আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে খাবার খাওয়ার ১৫টি নিয়ম

লাইফ স্টাইল July 18, 2017 1,024
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে খাবার খাওয়ার ১৫টি নিয়ম

খাবার খেলাম আর অমনিই শরীর চাঙা হয়ে উঠল, এমনটা বাস্তবে কিন্তু হয় না। খাবার খাওয়ারও কিছু নিয়ম আছে, তা না মানলে যতই পেট পুরে খান না কেন, শরীরের কোনো উপকারেই লাগবে না। উল্টো দেহের ক্ষয় হতে শুরু করবে।


পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই জানেন না কীভাবে খাবার খেতে হয়। যে কারণে অনেকে নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গে দেহে দেখা দেয় পুষ্টির অভাব। তাই খাবার খাওয়ার সময় কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত, সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটা জরুরি। না হলে কিন্তু বিপদ!


ভারতীয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্র অনুসারে খাবার খাওয়ার সময় ১৫টি বিষয়ে নজর রাখা জরুরি। এমনটা করলে খাবার ঠিক মতো হজম হবে। ফলে পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কমবে। সেই সঙ্গে শরীরের পুষ্টির অভাব ঘটার কারণে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমবে।


▶আসুন জেনে নেওয়া যাক খাবার খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলো…


১. খাবার খাওয়ার সময় ততক্ষণ পর্যন্ত খাবার চিবতে থাকুন, যতক্ষণ না তা মিহি পেস্টে পরিণত হচ্ছে। যখন দেখবেন এমনটা হয়ে গেছে তখনই গিলবেন, তার আগে নয়।


২. টিভি দেখতে দেখতে অথবা কোনো কাজ করার সময় খাবার খাবেন না। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মন দিয়ে খাবার না খেলে শরীরের কোনো উপকার হয় না। বরং এমনটা করলে নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, খেতে খেতে কথা বলতেও মানা করেন অনেক চিকিৎসক। কারণ এমনটা করলেও নাকি খারাপ হয়। মোট কথা মনোযোগ সহকারে খাবার খেতে হবে। না হলেই কিন্তু বিপদ!


৩. খাবার খাওয়ার আগে ভুলেও ঠাণ্ডা পানি খাবেন না। এমনটা করলে হজমপ্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে। ফলে বদহজম, গ্যাস-অম্বল, পেটে অস্বস্তি প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।


৪. খেতে খেতে কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া একেবারেই চলবে না। কারণ এমনটা করলে হজম প্রক্রিয়া একেবারে খারাপ হয়ে যায়। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়ার কারণে দেখা দেয় বহু সমস্যা।


৫. আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে ভালোবেসে বানানো খাবার শরীরে পজিটিভ এনার্জির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মন এবং মস্তিষ্ক চাঙা হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, খিটখিটে বা অখুশি মন নিয়ে বানানো খাবার খেলে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।


৬. তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। বরং খাওয়ার সময় মনকে শান্ত রেখে থেমে থেমে খাবার গেলা উচিত। এমনটা করলে হজমক্ষমতার যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনই খাবারে থাকা পুষ্টি ঠিক মতো শরীর দ্বারা শোষিত হয়।


৭. খাবার খাওয়ার পর মনে করে একটু বসে নেবেন, তারপর কাজ শুরু করবেন বা অফিসে রওনা দেবেন। তাড়াহুড়ো করে খেয়ে অফিসে বেরিয়ে পড়ার অভ্যাস ছাড়ুন। এমনটা করলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়।


৮. যতক্ষণ না পেট কিছুটা ভরে যাচ্ছে, ততক্ষণ আস্তে আস্তে খাওয়া উচিত। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে পাকস্থলির এক তৃতীয়াংশ যতক্ষণ না ভরছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।


৯. সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের মাঝে যেন কম করে ৩-৪ ঘণ্টার ব্যবধান থাকে। কারণ যেকোনো খাবার ঠিকমতো হজম হতে এই সময়টা লাগে। তাই ৩-৪ ঘণ্টার আগে বারে বারে খাবার খেলে পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।


১০. সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত আমাদের হজমক্ষমতা খুব ভালো থাকে। যেই না অন্ধকার হতে শুরু করে, আমনি ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হজমশক্তিও কমে যেতে শুরু করে। সেই কারণেই তো দুপুর পর্যন্ত ভারি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এর পর থেকে খাবার পরিমাণ কমিয়ে ফেলাটাই বাঞ্ছনীয়।


১১. খাবার খাওয়ার সময় পানি যেন ঘরের তাপমাত্রার সমান থাকে। এর থেকে বেশি ঠাণ্ডা হলে কিন্তু হজমে সহায়ক এসিডগুলি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে বদহজম সহ আরও নানা ধরনের পেটের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।


১২. যাদের খুব খিদে পায়, তারা অল্প অল্প করে বারে বারে খেতে পারেন। তবে প্রতিটি খাবার খাওয়ার মধ্যে যেন কম করে ৩ ঘণ্টার ব্যবধান থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন।


১৩. ভারি কোনো খাবার খাওয়ার আগে সুযোগ থাকলে অল্প করে আদা বা লেবু খেয়ে নেবেন। এমনটা করলে শরীরে পিত্তরসের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। ফলে খাবার হজমে কোনো সমস্যা হবে না।


১৪. লাঞ্চের আগে বা পরে ১ গ্লাস লাচ্ছি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ঠিকমতো খাবার হজমের পথ প্রশস্ত হবে।


১৫. আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে রাতের খাবার ৮টার মধ্যে সেরে ফেলা জরুরি। শুধু তাই নয়, রাতের খাবার হতে হবে হালকা এবং সহজপাচ্য। যাতে তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যেতে পারে।


সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া