্নি রাইটও।


গবেষকরা প্রত্যাশা করছেন, এ বছরের আসন্ন সূর্যগ্রহণ যা সম্ভবত ইতিহাসে সর্বাধিক দেখা সৌরগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করবে, তা বিজ্ঞানীদের সূর্যের আকার যাচাইয়ের একটা সুযোগ করে দেবে। বিজ্ঞানীদের একটি দল ইতিমধ্যে এবারের সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে সময় চাঁদ সূর্যকে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের জন্য আচ্ছাদিত করবে, সেসময় যেন আমাদের একমাত্র নক্ষত্রটির একটি নির্ভরযোগ্য পরিমাপ বের করাটা সম্ভব হয়।