নেই মধু, নেই চাঁদ! তবুও কেন নাম হলো মধুচন্দ্রীমা বা হানিমুন ?

জানা অজানা July 7, 2017 1,763
নেই মধু, নেই চাঁদ! তবুও কেন নাম হলো মধুচন্দ্রীমা বা হানিমুন ?

নেই মধু, নেই চাঁদ! তবুও নাম হলো মধুচন্দ্রীমা বা হানিমুন! কিন্তু কেন, কিভাবেই বা এলো এমন মধুর নাম ?


বিশ্লেষকেরা বলছেন, জার্মানরাই মুলতঃ হানিমুনের উদ্ভাবক। অথচ তাদের ভাষায় হানিমুনের সমার্থক শব্দ নেই। হানিমুন (honeymoon) বোঝাতে তারা ইংলিশ বা অন্য কোনো ভাষার ঘাড়ে চাপে। প্রাচীনকালের জার্মানির সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর এক মাস নব দম্পতিকে ভিন্ন এক জায়গায় রাখা হতো এবং নবদম্পতিকে ঘটা করে খাওয়ানো হতো গ্যাঁজানো মধুর শরবত।


এ রীতি পরে ইউরোপের অন্যান্য জাতির মধ্যে ছড়ায়। এখন হানিমুনে মধুও নেই, মাসও নেই। বিয়ের পরে অথবা পরে কোনো অনুকূল সময়ে হানিমুনপর্ব সারা যায় এবং তা এক মাস হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কয়েক দিনের হলেই চলে।


কারণ হানিমুন এখন দম্পতির আর্থিক সঙ্গতির ওপর নির্ভরশীল।


বাংলায় হানিমুন শব্দের সমার্থক শব্দ হলো মধুচন্দ্রিমা। শব্দটি চমতকার। কিন্তু তাতে ‘মাস’ ব্যাপারটি মোটেও নেই। মধু তো নেই-ই। এদিক থেকে বলা যায় বাঙালিরাই হানিমুনের আধুনিক সেন্টিমেন্টের উদ্ভাবক। বাংলায় মধুচন্দ্রিমা বলতে বিয়ের পর বরবধূ যে প্রমোদবিহারে যায়, তাকেই বোঝায়। তবে হানিমুনের বাংলা কবে মধুচন্দ্রিমা হলো, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।


বিয়ের পরে বেড়াতে যাওয়ার সঙ্গে কীভাবে ‘হানি’ এবং ‘মুন’ জুড়ে গেল, ইতিহাস ঘেঁটে তার মোটামুটি তিনটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রী মিলে বেড়াতে যাওয়া এখন একটা চিরাচরিত প্রথা হয়ে গেছে। বাংলায় যাকে বলা হয় ‘মধুচন্দ্রিমা’। যা এসেছে ইংরেজি ‘হানিমুন’ থেকে। কিন্তু ‘হানিমুন’ কোথা থেকে আসলো!


প্রথমত: একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘হানিমুন’ শব্দের উৎস ব্যাবিলনে। প্রাচীন ব্যাবিলনে বিয়ের পরে পাত্রীর বাবা পাত্রকে তার চাহিদামতো মধু দিয়ে তৈরি মদ দিতেন। এই মদ থেকেই এসেছে ‘হানি’। ব্যাবিলনের ক্যালেন্ডার ছিল চান্দ্র। সেখান থেকে ‘মুন’ এসে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। গোড়ায় নাকি ব্যাবিলনে বিয়ের পরের মাসটিকে ‘হানি মান্থ’ বলা হত। সেখান থেকে ক্রমশ ‘হানিমুন’।


দ্বিতীয়ত: আর একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিয়ের পরে একমাস প্রতিদিন একপাত্র করে মধু দিয়ে তৈরি মদ খেতে হত নবদম্পতিকে। পাত্রীকে হরণ করে এভাবে বিয়ের পরে একমাস ধরে মধু দিয়ে তৈরি মদ খাওয়ার প্রথা সেই হুন রাজা অ্যাটিলার সময় থেকে চালু ছিল।


তৃতীয়ত: তৃতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘মুন’ শব্দটির সঙ্গে ঋতুচক্রের যোগ রয়েছে। বলা বাহুল্য, গোটা ব্যাখ্যাটির সঙ্গে যৌনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর সঙ্গে ‘হানি’ বা ‘মধু’ জুড়ে দেওয়া হয়েছিল এটা বোঝাতে যে, বিয়ের পর পর সবকিছু মধুর মতো লাগলেও সবসময় তা নাও লাগতে পারে। এজন্য বিয়ের পরপরই যে একান্ত সময়টি দম্পতিরা সবাইকে পাশ কাটিয়ে যাপন করে সেটাকে ‘হানিমুন’ বলা হয়।


নব-বিবাহিত দম্পতিদের জীবনের একটি অতি কাংখিত মুহুর্ত হচ্ছে মধুচন্দ্রিমা । এর মাধ্যমে একজন আর একজন কে খুব কাছে থেকে চিনতে ও বুঝতে পারে। পরবর্তি জীবনে নিজেদের মাঝে সমঝতা,মতামত এর প্রাধান্য, বোঝাপরা, সব কিছু খুব ভাল ভাবে করতে পারে। অভিজ্ঞরা বলছেন, এরেঞ্জ ম্যারেজ এ বিশেষ করে হানিমুনে যাওয়া খুবই জরুরি ! কারণ সেখানে একে অন্যকে জানা ,বোঝার দরকার বেশি .দুজন দুজনের কাছে সহজে সহজ হয় .সব কিছু শেয়ার করতে পারে।


হানিমুনকে কিভাবে সর্বোত্তমভাবে উপভোগ করা যায় সেটা দুজন মিলে ঠিক করলে ভালো হয় .সাধ আর সাধ্যের মধ্যেই স্পট ঠিক করা উচিত।


হানিমুন থেকে ফেরত আসা ‘উপকৃত’ এক দম্পত্তি সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, হানিমুনে গেলে একসাথে সাধ্য অনুযায়ী শপিং থেকে শুরু করে খাবারের মেন্যুতে কী থাকবে সেসব সিদ্ধান্ত নিন সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে।


এভাবেই গড়ে উঠবে বোঝাপড়া, বাড়বে ভালবাসা !আর হানিমুন থেকে ফিরে আসার আগে দুজন মিলে আলাপ করে দুই পরিবারের সদস্যদের জন্য গিফট আনা উচিত। এভাবেই দুজনের প্রতি দুজনের পসিটিভ ধারণা গড়ে উঠতে সহায়ক হবে প্রাথমুক জীবন থেকেই।


হানিমুন বানানভেদঃ বাংলায় হানিমুনের প্রতিশব্দ ‘মধুচন্দ্রিমা’ শব্দটি নিয়েও আপত্তি তোলা হয়েছিল। কারণ ইংরেজি honeymoon শব্দটির শাব্দিক অনুবাদের ফসল হচ্ছে মধুচন্দ্রিমা। এই ক্ষেত্রে ‘মধুচন্দ্র’ অধিকতর যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু ‘মধুচন্দ্রিমা’ গৃহীত হয়ে যাওয়ায় এখন আর আপত্তি তুলে লাভ নেই। কারণ যুক্তি হিসেবে বলা যায়, ইংরেজি honeymoon শব্দটিতেও ‘মধু’ যেমন নেই, তেমনি ‘চাঁদ’ও নেই।


The Shorter Oxford Dictionary অনুযায়ী honeymoon এর অর্থ ছিল ‘the first month after marriage’। কিন্তু হানিমুনের হালের অর্থ হচ্ছে holiday spent together by a newly married couple, before settling down to a home।


এটা ঠিক, মানুষের মনের ভাব প্রকাশের সূত্রটি সব সময় ব্যাকরণনির্ভর হয় না। হওয়া উচিতও নয়। ব্যাকরণ ভাঙা শব্দের মাঝে এক ধরনের রহস্য থাকে। এ রহস্যটা ভাষা-সাগরের ব্যাপ্তি বাড়ায়, কখনও ভাষাকে রহস্যের চাঁদরে ঢেকে দেয়।