চিনি খাচ্ছেন? জেনে নিন এর ক্ষতিকারক দিকগুলো

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস July 26, 2017 777
চিনি খাচ্ছেন? জেনে নিন এর ক্ষতিকারক দিকগুলো

অতিরিক্ত চিনি খাওয়া যেকোনো ব্যক্তির জন্যই ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মতে একজন স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন গড়ে ২৫ গ্রাম বা ছয় চা চামচ পরিমাণ চিনি খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন এর চেয়ে বেশি চিনি খেলে তা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ডেকে আনতে পারে। দেখে নিন অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক।


ক্যাভিটি : চিনি খাওয়ার ফলে দেহের যেসব ক্ষতি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো দাঁতের ক্ষতি। দাঁতের এনামেল নষ্ট করার জন্য অন্যতম দায়ী উপাদান চিনি। এটি দাঁত ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য জোগায়।


ক্ষুধা বেড়ে যায় : দেহের ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করার একটি উপাদান হলো লেপটিন। খাওয়ার পর এ উপাদানটি জানিয়ে দেয় কখন আর খাবারের দরকার নেই। কিন্তু অতিরিক্ত চিনি খেলে লেপটিন প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়। ফলে পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার পরও ক্ষুধা থেকে যায়। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।


ওজন বৃদ্ধি : চিনি খেলে দেহের ওজন বাড়ে, এ কথা এখন আর কারো জানতে বাকি নেই। চিনিতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি। আর এ ক্যালরিই ওজন বাড়াতে মূল ভূমিকা রাখে।


ইনসুলিন প্রতিরোধ : খাবারকে দেহের ব্যবহারযোগ্য এনার্জিতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে ইনসুলিন হরমোন। দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে গেলে হরমোনটির প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। দেহের ইনসুলিন প্রতিরোধী ক্ষমতা কমে গেলে অবসন্নতা, ক্ষুধা, মস্তিষ্কে বিভ্রাট ও উচ্চরক্তচাপ তৈরি হয়।


ডায়াবেটিস : চিনি বেশি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৫১ হাজারেরও বেশি নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রায় ৮ বছর ধরে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চিনি বেশি খেলে তাতে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।


বাজে কোলেস্টেরল বাড়ায় : বেশি চিনি খেলে শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়।


লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া : মাত্রাতিরিক্ত চিনি খাওয়া অভ্যাস থাকলে তা লিভারকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। আর এর ফলে লিভারের কিছু জটিলতা তৈরি হয়। পরিশোধিত চিনিতে ফ্রুকটোজ বেশি থাকে। ফ্রুকটোজকে একমাত্র পরিশোধিত করতে পারে লিভার। লিভারে গিয়ে এই ফুকটোজ চর্বিতে পরিণত হয়। ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এতে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার : গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে তার ফলে প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে উচ্চমাত্রায় চিনি খাওয়ার অভ্যাস যাদের রয়েছে তাদের মধ্যে এ ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি।


কিডনির রোগ : উচ্চমাত্রায় চিনি গ্রহণ করা হলে তার ফলে কিডনির নানা রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে চিনিযুক্ত কোমল পানীয় এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।


উচ্চরক্তচাপ : শুধু লবণ নয়, বেশি চিনি খেলেও তা দেহের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ৭৪ গ্রাম বা তার বেশি পরিমাণে চিনি খেলে দেহের রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।


হৃদরোগ : হৃদরোগ বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ। আর চিনি বেশি খেলে এ হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি বেশি খেলে হৃদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।


নেশা : মাত্রাতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জিনিস, চকলেট ইত্যাদি খাওয়াকে এক ধরনের নেশা বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।


মস্তিষ্ক বিভ্রাট : স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ফলে মস্তিষ্কের বিভ্রাট হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয় মাত্রাতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে। তাই বাড়তি চিনি খাওয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের বিভ্রাটের সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।


পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা : মাত্রাতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে অন্য পুষ্টিকর খাবার বাদ দিয়ে চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। আর এমন অভ্যাস থাকলে তা দেহের পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।


বাত : দেহের বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলে বিশেষ করে পায়ের হাড়ে ব্যথার জন্য দায়ী গেটেবাতের অন্যতম কারণ চিনি। চিনি ও মাংসসহ বেশ কিছু উপাদান দেহের ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আর এর কারণে তৈরি হতে পারে এমন ব্যথা।


তথ্য ও ছবি : ইন্টারনেট