প্রকৃতি কন্যা জাফলং থেকে ঘুরে আসুন ।

দেখা হয় নাই April 19, 2016 3,169
প্রকৃতি কন্যা জাফলং থেকে ঘুরে আসুন ।

সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে জাফলং এর অবস্থান। জাফলং সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানার একটি ইউনিয়ন। প্রকৃতি যেন ভিন্ন রূপে সাজিয়েছে এই জাফলংকে । অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য প্রকৃতি কন্যা হিসেবে খ্যাত এই জায়গাটি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর একটি । পর্যটন মৌসুম শীতকাল ছাড়াও সারাবছরই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন।রূপ বৈচিত্র্যতার জন্যই এই সমাগম ।


সৌন্দর্যের সবুজ আকর্ষণ শুরু জৈন্তাপুর উপজেলা থেকেই । জৈন্তিয়া রানীর স্মৃতি বিজড়িত এই উপজেলা শহরের বুক চিরেই জাফলং যেতে হয় । পথের ডান পাশে দাড়িয়ে থাকা ভারতের মেঘালয়ের মায়াবী পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকে । বর্ষায় এই পাহাড় থেকে কয়েকটি ঝর্ণা ধারা নেমে আসতে দেখা যায় । পাহাড়ের গাঁয়ে হেলান দিয়ে থাকে সাদা মেঘ, সে এক অভাবনীয় দৃশ্য । অবশ্য শীতকালে ঝর্ণা গুলো থাকে মৃত । উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে যেতে যেতে পথে দেখা মিলবে তামাবিল স্থলবন্দর । সারি সারি ভারতীয় কয়লা বোঝাই ট্রাক দাড়িয়ে আছে । এখানে কয়লা আর পাথরের ব্যবসা জমজমাট । এখান থেকে ভারতের অন্যতম সুন্দর শহর শিলং যাওয়া যায় । দুরুত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার । স্বাভাবিক ভাবেই পাসপোর্ট, ভিসা লাগবে। তামাবিল চেকপোস্ট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরেই মামার বাজার । পর্যটকরা জাফলং বলতে এই মামার বাজারকেই চিনেন । মূল জাফলং বাজারে অনেকেই যান না ।


মামার বাজার থেকে একটু সামনে এগোলেই পিয়াইন নদীর ঘাট যা স্থানীয় ভাবে বল্লাঘাট নামে পরিচিত।

মেঘালয় পাহাড় থেকে সৃষ্ট এই নদীর পানি কাঁচের মত স্বচ্ছ । একেবারে তলদেশ পর্যন্ত দৃষ্টি চলে যায় । ঘাট থেকে মূল আকর্ষণ জিরো পয়েন্ট যেতে হয় নৌকা নিয়ে ।


১৫ মিনিটের এই নৌকা ভ্রমণ জীবনের অন্যরকম অভিজ্ঞতা হিসেবে স্মরণীয় থাকবে । স্বচ্ছ পানি ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে । আহ ! কি শীতল ! প্রাণ জুড়িয়ে যায় । এই নদীই এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস । বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ শিশু সবাই নদীর পেট থেকে তুলে আনছে নানা রঙের, নানা আকৃতির পাথর । এই পাথর বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় । বছরের পর বছর এই পাথরেই কর্মমুখর এই জনপদের মানুষ ।


জিরো পয়েন্টে দাড়িয়ে চোখে পড়বে পাহাড়ের উপরে ভারতের ডাউকি উপজেলা শহর আর শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী ঝুলন্ত ব্রিজ । বেড়াতে আসা মানুষ জন এই ব্রিজকে পেছনে রেখে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন । পাশা পাশি অবস্থানে নিজ নিজ দেশের দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের বিজিবি আর ভারতের বিএসএফ । জিরো পয়েন্টের রূপের কথা লিখে বোঝানো সম্ভব নয় । স্বচক্ষেই দেখে নিতে হয় । নদীর অন্য পারে খাসিয়াপল্লী । সেখানে গেলে নিরিবিলি বনের মাঝে চোখে পড়বে খাসিয়াদের জীবনধারা, রাজবাড়ী আর পানের বরজ । অত্যন্ত পরিশ্রমী খাসিয়ারা পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে । খাসিয়াপল্লীর একেবারে গা ঘেঁষে মেঘালয়ের সূউচ্চ সবুজ পাহাড় । তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন উদাস হয়ে যায় । ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না । কিন্তু ফিরতে তো হবেই । মামার বাজার থেকেই সরাসরি সিলেটের গাড়ি পাওয়া যায় ।


যেভাবে যাবেন:


* সিলেট শহরের সোবহানিঘাট থেকে সরাসরি বাস জাফলং পর্যন্ত চলাচল করে । এ ছাড়া সি এন জি চালিত অটোরিকশা বা মাইক্রবাস ভাড়া করেও যাওয়া যায় ।


* থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে । ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকায় হোটেলে রুম পাওয়া যায়।


* স্বল্প মুল্যে ভালো খাবার জন্য শহরে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে যেমন পানশি, জলসিড়ি, পাঁচভাই রেস্টুরেন্ট ।


* হাতে তিন দিন সময় থাকলে মোটামুটি ভাবে সিলেট বিভাগের উল্লেখযোগ্য স্থান গুলো ঘুরে দেখা যায় ।