নাক থেকে রক্ত পড়ার ৬ কারণ

সাস্থ্যকথা/হেলথ-টিপস July 20, 2017 776
নাক থেকে রক্ত পড়ার ৬ কারণ

আমাদের দেহের কোনো অংশ আঘাত প্রাপ্ত হলে বা কেটে গেলে কমবেশি রক্ত বের হয়।


নাক তো আমাদের দেহেরই একটি অংশ, তাই না? এই নাকেও আঘাত হতে পারে। ঝরতে পারে রক্ত। অনেক সময় নাকে সামান্য আঘাত বা খোঁচা লাগলেও ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়। এতে অনেকে ঘাবড়ে যান। রক্তপাতের আধিক্যে বিস্মিত হয় তারা। শুধু আঘাত লাগলেই যে নাক থেকে রক্ত পড়বে তা না, অন্যান্য কারণেও রক্ত পড়তে পারে।


রিডার্স ডাইজেস্ট এর প্রতিবেদন অনুসারে আসুন জেনে নিই নাক থেকে রক্ত পড়ার ৬ কারণ সম্পর্কে।


নাসিকাপথের শুষ্কতা : নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ড. জোসেফ শারগোরোডক্সি বলেন, নাকে রক্তপাতের প্রধান কারণ হচ্ছে নাসিকাপথের শুষ্কতা। উত্তাপক যন্ত্র বা শীতাতপ যন্ত্রের কারণে নাকের ভেতর শুকিয়ে যেতে পারে। শুষ্ক ও ধূলিপূর্ণ স্থানে একই প্রতিক্রিয়া হতে পারে। শুষ্ক নাসিকাপথে আবরণ পড়ে যায়। নাকে আঘাত করে বা আঙুলের খোঁচা দিয়ে এই আবরণ তুলে ফেললে রক্ত ঝরতে পারে। নাককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচাতে ঘরে জলীয়বাষ্প ঠিক রাখার যন্ত্র হিউমিডিফায়ার ব্যবহার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নাক আর্দ্র রাখতে প্রয়োজনে নাসিকা স্প্রে (ওটিসি স্যালাইন নেজাল স্প্রে) কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।


নাকে আঘাত : নাকে সামান্য আঘাতেও রক্ত ঝরতে পারে। ফুটবল, বাস্কেটবল, সকার কিংবা বেসবল খেলোয়াড়দের এটা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকে। নাকে আঘাত পড়লে নাক ফুলে যেতে পারে কিংবা থেঁতলে যেতে পারে। নাক থেকে মারাত্মকভাবে কিংবা ফিনকি দিয়ে রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। অন্যথায় অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।


ঠান্ডা ও ঋতুজনিত অ্যালার্জি : ঠান্ডা ও ঋতুজনিত অ্যালার্জি নাসিকা পথকে বড় করতে পারে ও নাকে শ্লেষ্মা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে বায়ু চলাচল কঠিন হয় ও বিরক্তিকর অনুভূতির জন্ম হয়। জমে থাকা শ্লেষ্মা বারবার বের করার ফলে নাকের রক্তবাহী নালি ছিঁড়ে যেতে পারে ও ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। অ্যালার্জির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নাকের তরল সরানোর জন্য নাকে বারবার হাত দেওয়া ঠিক নয়।


বংশগত কারণ : বংশগত কারণে নাকের রক্তনালি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেতে পারে। এ রোগের নাম হিয়ারিডিটারি হেমোরেজিক টেলানজিয়েকট্যাসিয়া (এইচএইচটি)। এর কারণে নাকে ঘন ঘন রক্তপাত হতে পারে। নাক থেকে বারবার রক্ত ঝরলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ঘন ঘন রক্ত পড়ার কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। এর ফলে ছোট রক্তপাত একসময় বড় রক্তপাত বা গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করে।


ওষুধের প্রতিক্রিয়া : কিছু কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে। রক্ত তরলীকরণ ওষুধ (যেমন- অ্যাস্পিরিন বা ওয়ারফারিন যা হৃদরোগ বা স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য সেবন করা হয়) সামান্য রক্তপাতকে গুরুতর করে তুলতে পারে। ওষুধ সেবনের আগে জেনে নিন নাকে রক্তপাতের আশংকা আছে কিনা।


নাকের বৃদ্ধি : নাকের অস্বাভাবিক বা অদ্ভুত বৃদ্ধি হতে পারে। এসবের মধ্যে পলিপ (মাংসপিণ্ড বা বেলুনের মতো ফোলা অংশ), নাকের টিস্যুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও টিউমার উল্লেখযোগ্য। নাকে টিউমার খুব একটা হয় না, হলে তা রক্তপাত ঘটাতে পারে। ঘন ঘন রক্তপাত নির্মূলে নাক বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন।


নাক থেকে রক্ত পড়ার ধরন

ড. শারগোরোডস্কি বলেন, নাকে দুইরকম রক্তপাত হয়ে থাকে। কিছু রক্তপাত হয় নাকের সম্মুখ থেকে এবং কিছু হয় পেছন থেকে। ট্রমা ও শুষ্ক নাসিকাপথের রক্তপাত সাধারণত নাকের সম্মুখ থেকে হয়। এ রক্তপাত দ্রুতগতিতে হয়ে থাকে। এটি প্রায় সময় গুরুতর হয় না যদি না রক্ত তরলীকরণ বা রক্ত জমাটে কোনো সমস্যা না হয়।


নাকের পেছনদিক থেকে রক্তপাত মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে অত্যধিক ফোলা হয় ও প্রচুর রক্তপাত (ফোঁটায় ফোঁটায় না পড়ে) হয়।


তিনি আরো বলেন, নাকের পেছনস্থ রক্তপাত গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করে। নাকের সম্মুখদিকে ছোট ছোট রক্তনালি থাকলেও পেছনদিকটায় থাকে বড় রক্তনালি। প্রচুর পরিমাণে রক্ত ঝরলে ধারণা করা যায় যে রক্ত পেছনদিক থেকে আসছে।


নাকের রক্তপাতের চিকিৎসা

নাক থেকে রক্ত পড়লে অনেকে পরামর্শ দেয় যে, মাথা পেছনে নিয়ে উপরদিকে মুখ করে থাকতে। কিন্তু এর ফলে রক্ত গিলে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যাও হতে পারে। এটি একটি সাধারণ ভুল এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে ভুল ধারণা।


ড. শারগোরোডস্কি পরামর্শ দেন, নাক সম্মুখস্ত রক্তপাত হলে আঙুল দিয়ে নাক চেপে ধরাটা প্রাথমিক ভালো পদক্ষেপ। সাধারণত এভাবে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।


তিনি আরো পরামর্শ দেন, সোজা বসে থাকলেও নাকের রক্তপাত বন্ধে কাজ হতে পারে। খাড়াভাবে বসলে নাকের দিকে রক্তপ্রবাহ কমে যায় ও রক্তপাত কম হয়।


নাকের দীর্ঘস্থায়ী, ঘনঘন ও বিষম রক্তপাত গুরুতর অবস্থার উপসর্গ হতে পারে। তাই রক্তপাত না থামলে কিংবা ঘনঘন নাক থেকে রক্ত ঝরলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।