ঘুরে আসুন বান্দরবান আর জেনে নিন কিছু খুটিনাটি

দেখা হয় নাই April 19, 2016 2,103
ঘুরে আসুন বান্দরবান আর জেনে নিন কিছু খুটিনাটি

ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে ২/৩ টি রুট ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান। ঢাকা থেকে বান্দরবান পযর্ন্ত এস.আলম (নন এসি) নামে একটি গাড়ী ডাইরেক্ট চলে। কমলাপুর রেল স্টেশনের বিপরীতে এস.আলমের কাউন্টার রয়েছে।


চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান= বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে ৩০ মিঃ পর পর বান্দরবানের উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়।


যেখানে থাকতে পারবেন:


রেশনের একটি হোটেল আছে মেঘলাতে। যার ভাড়া রুম প্রতি ৭৫০ হইতে ২০০০টাকা পর্যন্ত। বুকিং ফোন:- 0361-62741 এবং 0361-62742।


হোটেল ফোর স্টার: এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১, ০১৫৫৩৪২১০৮৯।


হোটেল থ্রী স্টার: এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। প্রতি নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোন:-থ্রী স্টার এবং ফোর ষ্টার হোটেল মালিক একজন মানিক চৌধুরী- ০১৫৫৩৪২১০৮৯।


হোটেল প্লাজা বান্দরবান: এটি বাজারের কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৪০০ টাকা, ডাবল- ৮৫০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:- ০৩৬১-৬৩২৫২। (ভাড়ার তারতম্য হতে পারে)


যা যা দেখবেন:


নীলগিরি:


বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৭ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বদিকে লামা উপজেলার অংশে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উপরে বাংলাদেশের নতুন পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরির অবস্থান। যাকে বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসাবে অবহিত করা যায়। যেখানে পাহাড় আর মেঘের মিতালী চলে দিনরাত। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ঐ মেঘের দেশে। তবে যারা মেঘ ভালোবাসেন তারা জুন-জুলাইতে অর্থাৎ বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশী মজা পাবেন। কারন মেঘ তখন আপনাকে ধরা দিয়ে যাবে।


নীলগিরি যাওয়া হোটেল বুকিং ও অন্যান্য:

নীলগিরি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি পর্যটন স্পট। বর্তমানে নীলগিরির কটেজ গুলো এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সব বুকড করা আছে। আপনি ইচ্ছে করলে এর পরের জন্য বুকড করতে পারবেন। ভি.আই.পি নাম্বার-০১৯২৫৮৮২৩৩৮ শুধু মাত্র সেনাবাহিনী অফিসার ও উচ্চ পদস্থ সরকারী কমকর্তার জন্য।


সাধারন পর্যটকের জন্য বুকিং ব্যবস্থা এখানে:- পেট্রো এভিয়েশন ৬৯/২, লেভেল-৪,রোড-৭/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন:-মনতোষ মজুমদার- ০১৭৩০০৪৩৬০৩ এবং হাসান সাহেদ- ০১৭৩০০৪৩৬০৩।


কটেজ ভাড়া: গিরি মারমেট: ৭৫০০ টাকা। (৮/১০ জন থাকতে পারবে)। মেঘদূত: ৬৫০০ টাকা। (৮/১০ জন থাকতে পারবে)। নীলাঙ্গনা: ৫৫০০ টাকা। (৪/৬ জন থাকতে পারবে ২ রুমে)। নীলাঙ্গনায় কাপলের জন্য এক রুম ভাড়া নেওয়া যায় যাহা ৫৫০০টাকার অর্ধেকে ২৭৫০টাকায়।


এখানে খাবার ব্রেকফাষ্ট+লান্স+ডিনার মিলে খরচ হবে দিনে ৫০০ টাকা জনপ্রতি এবং এটি অবশ্যই কটেজ বুকিং দেওয়ার সাথে খাবার বুকিংও দিতে হবে অন্যথায় কটেজে খাওয়া ছাড়া থাকতে হবে।


কিভাবে যাবেন:


নীলগিরি যেতে হলে আগে থেকে ল্যান্ড ক্রুজার জিপ ভাড়া করতে হবে। সময় লাগবে আসা-যাওয়ায় ৪ ঘন্টা ৩০মিঃ।


স্বর্ণমন্দির:


বর্তমানে স্বর্ণমন্দির উপাশনালয়টি বান্দরবান জেলার একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই ‘বৌদ্ধ ধাতু জাদী’ কে স্বর্ণমন্দির নামকরণ করা হয়। এটি বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের একটি উল্লেখযোগ্য উপাশনালয়। যা বান্দরবান শহর থেকে ৪ কি:মি: উত্তরে বালাঘাট নামক এলাকায় পাহাড়ের চূঁড়ায় অবস্থিত। এটির নির্মাণশৈলী মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পল গুলোর মত। বান্দরবান ভ্রমণে আপনিও এই জাদী বা স্বর্ণমন্দিরটি একবার স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন।


মেঘলা:


নাম মেঘলা হলেও মেঘের সাথে মেঘলা পর্যটন স্পটের কোন সর্ম্পক নেই। বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৭ কি:মি: আগে মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত। এটি সুন্দর কিছু উঁচু নিচু পাহাড় বেষ্টিত একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠে। ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটককে প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নেয় প্রতিনিয়ত। পানিতে যেমন রয়েছে হাঁসের প্যাডেল বোট, তেমনি ডাঙ্গায় রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। আর আকাশে ঝুলে আছে রোপওয়ে কার। এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চুঁড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো পাহাড়ী বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। মেঘলা পর্যটন স্পটের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বান্দরবান পর্যটন হোটেলটি।


শৈল প্রপাত:


শৈল প্রপাত বান্দরবান শহর হতে ৭ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বে চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে দেখা যাবে।


নীলাচল:


নীলাচল বান্দরবান শহর হতে ১০ কি:মি: দক্ষিণে ১৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্বত শীর্ষ। যেখান থেকে নীলআকাশ যেন তার নীল আচল বিছিয়ে দিয়েছে ভূমির সবুজ জমিনে। যে দিকে দুচোখ যায় অবারিত সবুজ ও নীল আকাশের হাতছানি। মুগ্ধতায় ভরে উঠে মন প্রাণ।


মিলনছড়ি:


মিলনছড়ি বান্দরবান শহর হতে ৩ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বে শৈল প্রপাত বা চিম্বুক যাওয়ার পথে পড়ে। এখানে একটি পুলিশ পাড়ি আছে। পাহাড়ের অতি উচ্চতায় রাস্তার ধারে দাড়িয়ে পূর্ব প্রান্তে অবারিত সবুজের খেলা এবং সবুজ প্রকৃতির বুক ছিড়ে সর্পিল গতিতে বয়ে সাঙ্গু নামক মোহনীয় নদীটি।


চিম্বুক:


চিম্বুক বান্দরবনের অনেক পুরনো পর্যটন স্পট। বান্দরবান শহর হতে ২১ কি:মি: দক্ষিণ পূর্বে মিলনছড়ি এবং শৈল প্রপাত ফেলে চিম্বুক যেতে হয়। এখানে পাহাড়ের চুঁড়ায় রেষ্টুরেন্ট এবং একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। পাহাড়ের চুঁড়া থেকে চারদিকের সবুজ প্রকৃতির সৌন্দয্য অবগাহন এখানে প্রকৃতি প্রেমীদের টেনে আনে।


সাঙ্গু নদী:


পূর্বের অতিউচ্চ পর্বত শীর্ষ থেকে সাঙ্গু নদী নেমে এসে বান্দরবন শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে গেছে। বান্দরবান শহরের পূর্বে পাশে পাহাড়ী ঢালে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী প্রাণকে সতেজ করে দেয়।