চিকুনগুনিয়ার সার্টিফিকেট আছে তো?

মজার সবকিছু July 9, 2017 1,355
চিকুনগুনিয়ার সার্টিফিকেট আছে তো?

মশক ভবনে মশাদের সর্দার এডিশ কালু খাঁর কক্ষের সামনে হাজার হাজার মশা। নানান জাতের, নানান পদের মশা। কেউ চেয়ারে বসে আছে, কেউ হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।


এসব মশার ভিড়ে একজন মানুষ খুব চিন্তিত হয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর মোবাইল বের করে সময় দেখছে, মাঝে মধ্যে ফেসবুক খুলে দেখছে। তাঁর শরীর পুরোটা ঢাকা।


নীল আর্মস্ট্রংয়ের চন্দ্র অভিযানের মতো পোশাক। একটি মশাও তাঁকে কামড়াতে পারবে না! তিনি হলেন শহরের মশক নিধন কমিটির সভাপতি চেঙ্গিস খাঁন।


কিছুক্ষণ পর এডিশ কালু সর্দারের পিএস বাইরে এসে বলল, ‘সর্দার আপনাকে ডাকছে। সাক্ষাতের সময় মাত্র পাঁচ মিনিট।’


চেঙ্গিস খাঁন ভেতরে ঢুকতেই কালু খাঁ তাকে সাদর সম্ভাষণ জানাল। ‘আসেন, আসেন, সভাপতি সাহেব। এই গরিবের অফিসে আসতে কোনো তাকলিফ হয়নি তো।’


‘না, না। কী যে বলেন।’ সভাপতির জবাব।


‘কী খাবেন চা না কফি, নাকি ঠান্ডা?’

‘সুইটির লাচ্ছি খাব’, চেঙ্গিস খাঁনের আবদার। কালু খাঁ তাঁর পিএসকে দ্রুত এক গ্লাস লাচ্ছি আনতে বললেন। লাচ্ছি আনার কথা শুনে চেঙ্গিস খাঁনের হৃদয় ঠান্ডা হয়ে গেলো। তাকে কামড়ানোর চিন্তা বাদ দিয়ে দিলেন।


‘তা স্যার, আপনি এই পোশাকে কেন?’

‘তোমাদের বিশ্বাস নেই। কোন কথায় কী মনে করে কামড়ে ফেলবা, বিশ্বাস নেই। তাই এই সুরক্ষা পোশাক পরেছি।’ বললেন চেঙ্গিস খাঁন। ‘এবার আসল কথায় আসি।


তোমাদের মাসুম মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি মশক নিধন অভিযানে ঢিল দিয়েছিলাম। লোক দেখানো ওষুধ ছিটালেও সেগুলো ছিল ভেজাল। কিন্তু তোমরা এই সুযোগ নিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়ার দুর্গ গড়ে তুলেছ। তোমরা আমার বাসাকেও রেহাই দাওনি। এমনকি আমার বাসার কাজের বুয়ারও চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়েছে। এখন আমাকে অফিস শেষে বাসায় গিয়ে বুয়ার কাজ করতে হয়। তোমাদের জন্য আমি নগরবাসীকে মুখ দেখাতে পারছি না। তাদের কাছে গেলেই হামলে পড়বে।’


চেঙ্গিস খাঁনের কথা শেষ হওয়ার পর কালু খাঁ মুখ খুললেন। ‘স্যার, আপনার বাসায় কারা অ্যাটাক করেছে সেটা আমি নিজে তদন্ত করে দেখব। দোষীদের যাবজ্জীবন রক্ত না খাওয়াইয়া রাখব।’


‘আর স্যার, আমরা চিকুনগুনিয়া ছড়াইলাম তো আপনার ভালোর জন্য। এখন সারা শহরে খালি আপনার নাম। একটু বৃষ্টি হলেই আপনার শহর ভাইস্যা যায়। সবাই জলাবদ্ধতা নিয়া গালি দিতাছিল। আমরা ওদিক থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাইয়া চিকুনগুনিয়ায় আনছি।’


চেঙ্গিস খাঁন বললেন, ‘সে না হয়, বুঝলাম। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার কারণে তো আমি কোনো উন্নয়নকাজ করতে পারছি না।’


‘সেই বুদ্ধি আমার কাছে আছে স্যার।’ এডিশ কালু খাঁর জবাব। ‘শুনেন স্যার, আপনার শহরে কোটির অধিক মানুষ থাকে।


প্রতিদিন বিপুল মানুষ শহরে ঢুকে, আবার কাজ শেষে বের হয়ে তাদের শহরে যায়। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালতে যায়, মার্কেটে যায় শপিং করতে। এদের সবার জন্য আপনি চিকুনগুনিয়া সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’


এটা কী রকম?

‘এটা হলো অনেকটা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটের মতো। কার চিকুনগুনিয়া হয়েছে, কি হয়নি- এটা আপনি পরীক্ষা করে তারপর সার্টিফিকেট দিবেন।


এ জন্য এক হাজার টাকা করে ফি নিতে পারেন। তার ওপর ভ্যাটসহ যত ধরনের ট্যাক্স পারেন, বসান। ওই সার্টিফিকেটে কারো যদি চিকুনগুনিয়া লেখা থাকে, তারে শহরে ঢুকতে দিবেন না।


চিকুনগুনিয়া না থাকলে ঢুকতে দিবেন। প্রত্যেক স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ও মার্কেটে আপনি সেন্টার বসাবেন।


চিকুনগুনিয়ার সার্টিফিকেট ছাড়া কাউরে কোথাও ঢুকতে দিবেন না। এই সনদের মেয়াদ আপনি চাইলে একদিন রাখতে পারেন, বেশি হইলে এক সপ্তাহ। প্রতি সপ্তাহ হলেও এই সনদ দিয়া আপনি কত হাজার কোটি টাকা কামাইবেন, চিন্তা করেন।


আপনার কর্মচারীরাও এতে অনেক টু-পাইস কামানোর সুযোগ পাব। তারাও খুশি থাকব। আপনিও তাদের বদলি-বাণিজ্য কইরা কোটি কোটি টাকা কামাইতে পারবেন।’


এডিশ কালু খাঁর কথাগুলো শুনে চেঙ্গিস খাঁন চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাঁর মাথায় তো এ রকম চিকন বুদ্ধি আসেনি।